ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের জন্য হয়ে উঠেছিল ভয়াবহ দুঃসময়ের মাস। ডিসেম্বরের একেকটি দিন যাচ্ছিল, আর কোনঠাসা হয়ে পড়ছিল তারা।

দুরাবস্থা কাটাতে মার্কিনি হস্তক্ষেপের জন্য তারা ব্যাকুল হয়ে উঠে। পাক সরকারের এই চাওয়াটি পূর্ণ হয় ৯ ডিসেম্বর। একাত্তরের এইদিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। এই নৌবহর প্রেরণ করা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. হেনরি কিসিঞ্জারের পরামর্শে ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের বাইরে সবচেয়ে বড় নেভাল ফোর্স হল সপ্তম নৌবহর। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের একটি অংশ। বর্তমানে এর  প্রধান ঘাঁটি জাপানের ইয়োকোসুকা ‘তে। আমেরিকার সবচেয়ে উন্নত ও শক্তিশালী জাহাজগুলোই সপ্তম নৌবহরে থাকে। ৬০ থেকে ৭০টি যুদ্ধ জাহাজ, ২০০-৩০০টি যুদ্ধ বিমান, প্রায় ৪০,০০০ নৌসেনার সমন্বয়ে এটি আমেরিকার সবচেয়ে শক্তিশালী নৌবহর।

ইয়াহিয়া খান ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের ধারণা ছিল এই সপ্তম নৌবহর আসার কথা শুনে যৌথবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে যাবে। সেই সুযোগে একবারে শেষ লগ্নে তারা চরম আঘাত হানবে এবং বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম তছনছ করে দেবে। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। বরং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এই কথা জেনে মুক্তিযোদ্ধারা আরো প্রবলভাবে বিপুল উৎসাহে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন।

সেদিন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় তৎকালীন পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন। আমেরিকার সপ্তম নৌবহর পাঠানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেয়। ফলে সপ্তম নৌবহরের যাত্রা শুরু হওয়ার পরই থেমে যায়।

এদিকে বেড়েই চলতে থাকে মুক্তাঞ্চলের সংখ্যা। এই দিন মুক্ত হয় কুমিল্লার দাউদকান্দি। দিন না পার হতেই শত্রুমুক্ত হয় মেঘনার পুরো পূর্বাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। একই দিনে স্বাধীন দেশের পতাকা ওড়ে গাইবান্ধা, গাজীপুরের শ্রীপুর, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ও নেত্রকোনায়।

৯ ডিসেম্বর সকালে নেত্রকোনা সরকারি কৃষি খামার এলাকায় দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এর আগে ৮ ডিসেম্বর রাতে ক্যাপ্টেন চৌহানের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় মিত্রবাহিনীর এক প্লাটুন সৈন্য নেত্রকোনা শহর ঘিরে ফেলে। ৯ ডিসেম্বর রাত প্রায় নয়টায় একদল মুক্তিযোদ্ধা কৃষি খামারের ভিতরে অবস্থান নেয় এবং মুক্তারপাড়া সেতু এলাকায় টহলরত পাকিস্তান বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। ঘটনা রূপ নেয় পাল্টাপাল্টি যুদ্ধে। একঘন্টা তুমুল যুদ্ধের পর হার মানে পাকিস্তান বাহিনী। পরাজিত হানাদাররা নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহের দিকে পালিয়ে যায়।

সেদিন ঢাকায় ছিল অবিরাম বৃষ্টি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল এস এ এম মানেকশ অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং লিফলেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতি আধাঘন্টা পর পর আত্মসমর্পণের অনুরোধ জানান।



ঢাকা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়