বাগেরহাটে উপকূলজুড়ে নয়নাভিরাম সবুজ বেষ্টনী
বাগেরহাট সংবাদদাতা : সিডর-আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ বাগেরহাটে আবার গড়ে উঠেছে নয়নাভিরাম সবুজ বেষ্টনী। উপকূলজুড়ে সবুজের আচ্ছাদনে যেন নতুন করে প্রাণের সঞ্চার করেছে সামাজিক বনায়ন।
ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় লন্ডভন্ড হওয়ার পর বাগেরহাটের উপকূল হারিয়ে ফেলেছিল তার আপন সৌন্দর্য। সর্বত্রই ছিল বিধ্বস্ত ফ্যাকাসে চিত্র। সামাজিক বনায়ন আবার ফিরিয়ে এনেছে সে সৌন্দর্য। নতুন ভাবে জেগে উঠেছে আপনরূপে।
বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে সবুজ আবরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে উপকুলজুড়ে। পাশাপাশি সামাজিক বনায়নে সৃজিত বাগান থেকে আয়ে সাবলম্বী হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দিশেহারা মানুষ।
বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিক ও জীবন সম্পদ রক্ষার তাগিদে প্রাকৃতিক নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তুলতে বনায়নের কাজ করছে সামাজিক বন বিভাগ। ফলজ, বনজ, তাল, তেঁতুল ও ভেষজ চারা রোপণ ও বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রকৃতির সুরক্ষা দিতে এবং কার্বনডাই অক্সাইডের মাত্রা কমাতে সারাদেশে কাজ করছে এ বিভাগ।
এরই ধারাবাহিকতায় বিভাগীয় সামাজিক বন বিভাগ গ্রামীণসহ জেলার বিভিন্ন সড়কে ১১শ’ ৫৬ কিলোমিটার, জেলার বিভিন্ন চরে ১শ’ ৪৯ হেক্টর জমিতে বনায়নের কাজ করা হয়েছে।
২০০৮-০৯ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছর পর্যন্ত উপকুলীয় সামাজিক বনায়নের আড়াই হাজার উপকারভোগী লভ্যাংশ হিসেবে সাড়ে পাচঁ কোটি টাকা পেয়েছেন। এই সবুজ বনায়নের মধ্যে রয়েছে গোলপাতা, কেওড়া, ছৈলা, খেজুর, সুপারি, তাল, নারিকেল, মেহগনি, শিশুকাঠ, অর্জুনসহ বিভিন্ন ফলজ বৃক্ষ।
চিতলমারী উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের রনজিত বাড়ৈ বলেন, ‘এবছর আমি সামাজিক বনায়ন থেকে ২৮হাজার ৫শ’ ৭৪ টাকা পেয়েছি। যা আমাদের মত পরিবারের জন্য অনেক উপকারে আসছে। বাড়ির সামনে রাস্তায় বাগান দেখাশুনা করেছি মাত্র। আগামীতে এরচেয়ে আরও বেশি পাবো।’
ফকিরহাটের আট্রকী গ্রামের ছাইদুর রহমান বলেন, ‘সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে আমরা এখানে জনপ্রতি ৬৪ হাজার টাকা করে পেয়েছি। আমরা মনে করি এই টাকা সংসারের জন্য অতিরিক্ত মুনাফা। গাছ লাগিয়ে পরিবেশের উন্নতির পাশাপাশি নিজেরা লাভবান হচ্ছি।’
গাছ লাগানো একজন উপকার ভোগী বলেন, ‘রাস্তার দু’পাশে বনবিভাগের যে গাছ রোপণ করা হয়েছে, গাছ লাগিয়ে ৪ বছর যাবৎ আমরা রক্ষণাবেক্ষণ করছি। দশ বছর পরে গাছ বিক্রি করে যে লভ্যাংশ পাবো, তাতে আমাদের আর্থিক সমস্যা সমাধান হবে’ বাগেরহাট সামাজিক বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা চিন্ময় মধু বলেন, ‘২০০৮-০৯ অর্থ বছরের বনায়নের গাছ ২ থেকে ৩ বছর পর মেয়াদান্তে কেটে বিক্রি করা হবে। তখন একটি বাগানের ৪০ থেকে ৪৫ জন সদস্য সকলে এক থেকে দেড় লাখ করে টাকা পাবেন।’
বাগেরহাট সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সামাজিক বনায়নে একদিকে সবুজের আচ্ছাদন বাড়িয়ে পরিবেশর ভারসাম্য রক্ষা করছে, অন্যদিকে দারিদ্র বিমোচনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।’
রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/৭ এপ্রিল ২০১৮/আলী আকবর টুটুল/টিপু
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন