ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘বাজেটে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে হবে’

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ৪ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বাজেটে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে হবে’

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করে উচ্চ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকে বাজেটের মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাজেট ও ভোক্তা স্বার্থ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি।

গোলাম রহমান বলেন, ‘ভোক্তাসাধারণ দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক গোষ্ঠি। তাদের ব্যয়ের গতিপ্রকৃতি বস্তুত অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তাই আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভোক্তাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। ভোক্তার চাহিদার সঙ্গে পণ্য উৎপাদন এবং আমদানি-রপ্তানির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাই কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আয়ের সুষম বণ্টন ও বৈষম্য হ্রাস, দারিদ্র্য বিমোচন, দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা রক্ষা করে বাজেটের মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার বেশ কয়েকটি আইন প্রণয়ন করেছে। এসব আইন বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ইত্যাদি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান অপর্যাপ্ত ও দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামো এবং পর্যাপ্ত ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। আমরা আশা করি, অর্থমন্ত্রী আগামী বাজেটে দিকনির্দেশনা ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ প্রদান করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব সরকারি সংস্থাকে কার্যকর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’

তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ বছরের বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক করের হার এক বছরের জন্য অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আমরা চাই আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটেও সাধারণ ভোক্তাদের ব্যবহার্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর বাড়তি কোনো শুল্ককর আরোপ করা হবে না এবং ভ্যাটের আওতা-বহির্ভূত রাখা হবে।

এছাড়া ব্যবসায়ীদের কারও কারও ধারণা, ভ্যাট আইন কার্যকর হলে উৎপাদন ও বিপণনের প্রতিটি স্তরে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হবে। এমনটা হলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে এবং হিতে বিপরীত হবে। এ সময় তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিষয়টি স্পষ্ট করার অনুরোধও জানান।

পাশাপাশি সরকারি কোষাগারে সঠিকভাবে ভ্যাট জমা করার লক্ষ্যে ভ্যাট সংগ্রহে কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত ডিজিটাল ক্যাশ রেজিস্টার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে।

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির আদেশ বেআইনি বলে ক্যাবের সভাপতি বলেন, সম্প্রতি বিইআরসি গ্যাসের মূল্য দু’দফায় গড়ে প্রায় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধির আদেশ দিয়েছে। কিন্তু ক্যাবের বিবেচনায় বিইআরসির এই আদেশ বেআইনি, অন্যায্য ও অযৌক্তিক। এ আদেশের বিরুদ্ধে ক্যাব উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছে। আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তার কারণ দর্শানোর নোটিশ জারিসহ দ্বিতীয় দফার মূল্য বৃদ্ধি ছয় মাসের জন্য স্থগিতের জন্য আদেশ প্রদান করেছে। এছাড়া গ্যাসের মূল্য সহনশীল রাখার জন্য দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত ও আমদানিকৃত গ্যাস ও এলপিজির মূল্য সকল প্রকার শুল্ক-কর মুক্ত রাখারও প্রস্তাব করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে তামাকজাত পণ্যসহ এমন সব পণ্যের ওপর বর্ধিত হারে করারোপ সুবিচনাপ্রসূত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বেশকিছু দাবি তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে এবং বিদ্যুতের মূল্য ক্রমান্বয়ে কমাতে হবে। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বছরে ন্যূনপক্ষে একবার এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গণশুনানি করে নির্ধারণ করতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে মূল্য সমন্বয় বাস্তবসম্মত নয়। 

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সাধারণ ভোক্তাদের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার আহ্বান জানিয়ে ক্যাব সভাপতি বলেন, মোটা চাল, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি, গুঁড়ো দুধ, আলু, লবণ ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক বিভাগ বা ভোক্তাস্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে নতুন একটি মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা যেতে পারে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ এপ্রিল ২০১৭/নাসির/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়