ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

বাথরুমে যত ভুল (শেষ পর্ব)

মাহমুদুল হাসান আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ২৪ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাথরুমে যত ভুল (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

মাহমুদুল হাসান আসিফ : আপাতদৃষ্টিতে কিছু মনে না হলেও বাথরুমের বেশ কিছু অভ্যাস আপনার স্বাস্থ্য এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর যথেষ্ট বাজে প্রভাব ফেলে। ভুল পদ্ধতিতে মুখ ধোয়া থেকে শুরু করে বেশি সময় টয়লেটে বসে থাকার মতো ২২ অভ্যাস নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* হাত ভালো করে পরিষ্কার না করা
আপনার হাত যথাযথ পরিষ্কার করার জন্য সাবান এবং পানি দিয়ে মাত্র ২০ সেকেন্ড ধোয়া প্রয়োজন। মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৫ শতাংশ মানুষ সামান্য এই সময়টুকু নিয়ে তাদের হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করেন না। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গড়ে সবাই ৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে হাত পরিষ্কার করেন। সময় ঠিক রেখে হাত পরিষ্কার করার জন্য আপনি মনে মনে কোনো গান গাইতে গাইতে হাত পরিষ্কার করতে পারেন। এতে করে আপনার হাত রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু থেকে নিরাপদে থাকবে।

* টুথব্রাশ পরিষ্কার করতে ভুলে যাওয়া
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, টুথব্রাশে ই-কোলাই সহ প্রায় ১০ মিলিয়ন বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই ধরনের ক্ষতিকর সব ব্যাকটেরিয়া কেউই নিজের মুখের ভেতর নিতে চাইবে না। সুতরাং প্রতিবার ব্যবহারের পর আপনার টুথব্রাশ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন এবং মাঝেমধ্যে টুথব্রাশ এককাপ ভিনেগারের মধ্যে ৩০ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন। এভাবে আপনার টুথব্রাশ থেকে সকল ব্যাকটেরিয়া দূর হয়ে যাবে।

* মলত্যাগের পর বেশি টিস্যু ব্যবহার করা
মলত্যাগের পর সাধারণত টিস্যু দিয়ে বেশি মোছামুছি না করাটাই ভালো। মলত্যাগের পর ১-২ বার টিস্যু ব্যবহার করে পরিষ্কার করে ফেলুন। মলদ্বার অতিরিক্ত মোছামুছি করলে আপনার মলদ্বারে ছোট ছোট ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, ফলে সেখানে প্রদাহ এবং চুলকানি সৃষ্টি হতে পারে। একবার টিস্যু ব্যবহার যদি আপনার কাছে যথেষ্ট মনে না হয় তাহলে মলদ্বার মোছার কাজে ভেজা টিস্যু ব্যবহার করতে পারেন।

* গোসলের সময় শরীর বেশি ঘষাঘষি করা
গোসলের সময় তোয়ালে বা ফোম দিয়ে ত্বক বেশি ঘষাঘষি করার ফলে আপনার ত্বকের প্রাকৃতিক সুরক্ষাব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে ত্বক পরিষ্কার না করে বাচ্চাদের ব্যবহার্য তোয়ালে দিয়ে যতটা হালকা করে সম্ভব ত্বক পরিষ্কার করুন। তাছাড়া আপনার শরীরের ত্বক পরিষ্কার করার জন্য আপনার হাতই যথেষ্ট। তবে শরীরের ত্বক পরিষ্কার করার জন্য যে তোয়ালে বা ফোম আপনি ব্যবহার করেন সেটা একটা নির্দিষ্ট সময় পর পাল্টে ফেলুন যাতে আপনি ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে সুরক্ষিত থাকেন।

* টয়লেটের পেছনে পরিষ্কার না করা
এটা অবশ্য চিন্তা করতেও বিদঘুটে লাগে যে, মল এবং মূত্রের বেশ কিছুটা অংশ আপনার টয়লেটের পেছনের অংশে জায়গা করে নেয় এবং খুব নোংরা একটি আস্তরণ তৈরি করে যা পরিষ্কার করা খুবই কঠিন একটি কাজ। কিছু পেপার টাওয়েল নিয়ে তা জীবাণুনাশক কোনো পরিষ্কারক দিয়ে ভিজিয়ে নিন। অতঃপর সেগুলো দিয়ে আপনার টয়লেটের পিছনের অংশ পরিষ্কার করুন। এরপর আবার শুষ্ক পেপার টাওয়েল দিয়ে পরিষ্কার করুন।

* মাথার ত্বকে কন্ডিশনার না লাগানো
বেশিরভাগ মানুষ তাদের চুলে কন্ডিশনার লাগান কিন্তু মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্পের কথা তারা ভুলেই যান। চুলে কন্ডিশনার লাগানোর সময় মাথার ত্বক এবং চুল উভয় স্থানে লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কন্ডিশনার আপনার মাথার ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে ফলে চুলে খুশকি হয়না এবং চুল রুক্ষ হয়ে যায়না।

* সাবানে ময়েশ্চারাইজার না থাকা
আপনার সাবানে কোনো ময়েশ্চারাইজিং এজেন্ট অর্থাৎ আর্দ্রতা তৈরিকারী কেমিক্যাল না থাকলে ওই সাবান ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বক শুষ্ক এবং রুক্ষ হয়ে যাবে। সাবান কেনার সময় মোড়কে সাবান তৈরির উপাদানগুলো খেয়াল করুন। সেখানে উপাদান হিসেবে ‘স্টিয়ারিক এসিড’ এবং ‘ময়েশ্চারাইজিং’ শব্দটির উল্লেখ আছে কিনা খেয়াল রাখবেন।

* টয়লেট ব্রাশ ভেজা অবস্থায় রাখা
টয়লেট পরিষ্কার করার ব্রাশ ভেজা থাকলে সেখানে বিভিন্ন ধরনের টয়লেটের ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি শুরু করে এবং সেটিতে আর্দ্রতা ও ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। সেকারণে টয়লেট পরিষ্কার করার ব্রাশ ব্যবহারের পর তা হোল্ডারে না রেখে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। কেননা ভেজা অবস্থায় রেখে দিলে হিসাব অনুযায়ী আপনি ব্যাকটেরিয়া দিয়েই আপনার টয়লেট আবার পরিষ্কার করে বসবেন।

* ভুল পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ করা
দাঁত ব্রাশ করার সবচেয়ে ভালো পন্থা হচ্ছে, উপরের এবং নিচের দাঁতের সঙ্গে টুথব্রাশ ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে ব্রাশ করা। কেননা দাঁতের মাড়ির নিচের অংশে বেশিরভাগ সময় প্লাকের আস্তরণ পড়ে থাকে যা সহজে পরিষ্কার হয়না। তাছাড়া ব্রাশ করার সময় অল্প করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্রাশ করুন। তবে বৈদ্যুতিক টুথব্রাশ ব্যবহার করলে টুথব্রাশ ঘোরানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কেননা বৈদ্যুতিক টুথব্রাশে এই ব্যবস্থা আগে থেকেই দেওয়া থাকে।

* শরীর ভালোভাবে না ধোয়া
গোসল শেষ করে বাথরুম থেকে বের হওয়ার আগে আপনার শরীরে থাকা সাবান এবং শ্যাম্পু ভালমতো পরিষ্কার করুন। কেননা আপনার ত্বকে সাবান এবং শ্যাম্পুর নির্যাস জমে থাকলে ত্বকে প্রদাহ তৈরি হতে পারে। তাছাড়া ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে ব্রণ তৈরি হতে পারে। আপনার পিঠে যদি ব্রণ তৈরি হওয়ার সমস্যা থেকে থাকে, চুল পরিষ্কার করার সময় মাথা একদিকে কাঁত করে পরিষ্কার করুন যাতে সেগুলোর নির্যাস আপনার পিঠে না লাগে।

* জোরে ঘষে শরীর মোছা
শরীরের পানি মোছার জন্য তোয়ালে দিয়ে জোরে ঘষার ফলে কিছু লিপিড, আমিষ এবং ফ্যাটি এসিড আপনার শরীর থেকে চলে যায়। সেজন্য তোয়ালে দিয়ে খুব জোরে ঘষাঘষি করা পরিহার করুন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ আগস্ট ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়