ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাবা-মায়ের দায়িত্ব না নিলে জেল-জরিমানা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৬, ৯ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাবা-মায়ের দায়িত্ব না নিলে জেল-জরিমানা

পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইনে বলা আছে, সন্তান যদি বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব না নেন তাহলে প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। তবে আদালতে গিয়ে বাবা-মাকেই সেই মামলা দায়ের করতে হবে৷ এ বিষয়টিকে অনেকেই আইনের সীমাবদ্ধতা মনে করছিলেন। বলা হচ্ছিল, মামলার প্রক্রিয়াতেই অকার্যকর হতে পারে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন।

এবার পিতা-মাতার অসমর্থ হলে তাদের মনোনীত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করার বিধান রেখে বিধিমালা করছে সরকার।

পিতা-মাতার দেখভাল না করলে, তাদের দায়িত্ব না নিলে শাস্তি হিসেবে জেল ও জরিমানার বিধান রেখে চূড়ান্ত করা হয়েছে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিধিমালার খসড়া।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ‌্যেষ্ঠ সচিব জুয়েনা আজিজ রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা শুধু অর্থনৈতিকভাবেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছি না, আমাদের কালচারও দ্রুত ডেভেলপ হচ্ছে। এ ধরনের ফাস্ট কালচারের দেশে এরকম আইন এবং বিধির খুব প্রয়োজন।

তিনি বলেন, সময়ের চাহিদার কারণেই এ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। এবার সেই আইন বাস্তবায়নের সুবিধার্থে বিধিমালা জারি করা হচ্ছে। বিধিমালা প্রায় চূড়ান্ত। নিয়ম মোতাবেক কার্যক্রম সেরে এটি খুব দ্রুতই জারি করা হবে।

বিধিমালায় বলা আছে, পিতা-মাতাকে সন্তানের সঙ্গে রাখতে হবে। একাধিক সন্তান থাকলে পিতা-মাতা যার সঙ্গে বসবাস করতে চান, তাকে প্রাধান্য দিতে হবে। অন্য সন্তানরা সমভাবে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের ব্যয় বহন করবেন। কোনো কারণে সন্তানরা বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে সঙ্গে রাখতে না পারলে তাদের ভরণ-পোষণের ব্যয়ভার বহন করতে হবে। আইনের ব্যত্যয় ঘটলে সন্তানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও থাকছে। আইনে এই অপরাধে ১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাস জেলের বিধান রয়েছে।

শুধু শাস্তি নয়, দায়িত্ব পালনকারী সন্তানদের সম্মাননা জানানোর বিধানও রয়েছে বিধিমালায়। যেসব সন্তান পিতা-মাতার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের প্রণোদনা হিসেবে সম্মাননা দেয়া হবে। উপজেলা, জেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে তাদের আমন্ত্রণ করা হবে।

পিতা-মাতার ভরণ-পোষণে স্থায়ী ও চলতি তহবিল গঠন করার কথা বলা আছে বিধিমালায়। চলতি তহবিল জাতীয়, জেলা, উপজেলা ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত হবে। স্থায়ী তহবিল জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত হবে।

বিধিমালায় জাতীয়, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, শহর, ইউনিয়ন পর্যায়ে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ সহায়ক কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। সন্তান সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না সেটি তদারক করবে এসব কমিটি।

কোনো সন্তান তার মা-বাবাকে সঙ্গে রেখে ভরণ-পোষণ করতে না পারলে সরকারি-বেসরকারি 'পরিচর্যা কেন্দ্রে' রেখে পরিচর্যার সুযোগ রাখা হয়েছে বিধিমালায়। সেক্ষেত্রে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে, নিয়মিত সঙ্গ দিতে হবে।

সন্তানের চাকরি বা অন্য কারণে নিয়মিত দেখা করা সম্ভব না হলে বছরে কমপক্ষে দুইবার পিতা-মাতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে। প্রবাসী সন্তান বা সন্তানদেরকে প্রয়োজনে আধুনিক যোগাযোগ পদ্ধতির মাধ্যমে পিতা-মাতার নিয়মিত খোঁজখবর নিতে হবে।

পিতা-মাতা মারা গেলে সব সন্তানকে সশরীরে উপস্থিতি থেকে তাদের দাফন-কাফন, সৎকারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের দায় দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো সন্তান বিদেশে অবস্থান করলে বা যৌক্তিক কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকলে উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে পিতা-মাতার দাফন-কাফন ও সৎকারের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিধিমালাটির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করতে উঠান বৈঠক, পথনাটক, ক্যাম্পেইন, অ‌্যাডভোকেসি, সভা, কর্মশালা, বিজ্ঞাপন, পোস্টার, ফিফলেট, ব্রোশিউর, ফ্লিপচার্ট ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করার কথা বলা আছে এতে।

এছাড়া, পিতামাতার ভরণপোষণের বিষয়ে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, অন্যান্য গণমাধ্যম, ওয়েবসাইট, ওয়েবপোর্টাল, ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণে সন্তানদের উৎসাহিত করে তরুণ প্রজন্মের কাছে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



ঢাকা/হাসান/রফিক  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়