ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে ফসলি জমি

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে ফসলি জমি

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা : জেলার বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের অন্তর্গত সুন্দ্রাটিকি গ্রামে অবাধে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব।

সুন্দ্রাটিকির ‘কামাইছড়া’ বালু মহালে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে গভীর গর্তকুড়ে চলছে একটি অসাধু ও প্রভাবশালী চক্রের বালু উত্তোলনের মহোৎসব।

এসব বালু উত্তোলনের ফলে এলাকায় অকাল বন্যা ও নদী, জমিজমা, বাড়িঘর, পাহাড় হুমকির মুখে পড়েছে। বদলে যাচ্ছে জমির শ্রেণি। এতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে এলাকার লোকজনের।

এছাড়াও উক্ত বালু বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে যন্ত্রদানব খ্যাত ট্রাক্টর। এসব ট্রাক্টর পরিবেশ বিপন্ন করে চলছে দিবানিশি। ট্রাক্টরের বিশাল আকৃতির চাকায় পিষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট। প্রায় সকল রাস্তাঘাট ধসে খাল ও জমির সাথে একাকার হয়ে গেছে। চলাচলের সুবিধার্থে লোকজন সকালে ইট-বালি ফেলে কিংবা বাঁশের খুঁটি দিয়ে ভাঙা রাস্তা চলাচলের সামান্য উপযোগী করছে। আবার বিকেলেই বেপরোয়া ট্রাক্টর আবার ভেঙে একাকার করে দিচ্ছে। এতে বাসিন্দাদের চলাচলে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ।

এছাড়াও রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে ট্রাক্টর চালানোর ফলে ধুলোবালি উড়ে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এতে গ্রামবাসীর মাঝে বাড়ছে রোগ-বালাই।

এ নিয়ে প্রতিদিন কথা কাটাকাটি, ঝগড়া-বিবাদ হচ্ছে বালু উত্তোলকারী চক্রের সাথে। বাধা দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে। কিন্তু বালু উত্তোলকারী চক্রটিকে কোন ভাবেই দমানো যাচ্ছে না।

সুন্দ্রাটিকি গ্রামের বাসিন্দা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া তানিয়া আক্তার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বালুবাহী ট্রাক্টর আমাদের গ্রামের রাস্তাঘাট নষ্ট করে দিয়েছে। ফলে আমরা ভাল কাপড় ও জুতো পড়ে স্কুলে যেতে পারি না। এছাড়া ট্রাক্টর ও ড্রেজার মেশিনের শব্দে বাড়িতে পড়াশুনায় মনোযোগের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। তাছাড়া রাতে ঘুমে পর্যন্ত পারি না।’

একই গ্রামের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রুবেল মিয়া রাইজিংবিডিকে আরো বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে একটার পর একটা ট্রাক্টর চলাচলের ফলে ধুলোবালি উড়ে। এতে আমাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। রাস্তা দিয়ে হাঁটতেও ভয় হয়, কখন যে ট্রাক্টরের চাকা আমাদের পিষ্ট করে চলে যায়।’

সুন্দ্রাটিকি গ্রামবাসীদের অনেকেই রাইজিংবিডিকে জানান,এ গ্রাম পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় এর ভূ-প্রকৃতি ছিল বৈচিত্রপূর্ণ। উঁচু-নীচু ও সমতল ভূমিতে এ জনপদটিতে জনবসতির পাশাপাশি ছিল প্রচুর ফসলি জমি। বালুখেকোদের থাবায় এ জনপদ এখন বসবাস ও চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। তাছাড়া পাহাড়ি টিলা ধসে পড়ছে।

এসব বন্ধ করতে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে বলেও তারা জানান।

তবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরামহীন যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ এলাকার লোকজন প্রতিবাদে সোচ্চার হতে শুরু করেছেন। তারা প্রাথমিকভাবে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে আবেদন করে প্রতিকার চেয়েছেন। প্রয়োজনে তারা কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা হক জানান, কামাইছড়া বালু মহালটি বন্ধের দাবিতে এর আগেও একটি আবেদন করেছিল এলাকাবাসী। আমি ইতিমধ্যে মহালটির ইজারা বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বরাবরে সুপারিশও করেছি।

উল্লেখ্য, বাহুবল এলাকায় ড্রেজার মেশিনদ্বারা বালু উত্তোলন ও যন্ত্রদানব ট্রাক্টর দ্বারা বালু বহনকারীদের বিরুদ্ধে জনতা ফোঁসে উঠেছে। গত সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে তিন শতাধিক লোক স্বাক্ষরিত দু’টি আবেদন জমা হয়েছে। একটি আবেদনে উপজেলার কামাইছড়া বালু মহালের ইজারা বাতিল ও অপর আবেদনে অবাধে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে বায়ূ ও শব্দ দূষণ এবং রাস্তাঘাট ধ্বংসের প্রতিকার চাওয়া হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ হবিগঞ্জ/৮সেপ্টেম্বর২০১৯/ মো. মামুন চৌধুরী/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়