ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাড়িকে ঘিরে খামারে ত্রিমুখী আয়

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৬, ১৩ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বাড়িকে ঘিরে খামারে ত্রিমুখী আয়

বাড়িকে ঘিরে আদর্শ খামার গড়ে তুলেছেন হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার শিক্ষক ইয়াকুত আলী।

বাহুবলের বাদে অলুয়া গ্রামে বাড়িকে ঘিরে ৯ একর জমিতে গড়ে তোলা এ খামার থেকে নিজের প্রয়োজন মিটিয়েও বছরে  দুই থেকে তিন লাখ আয় হচ্ছে তার।

তিলে তিলে গড়ে তোলা এ খামারে রয়েছে ১২টি পুকুর। পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও পুকুরগুলোর পাড়ে পাড়ে চাষ হচ্ছে বারোমাসি সবজি ও ফলমূল। ফলের মধ্যে পেঁপে, পেয়ারা, আম, জাম, কাঁঠাল ও সবজির মাঝে লাউ, কাকরোল, চিচিঙ্গা, করলা, বরবটি, শসা, কচু, জিঙ্গা, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি। চাষ হচ্ছে দেশী মোরগও। অন্যদিকে খামারের ঘাসে গরু পালন করেও ভালো আয় হচ্ছে তার। শিক্ষকতার পাশাপাশি খামারটি ত্রিমুখী আয়ের উৎস।

যা দেখে অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছেন। বেকার যুবকরা নিজ নিজ পুকুরপাড়ে সবজি ও ফলমূল চাষে ঝুঁকছেন। তাই অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে।

ইয়াকুত আলী বাহুবল মিরপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের ইতিহাসের প্রভাষক। এভাবে একটি বাড়িকে ঘিরে গড়ে তোলা খামার নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি জানান, মূলত এ খামার গড়ে ওঠার পেছনে অনুপ্রেরণা রয়েছে স্থানীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের। এ ছাড়া মাছ চাষে তিনি মৎস্য বিভাগের পরামর্শ নিয়েছেন বলে জানান।

তিনি বলেন, ‘মৎস্য খামার করার পর একে একে সবজি, ফলমূলের চাষ ও গরু পালনের উদ্যোগ নিয়েও সফল হয়েছি। শুধু তাই নয়, গরুর গোবর দিয়ে বাড়িতে বায়োগ্যাস চুলাও ব্যবহার করছি।'

সবজি চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সবজি চাষ লাভজনক। তবে এতে জমি, টাকা ও নিজের শ্রম প্রয়োজন। খামারের প্রতি সতর্ক নজর রাখতে হবে। নিতে হবে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞদের পরামর্শ।'

তিনি জানান, তার সাফল্য দেখে সবজি চাষে অনুপ্রাণিত হয়েছেন এলাকার অনেক বেকার যুবক। এসব যুবককে তিনি পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেক যুবকই সাফল্যের মুখ দেখেছেন।

নজরুল ইসলাম, আওলাদ মিয়া, খলিলুর রহমান সবজি চাষে সফল এসব যুবক জানালেন, ইয়াকুত আলী শিক্ষকতার পাশাপাশি পুকুরে মাছ আর তার পাড়ে চাষ করছেন সবজি ও ফলমূল। আমরা কেন বেকার বসে থাকব। তার পরামর্শ নিয়ে নিজ নিজ জমিতে সবজি ও মৎস্য খামার গড়ে তুলেছি। এসব চাষ করে সফল হচ্ছি। আমাদের মতো অন্য যুবকরাও মাছ ও সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

সফল মাছ চাষের জন্য ইয়াকুত আলী একাধিকবার উপজেলায় সেরা পুরস্কার পেয়েছেন। উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হোসেন শাহ বলেন, ‘প্রভাষক ইয়াকুত আলী কঠোর পরিশ্রমী। নিজ বাড়িতে খামার গড়ে সফল। খামারকে ঘিরে ত্রিমুখী আয়ের উৎস গড়ে তুলেছেন। তার বাড়ির পুকুরে রয়েছে মাছ। আর পুকুর পাড়ে পাড়ে প্রায় সব ধরনের সবজি ও ফলের গাছ।'

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, ‘এ ধরণের খামারের সংখ্যা কম। প্রভাষক ইয়াকুতের মতো গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে খামার গড়ে তুললে যেমনটা বেকার সমস্যা সমাধান হবে। তেমনি বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন সম্ভব। প্রভাষক ইয়াকুতের জন্য শুভ কামনা।' 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‌প্রভাষক ইয়াকুতের খামারে গরু পালন হয়। গরুর গোবরে বিষমুক্ত বারোমাসি সবজি চাষ হচ্ছে জেনে অত্যন্ত ভাল লেগেছে।'

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহজাদা খসরু বলেন, ‌‘পুকুরে মাছ। পাড়ে বারোমাসি সবজি চাষে অর্থ আসছে। এমন পরিশ্রমী উদ্যোক্তাদের পাশে আমরা অবশ্যই আছি।'

 

হবিগঞ্জ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়