ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বিদায় ‘ইয়র্কার কিং’

আবু হোসেন পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০০, ২৭ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিদায় ‘ইয়র্কার কিং’

মালিঙ্গা নামছেন, ওয়ানডেতে শেষবারের মতো

আবু হোসেন পরাগ : লাসিথ মালিঙ্গা। নামটা বলার পর কোন ছবি আপনার চোখের সামনে ভেসে ওঠে? ঝাঁকড়া চুল, অদ্ভুত বোলিং অ্যাকশন কিংবা বিধ্বংসী ইয়র্কার? হয়তো সবগুলোই! ক্যারিয়ারজুড়ে এই তিনটি বিষয় দিয়েই যে সবাইকে মুগ্ধ করে গেছেন শ্রীলঙ্কান তারকা।

কাল সেই ক্যারিয়ারের একটা অধ্যায়ের ইতি টেনেছেন মালিঙ্গা। বিদায় বলেছেন ওয়ানডে ক্রিকেটকে। শ্রীলঙ্কার হয়ে সব সময় নিজেকে মেলে ধরেছেন একজন স্ট্রাইক বোলার হিসেবে। বিদায়বেলাতেও সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটাই। ম্যাচজয়ী পারফরম্যান্সে নিজের জাত চিনিয়েছেন আরও একবার।

আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে খেলে বিদায় জানাবেন এই ফরম্যাটকে। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকার শেষটা রাঙাতে আয়োজনের কমতি ছিল না লঙ্কান বোর্ডের। দর্শকে পূর্ণ ছিল কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামও।

মালিঙ্গা যখন ব্যাট করতে নেমেছেন, সতীর্থদের থেকে পেয়েছেন গার্ড অব অনার। ‘মালি’, ‘মালি’ বলে দর্শকদের গগনবিদারী চিৎকার তো ছিলই। নিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ব্যাট হাতে অপরাজিত থেকেছেন ৬ রানে।

পরে হাত ঘুরিয়ে প্রথম ওভারেই নিয়েছেন উইকেট। দুর্দান্ত এক ইনসুইঙ্গিং ইয়র্কারে উড়ে নিয়ে গেছেন তামিম ইকবালের স্টাম্প, যে বলটা ক্যারিয়ারজুড়েই তার জন্য হয়ে গিয়েছিল ট্রেডমার্ক। প্রথম স্পেলে ইয়র্কারে বোল্ড করেছেন সৌম্য সরকারকেও। পরে উইকেট নিয়েছেন আরেকটি।

 

নিজের শেষ বলে উইকেট নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন মালিঙ্গা। দলের ৯১ রানের জয়ে ৩৮ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। তাতে ২২৬ ওয়ানডেতে তার মোট উইকেটসংখ্যা হয়েছে ৩৩৮, শ্রীলঙ্কার হয়ে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। দেশের হয়ে ওয়ানডেতে তার চেয়ে বেশি উইকেট আছে শুধু মুত্তিয়া মুরালিধরন (৫৩৪) ও চামিন্দা ভাসের (৪০০)।

জুলাই মাসটা মালিঙ্গার ক্যারিয়ারের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। ২০০৪ সালে এই জুলাই মাসেই টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে হয়েছিল আন্তর্জাতিক অভিষেক, ডারউইনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। একই মাসে ডাম্বুলায় এশিয়া কাপে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে অভিষেক। ১৫ বছর পর আরেকটি জুলাইয়ে বিদায় বললেন ওয়ানডে ক্রিকেটকে।

এই ফরম্যাটে মালিঙ্গা শুধু দেশের নয়, বিশ্বকাপ ইতিহাসেরও তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। তার ৫৬ উইকেটের ওপরে আছেন শুধু মুরালিধরন (৬৮) ও গ্লেন ম্যাকগ্রা (৭১) । ২০০৭ থেকে ২০১৯, মালিঙ্গা খেলেছেন টানা চারটি বিশ্বকাপ। প্রতি আসরেই নিয়েছেন কমপক্ষে ১২ উইকেট। আর কোনো বোলার ১০ বা এর বেশি উইকেট তিনটির বেশি আসরে নিতে পারেননি।

ওয়ানডেতে মালিঙ্গার তিনটি হ্যাটট্রিকও বিশ্ব রেকর্ড। বিশ্বকাপেও তার দুটি হ্যাটট্রিক সর্বোচ্চ। চার বলে চার উইকেট নেওয়া ওয়ানডে ইতিহাসের একমাত্র বোলার তিনিই। ডানহাতি পেসার তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত। এই চার বছরে নিয়েছেন ১৬৩ উইকেট। এই সময়ে তার চেয়ে বেশি উইকেট নিতে পারেননি আর কেউই।

মূল কাজ বোলিং হলেও ব্যাটিংয়ের একটি বিশ্ব রেকর্ডেও জড়িয়ে আছে মালিঙ্গার নাম। ওয়ানডেতে তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর ৫৬, ২০১০ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। সেই ম্যাচে তিনি নবম উইকেটে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের সঙ্গে গড়েছিলেন ১৩২ রানের জুটি, যা নবম উইকেট বা এর নিচে ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ। ২৪০ রান তাড়ায় ১০৭ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর ম্যাথুস-মালিঙ্গার রেকর্ড জুটিতে শ্রীলঙ্কা পেয়েছিল ১ উইকেটের অবিশ্বাস্য এক জয়।

 

তবে ব্যাটিং নয়, মালিঙ্গাকে সবাই মনে রাখবে তার বোলিংয়ের জন্যই। বিশেষ করে তার বিধ্বংসী ইয়র্কার। অথচ কে বলবে, ১৭ বছর বয়সের আগে তিনি ক্রিকেট বলই হাতে নেননি! তার জন্ম গল শহরের কাছাকাছি হোক্কাডুয়া গ্রামে, সমুদ্রের খুব কাছেই। সমুদ্রের পাড়ে ছোটবেলায় খেলতেন টেনিস বলের ক্রিকেট। তার যে বোলিং অ্যাকশন, যা ‘স্লিঙ্গিং’ নামে পরিচত। সেই অ্যাকশনের শুরুটা টেনিস বলের ক্রিকেটেই।

কলেজে উঠে প্রথমবার পরিচয় হয় ক্রিকেট বলের সঙ্গে। এরপর একটি প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে মালিঙ্গা নজরে আসেন কিংবদন্তি পেসার চম্পকা রমানায়েকের। তিনিই পরে তুলে নিয়ে আসেন মালিঙ্গাকে। কাকতালীয়ভাবে মালিঙ্গার বিদায়ী ম্যাচে রমানায়েকেও ছিলেন প্রেমাদাসায়, বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত বোলিং কোচ হিসেবে।

ম্যাচ শেষে মালিঙ্গাকে তুলে দেওয়া হয় সম্মাননা স্বারক। পরে তিনি সিংহলী ভাষায় দেন লম্বা বক্তৃতা। আর সেই বক্তৃতার শেষ দিকে বার বার নাম ধরে ডাকেন রমানায়েকেকে। তখন আবেগাপ্লুত মালিঙ্গার চেহারাই বলে দিচ্ছিল, রমানায়েকে তার কাছে কত বড়। পরে নিজের জার্সি বাঁধানো স্মারক তুলে দেন রমানায়েকের হাতে।

টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন আগেই। এবার ওয়ানডেকে বিদায় জানালেও শ্রীলঙ্কার হয়ে ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবেন বলে জানিয়েছেন মালিঙ্গা। সেটা সম্ভব হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। আপাতত ওয়ানডের মালিঙ্গাকে গুডবাই, বিদায় ইয়র্কার কিং।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুলাই ২০১৯/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়