বিদায়ী মঞ্চ জয়ে রাঙালেন মাসাকাদজা
তার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল মঞ্চ। যে মঞ্চে তার থেকে বড় কোনো ধ্রুবতারা আর ছিল না। নিজের মঞ্চে নায়ক হলেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা নিজেই। মাসাকাদজা যখন ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন তখন জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের কোনো ক্রিকেটার খেলা শুরু করেননি। বুক উঁচু করে ১৮ বছর চালিয়ে গেলেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। যার শেষটা হলো শুক্রবার।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদে আফগানিস্তানের দেওয়া ১৫৬ রানের টার্গেটে মাসাকাদজা যখন ব্যাটিংয়ে আসলেন তখন গার্ড অব অনারের জন্য প্রস্তুত সতীর্থরা। পাশেই দাঁড়িয়ে আফগানিস্তানের সকল ক্রিকেটার। মুখে সেই চিরচেনা হাসি। সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে মাসাকাদজা হেঁটে আসলেন ওই পথ ধরে।
এরপর ২২ গজে তার কড়া শাসন শুরু। ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি। এরপর ৪২ বলে ৭১। দওলাত জারদানের বল উড়াতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড়। লং লেগে নবীর জমাট ক্যাচে শেষ মাসাকাদজার শেষ ইনিংস। কিন্তু গোটা গ্যালারি তখনও যেন মাসাকাদজাকে বলছে, ‘ডোন্ট গো মাসাকাদজা।’ তার বিস্ফোরক ইনিংসে জিম্বাবুয়ে জিতল ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের শেষ ম্যাচে। জিম্বাবুয়ে সাত উইকেটে হারাল আফগানিস্তানকে।
তার আউটের পর মাঠে ছড়িয়ে থাকা ফিল্ডাররা শুভকামনা জানালেন। গ্যালারিতে থাকা দর্শকরা দাঁড়িয়ে সম্মান জানালেন জিম্বাবুয়ের কিংবদন্তিকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শুরু হয়েছিল জিম্বাবুয়ের স্বর্ণযুগের শেষ সময়ে। আর বিদায় নিচ্ছেন যখন তার দেশের ক্রিকেট ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে! এতে মাসাকাদজার দায় সামান্যই।
অধিনায়ক মাসাকাদজা দলকে শেষদিনও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন। ব্যাট হাতে ৭১ রান তুলে দলকে জিতিয়েছেন। চার চার ও পাঁচ ছক্কায় মাঠ মাতিয়ে রাখেন গোটা স্টেডিয়াম। শন উইলিয়ামসন যখন জয়সূচক রানটি নিলেন তখন ক্যামেরা খুঁজে নেয় মাসাকাদজাকে। শেষ মুহূর্তে জাতীয় দলের জার্সির ওপর জাতীয় পতাকা। সেই পতাকা গায়ে জড়িয়ে উঠেছেন পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে, নিয়েছেন বিসিবির সংবর্ধনা।
মাসাকাদজা জয়ের নায়ক হতে পারেননি। আনসাং হিরো তো হয়েছেন! তাকে সঙ্গ দিয়েছেন চাকাবা। ৩২ বলে ৩৯ রান করেন এক চার ও দুই ছক্কায়। মাসাকাদজার সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তার অবদান ৭০ রান। শেষ দিকে উইলিয়ামসন ২১ রান যোগ করে তিন বল আগে দলকে জয় এনে দেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে আট উইকেটে ১৫৫ রান তুলে আফগানিস্তান। প্রথম ১০ ওভারে ৮৪ রান তুলেছিল তারা। কিন্তু শেষ ১০ ওভারে ৭১ রানের বেশি করতে পারেনি । বোলিংয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় জিম্বাবুয়ে। পেসার এমপোফুর চার উইকেটে লক্ষ্য নাগালে রাখে জিম্বাবুয়ে। দারুণ বোলিংয়ে এমপোফুর হাতে উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার।
আফগানিস্তানের হয়ে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ রান করেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। চারটি করে চার, ছক্কায় ৪৭ বলে ৬১ রান করেন ডানহাতি ওপেনার। এছাড়া হজরত উল্লাহ জাঝাই ২৪ বলে করেন ৩১ রান। উদ্বোধনী জুটিতে এ দুই ব্যাটসম্যান তোলেন ৮৩ রান। মিডল অর্ডারে তাদের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। শেষ দিকে গুলবাদিন নাইব ১০, ফজল নাইজাই ১২ রান করেন।
এমন জয়ের রাতে মাসাকাদজা দলকে দিলেন দ্বিগুন উদযাপনের স্বাদ। টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ে প্রথমবারের মতো হারাল আফগানিস্তানকে। আর সেই জয়টা এলো দেশটির হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ১৬৬২ রান করা মাসাকাদজার ব্যাট দিয়ে।
চট্টগ্রাম/ইয়াসিন
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন