ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিদ্যুৎ চলে গেলে যা করবেন না

মাহমুদুল হাসান আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২২, ১৬ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিদ্যুৎ চলে গেলে যা করবেন না

প্রতীকী ছবি

মাহমুদুল হাসান আসিফ : বিদ্যুৎ ছাড়া আমাদের জীবন অচল। সে কারণে কোনো সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়ি এবং নানা ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি। এরকম কিছু ভুল পদক্ষেপ নিয়ে এ প্রতিবেদন।

মোমবাতি জ্বালানো : বিদ্যুৎ চলে যাওয়া মাত্রই মোমবাতি জ্বালানো নেহায়েৎ মান্ধাতার আমলের চর্চা ছাড়া আর কিছু নয়। আমেরিকান রেড ক্রস সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরির সদস্য জিম জজ বলেন, ‘অন্ধকারে জ্বলন্ত মোমবাতি অসাধারণ সুন্দর দেখালেও, মোমবাতি উল্টে পরে গিয়ে আগুন লেগে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাছাড়া মোমবাতির মাধ্যমে খুব একটা শক্তিশালী আলোও পাওয়া যায় না। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি হারিকেনের ওপর নির্ভরশীল হন।’

ফোনের পিছে লেগে থাকা : যখন আপনি টিভি দেখতে পারছেন না তখন মোবাইলে গেম খেলা বা ব্রাউজিং একমাত্র বিকল্প মনে হতে পারে। টি.ওয়েবার প্লাম্বিং, হিটিং, এয়ার অ্যান্ড ইলেকট্রিকের লাইসেন্সধারী ইলেকট্রিশিয়ান এড লুনসবারি বলেন, ‘কিন্তু এ সময় অহেতুক মোবাইল ব্যবহার না করে মোবাইলের চার্জ সঞ্চয় করে রাখুন।’ কেননা দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদ্যুৎ চলে গেলে জরুরি কোনো কাজে আপনার মোবাইল দরকার হতে পারে। মোবাইলে প্রয়োজনীয় কাজ থাকলে অতিরিক্ত কোনো বন্দোবস্ত অর্থাৎ পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন।

ইলেকট্রনিক্স প্লাগ ইন রাখা : অনেক সময় ঝড়-ঝঞ্ঝার আগে বিদ্যুৎ চলে যায়। আপনি যদি বৈদ্যুতিক সামগ্রীর সংযোগ সকেটে যুক্ত রেখে দেন আর বড়সড় কোনো বজ্রপাত হয়, সেক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। আপনার বৈদ্যুতিক সামগ্রী নষ্ট হয়ে যেতে পারে, শক্তিশালী বজ্রপাতের ফলে অনেকসময় আগুন পর্যন্ত লেগে যায়। সে কারণে বিদ্যুৎ না থাকলে গুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যুতিক সামগ্রীগুলোর প্লাগ খুলে রাখুন। এতে করে ক্ষতির আশঙ্কা অনেকাংশেই কম থাকে। তাছাড়া বজ্রপাতে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্য আপনি বজ্রপাত প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
আবার অনেকেই আছেন বিদ্যুৎ চলে গেলে সব বৈদ্যুতিক সামগ্রী বন্ধ রাখেন। ফলে বিদ্যুৎ ফিরে আসলে বোঝার কোনো উপায় থাকে না। সে কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে আপনার ধারে কাছে অন্তত একটি টেবিল ল্যাম্প প্লাগে যুক্ত রাখুন।

ফ্রিজের দরজা খোলা : বিদ্যুৎ না থাকলে আপনি যতবার ফ্রিজের দরজা খুলবেন ততবার ভেতর থেকে ঠান্ডা বাতাস বের হয়ে যাবে এবং বিদ্যুৎ না আসা পর্যন্ত আপনার ফ্রিজ পুনরায় শীতল অবস্থায় ফিরবে না। ফলে ফ্রিজে রাখা খাবার-দাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেজন্য বিদ্যুৎ চলে গেলে খুব দরকার না থাকলে ফ্রিজের দরজা খুলবেন না। শুধু তাই নয়, ফ্রিজ খাবারে পরিপূর্ণ থাকা অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে গেলে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত খাবার ভালো থাকে। কিন্তু ফ্রিজ অর্ধেক পূর্ণ অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে গেলে ফ্রিজে থাকা খাবারের মেয়াদ ২৪ ঘণ্টা হয়ে যায়। আপনার ফ্রিজে থাকা খাবারগুলো একবার ঠান্ডা হওয়ার পর সেগুলো শীতলতা ধরে রাখে এবং অন্যান্য খাবার এই শীতলতার কারণে সুরক্ষিত থাকে। সেজন্য আবহাওয়া খারাপের কারণে বিদ্যুৎ না থাকার কোনো পূর্বাভাস পেলে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিয়ে রাখুন। ফ্রিজে খাবার কম থাকলে প্রয়োজনে পানির বোতল দিয়ে ফ্রিজ পূর্ণ করে রাখুন। এতে খাবার সুরক্ষিত থাকবে।

বাড়ির গ্যারেজে জেনারেটর রাখা : আপনার নিত্য ব্যবহার্য জেনারেটর নীরবে আপনার ক্ষতি করে চলেছে আপনি হয়তো তা জানেন না। জেনারেটর থেকে কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়, যা নীরব ঘাতক নামে পরিচিত। বর্ণ এবং গন্ধহীন বিষাক্ত এই গ্যাস নীরবে আপনাকে চরম অসুস্থ করে দিতে পারে। সুতরাং জেনারেটর ব্যবহার করলে তা বাড়ি থেকে অন্তত ২০ ফুট দূরে রেখে ব্যবহার করুন। অনেকে গ্যারেজে রেখে জেনারেটর ব্যবহার করেন। গ্যারেজের দরজা খুলে রাখলেও জেনারেটরের কারণে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাছাড়া জেনারেটর রাখার জন্য আপনাকে আলাদা করে জায়গা তৈরি করে নিতে হবে; যাতে বৃষ্টি, প্রচন্ড বাতাস বা অতিরিক্ত ঠান্ডায় তা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি কাঠের তৈরি বড় বাক্সের মধ্যে আপনি জেনারেটর রেখে দেন। অনেকেই জেনারেটর রাখার স্থানটি অনেক ছোট করে বানিয়ে ফেলেন যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।

পানি মজুদ করে রাখতে ভুলে যাওয়া : যে কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়। সে কারণে খাবার-দাবার থেকে শুরু করে সকল গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী আপনার হাতের নাগালে রাখুন। পানি এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই বিশুদ্ধ পানির বন্দোবস্ত রাখার কথা ভুলে যান। বোতল থেকে শুরু করে বড় বড় পাত্রে বেশি করে পানি মজুদ রাখুন। কেননা বিদ্যুৎ না থাকলে পানি সংগ্রহ এবং মজুদ দুটি কাজই ব্যাহত হবে। 

দীর্ঘদিনের পুরোনো টর্চ ব্যবহার করা : আপনার ব্যাটারিচালিত টর্চ দীর্ঘদিন পরে থাকার পর যদি না জ্বলে সেটা নিয়ে বেশি বিচলিত হবেন না। কেননা দীর্ঘদিন পরে থাকার ফলে ব্যাটারির ভেতর থেকে অ্যাসিড বের হওয়ার কারণে হয়তো তা কাজ করছে না। আপনি খালি হাতে দেখতে গেলেই গলিত অ্যাসিড আপনার হাতে লেগে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সে কারণে জরুরি মুহূর্তে ব্যবহারের জন্য রিচার্জেবল এলইডি লাইট ব্যবহার করুন।

গ্যাস স্টেশনে যাওয়া নিয়ে তাড়াহুড়ো : বড় ধরনের বৈদ্যুতিক বিচ্ছিন্নতায় গাড়িতে গ্যাস ভরার জন্য পার্শ্ববর্তী গ্যাস স্টেশনের গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। সুতরাং আপনি অযথা সেখানে ভিড় না জমিয়ে বরং খানিক দূরে গাড়ি চালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে গ্যাস নিন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জুন ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়