ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বিল গেটসের ৭ ভবিষ্যদ্বাণী

মোখলেছুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ৭ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিল গেটসের ৭ ভবিষ্যদ্বাণী

বিল গেটস

মোখলেছুর রহমান: বিল গেটসের শরীর বর্তমানে বসবাস করতে পারে কিন্তু তার মস্তিষ্ক ভবিষ্যতে বাস করে। এই ধনকুবের মানবপ্রেমী কম্পিউটিং, জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বাণীকে তার কর্মজীবনের অংশ করেছেন।

তিনি স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক উত্থান সম্পর্কে সঠিক পূর্বাভাস দিয়ে ছিলেন এবং তার ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক ট্র্যাকেই রয়েছে- এর আরো অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।

এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো, আমাদের ভবিষ্যত পৃথিবী নিয়ে বিল গেটসের আরো কিছু কল্পনার কথা।

বায়োটেরিজম এক বছরেরও কম সময়ে ৩৩ মিলিয়ন মানুষকে নিশ্চিহ্ন করতে পারে
গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিল গেটস জার্মানির মিউনিখের একটি সম্মেলনে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন যে, বর্তমানে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বায়ো টেরিরিস্ট। এটা একটি বসন্ত রোগের সিন্থেটিক ভাইরাস হতে পারে বা একটি সুপার-ফ্লু হতে পারে, যা স্বাভাবিক প্রজাতির চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক হতে পারে।

গেটস বলেন, ‘এপিডেমিওলজিস্টরা বলছেন, আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী এই প্রাদুর্ভাবের একটি সম্ভাব্য আশঙ্কা রয়েছে। মাত্র এক বছরে এটি ৩৩ মিলিয়ন মানুষকে নিশ্চিহ্ন করতে পারে।’

এই কারণেই গেটস এবং তার ফাউন্ডেশন ব্যাপক টিকা প্রদান করেছে। যা বিশ্বে তাদের শীর্ষ অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি।

আফ্রিকা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে
গেটস ২০১৫ সালে তার ব্লগে বার্ষিক লেখায় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, আফ্রিকার কৃষি শিল্পের উৎপাদনশীলতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, যা আফ্রিকা মহাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলবে।

বর্তমানে মহাদেশটি প্রতিবছর প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের খাদ্য আমদানি করে, যদিও সাব-সাহারান আফ্রিকার ৭০ শতাংশ অধিবাসী কৃষক।

গেটস লিখেছেন, ‘পরবর্তী ১৫ বছরে, কৃষিতে উদ্ভাবনের ফলে এই নিষ্ঠুর পরিণতিটি বিলিন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে বিশ্বে উন্নততর সার ও ফসল উদ্ভাবন করা হয়েছে যা অধিক ফলদায়ক, পুষ্টিকর এবং খরা ও রোগ প্রতিরোধক- এগুলো এবং অন্যান্য বিদ্যমান প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে আফ্রিকান কৃষকেরা তাদের ফলন দ্বিগুণ করতে পারবে।’

মোবাইল ব্যাংকিং দারিদ্র্য হ্রাসে সাহায্য করবে
আফ্রিকান দেশগুলোতে যেখানে নগদ লেনদেন করা খুবই কঠিন, সেখানে মানুষ প্রায়ই স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য, শিক্ষা বা কোনো কিছু মেরামতের জন্য অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হন।

গেটস বলছেন যে, এটি দরিদ্রদের ব্যাংকিং পরিকাঠামোতে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে। আর্থিক সেবা যেমন এম-পিইএসএ, কেনিয়া ও উগান্ডার মতো দেশে ডিজিটাল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করছে। যারা আগে ব্যাংকিং পরিষেবাগুলোতে প্রবেশ করতে পারতো না, তারাও এখন অ্যাকাউন্টগুলোতে আরো সহজেই অর্থ সঞ্চয় করতে পারে।

‘২০৩০ সালের মধ্যে ২ কোটি মানুষ যাদের এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই তারা ফোনের মাধ্যমে তাদের অর্থ সংগ্রহ এবং অর্থ প্রদান করবে।’

২০৩৫ সালে কোনো দেশই দরিদ্র থাকবে না
গেটস ২০১৪ সালে তার ব্লগে বার্ষিক লেখায় দৃঢ়ভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, বিদেশী সাহায্যের ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রায় কোনো দরিদ্র দেশ থাকবে না। (তার ফাউন্ডেশন থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের বিদেশী সহায়তা বাজেটের ওপর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে তার এই হিসাব এখনো কাজ করবে)।

গেটস ব্যাখ্যা করেন, ‘প্রায় সব দেশকেই তখন আমরা নিম্ন-মধ্যম আয়ের বা ধনী বলে বিবেচনা করবো। দেশগুলো তাদের সর্বাধিক ফলপ্রসূ প্রতিবেশী থেকে শিখবে  কীভাবে নতুন ভ্যাকসিন, ভালো বীজ এবং ডিজিটাল বিপ্লবের মতো উদ্ভাবন থেকে উপকৃত হওয়া যায়।’

২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে দূষণমুক্ত-শক্তি আবিষ্কার হবে
গেটসের সবচেয়ে আশাবাদী ভবিষ্যদ্বাণীটি আসে ২০১৬ সালে যখন তিনি ঘোষণা করেন যে, বায়ু, সৌর, বা অন্য পুনঃনবানযোগ্য শক্তিগুলোই আগামী ১৫ বছরের মধ্যে বিশ্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে।

তিনি তার বার্ষিক বক্তৃতায় লিখেন, ‘আমরা বর্তমানে খুব বড় একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি এবং সম্ভবত আমাদের ধারণার চেয়েও বড় এই সমস্যাটি। আর তা হলো জ্বালানির স্বল্পতা। কিন্তু এটি আমাদের সামনে সুযোগ এনে দিয়েছে পুনঃনবায়নযোগ্য শক্তিগুলোর দিকে নজর দেয়ার।’

অনেক দরিদ্র দেশগুলোতে তিনি ভ্রমণ করেছেন যেখানে কোনো চলমান জল বা বিদ্যুৎ নেই। রাতে তারা তাদের বাড়িতে আলো দিতে পারে না, ব্যবসায় খোলা রাখতে বা অত্যাবশ্যক চিকিৎসা কেন্দ্র চালাতে পারে না।

‘যদি বিশ্ব সস্তা, পরিষ্কার শক্তির উৎস সন্ধান করতে পারে, তবে এটি জলবায়ু পরিবর্তন কমানোর চেয়েও আরো বেশি কিছু হবে। এটি লাখ লাখ দরিদ্র পরিবারের জীবনকে রূপান্তরিত করবে।’

অটোমেশনের ফলে অগণিত মানুষ কাজ হারাবে
গেটস বলেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যে সারা বিশ্বের গার্মেন্টস এবং কারখানাগুলো স্বয়ংক্রিয় রোবট দ্বারা চালিত হবে। ফলে অগণিত মানুষ তাদের কাজ হারাবে।

২০১৯ সালের মধ্যে পৃথিবী পোলিও মুক্ত হবে
২০১৬ সালের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে নতুন করে মাত্র ৩৭টি পোলিও আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে।

গেটস আশাবাদী যে, শ্বেতাঙ্গের পর দ্বিতীয় রোগ হিসেবে এই রোগটি পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যাবে।

২০১৩ সালে তিনি তার ব্লগে বার্ষিক বক্তৃতায় লিখেন, ‘বিশ্বব্যাপী পোলিও কমিউনিটি এখন একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে, যা পরবর্তী ছয় বছরে আমাদের পোলিও নির্মূলের কাজ শেষ করতে সাহায্য করবে।’

তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ মে ২০১৭/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়