ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বেতনের টাকায় বীজ বিতরণ

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৫, ৬ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেতনের টাকায় বীজ বিতরণ

করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও বসে নেই খুলনার কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান। নিজ উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন কৃষকদের। বেতনের টাকায় বিভিন্ন ফসলের বীজ কিনে বিনামূল্যে বিতরণ করছেন কৃষকদের মধ্যে। সংকটকালে তার এ ধরনের কার্যক্রম প্রশংসিত হচ্ছে কৃষকদের কাছে।

কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রহমান খুলনার রূপসা উপজেলার আলাইপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি বসতবাড়ির আঙিনাসহ পতিত প্রতি ইঞ্চি জমির ব্যবহার এবং করোনা পরবর্তী খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে স্ব-উদ্যোগেই শাক-সবজির বীজ বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন তিনি।

স্থানীয় কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরবর্তী সময়ে কৃষি ফসলের সংকট উত্তোরণের লক্ষে খুলনার রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসের আলাইপুর ব্লকের উদ্যোগে বসতবাড়ির আঙ্গিনাসহ পতিত জমিতে শাকসবজি চাষে সহায়তায় উদ্যোগ নেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান। তারই অংশ হিসেবে স্থানীয় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করছেন তিনি। করোনাভাইরাসের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইতোমধ্যেই তিনি এ ব্লকের আলাইপুর, পুটিমারি ও আনন্দনগর গ্রামের ১৫ জন কৃষক ও কৃষাণীর বাড়িতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করেছেন। বিতরণকৃত বীজের মধ্যে লালশাক, ডাটাশাক, পুঁইশাক, ঢেঁড়শ, গিমাকলমি ও উচ্ছে উল্লেখযোগ্য।

আবদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি ইঞ্চি জমির ব্যবহার এবং করোনা পরবর্তী খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিজ উদ্যোগেই আমি এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষকরা উৎসাহিত হয়ে এ ব্লকের প্রতিটি কৃষকের বসতবাড়িসহ পতিত জমি শাক-সবজি চাষের আওতায় আসবে। এতে সাধারণ কৃষকরা বাজার থেকে শাক-সবজি ক্রয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং বাড়তি সবজি বিক্রি করে নগদ অর্থও আয় করতে পারবে।’

সর্বোপরি তার এ উদ্যোগে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে বলেও মনে করেন তিনি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমানের এ কার্যক্রমকে ‘মডেল’ হিসেবে দেখছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান ফরিদ। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘উপজেলার ১৫টি ব্লকের মধ্যে একমাত্র তিনিই নিজ উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করছেন। যদিও অন্য ব্লকগুলোতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পতিত জমি চাষে উৎসাহ দিচ্ছেন, সচেতন করছেন। যাতে করোনা পরবর্তী সময়ে কৃষি খাদ্যের সংকট না হয়। কিন্তু কৃষকের হাতে সরাসরি বীজ দেওয়ায় চাষাবাদে তারা বেশি উৎসাহী হচ্ছে। এ কারণে অফিসিয়ালি অন্য ব্লকগুলোতেও বীজ বিতরণ করা হবে।’

ইতিমধ্যে বাগমারার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আর আর এন, আমদাবাদের ম্যাক্স সমবায় সমিতি ও রূপসার অনুশীলন মজার স্কুলেও নিজ উদ্যোগে বীজ বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুজ্জামান। এছাড়া এ ধরনের উদ্যোগে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান ১৯৮৪ সালে কৃষি বিভাগে যোগদান করেন। তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত কৃষি বিষয়ক কলাম লিখে থাকেন। দীর্ঘ চাকরি জীবনে তার বড় অর্জন ২০০৫ সালে জাতীয় কৃষি পুরস্কার প্রাপ্তি।


খুলনা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়