ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

বৈরাগীপুঞ্জির খাসিয়া পান

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২৩ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বৈরাগীপুঞ্জির খাসিয়া পান

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : খাসিয়া পান।গোটা সিলেট অঞ্চলেই এই পান জনপ্রিয়।তবে আয়ের অন্যতম উৎসসহ নানা কারণে খাসিয়া সম্প্রদায় এই পানকে তাদের প্রাণ বলে মনে করেন।

খাসিয়া পান স্বাদে একটু ঝাল। পাতার আকার অন্য পানের চেয়েও বড়। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বৈরাগীপুঞ্জিতে এ পান উৎপাদন হয়। এখানের উৎপাদিত পান সিলেট অঞ্চলের প্রবাসীরা বিদেশে থেকেও সংগ্রহ করেন।

বৈরাগীপুঞ্জিতে  খাসিয়া পানের ঐতিহ্য প্রায় অর্ধশতাব্দি কালের।  বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে লন্ডন, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে এ  পান ।

জানা যায়, ১৯৫০ সালে  চুনারুঘাট উপজেলার সাটিয়াজুরী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার ৩০০একর পাহাড়ি ভূমির ওপর বৈরাগীপুঞ্জি গড়ে উঠে। বর্তমানে এ পুঞ্জিতে প্রায় ৬৫টি পরিবার বসবাস করছে। তাদের সদস্যসংখ্যা হবে প্রায় ৪০০। এখানের সবাই কমবেশি এই পান চাষে জড়িত। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা দিনভর গাছ থেকে পান আহরণ করেন। আর মহিলারা সেগুলো কুচি করেন। ১৪৬টি পানে এক কান্তা বা এক কুচি। প্রতিদিন এ পুঞ্জি থেকে প্রায় ৮/১০ হাজার কান্তা পান বিক্রি করা হয়।

পাইকাররা পুঞ্জি থেকে এসব পান কিনে নিয়ে সিলেট অঞ্চলের খোলাবাজারে বিক্রি করেন। অধিকাংশ পাইকার ওই পান ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করেন। খাসিয়া পানের বেশি চাহিদা লন্ডন প্রবাসী সিলেটিদের কাছে।

পুঞ্জির প্রধান, স্থানীয়রা যাকে মন্ত্রী বলেন। এখানের মন্ত্রী সাদেক মিয়া জানান, খাসিয়া পান পাতা একটু ভারি হওয়ায় এবং সহজেই পচন হয় না বলে এই পান দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে। কোনো কেমিক্যাল ছাড়াই নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় এই পান রাখলে তিন মাস পর্যন্ত নষ্ট হয় না।

তিনি  জানান, তার পুঞ্জিতে পানের পাশাপাশি সুপারি, আনারস, লেবু, কলা, পেয়ারা ও পেঁপের আবাদ হয়। পান চাষে সমস্যাও রয়েছে অনেক। বিশেষ করে খরা মৌসুমে সমস্যা দেখা দেয় বেশি। এসময় দুটি রোগ দেখা দেয়। একটি হলো উদ্ভ্রাম। এই রোগ হলে পান পাতা লাল হয়ে পড়ে যায়। আরেকটি হলো পচন রোগ। এই রোগ হলে পুরো গাছ তুলে ফেলতে হয়।

পান চাষিরা জানান, পান চাষ লাভজনক হলেও এখানে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। বিশেষ করে রোগবালাই হলে অনেক গাছ নষ্ট হয়ে যায়। তাই কৃষি বিভাগ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা কামনা করেন তারা।

 



তারা আরও জানান, আষাঢ় মাসে পান গাছের চারা লাগানো হয়। কলমের মাধ্যমে এই চারা উৎপাদন করা হয়। এই চারা বিক্রি হয় না। তবে বিনামূল্যে একই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিনিময় হয়। সুপারি অথবা অন্য কোনো গাছের গোড়ায় এই পান গাছ লাগানো হয়। সেই গাছের আশ্রয় নিয়ে পান গাছ বেড়ে ওঠে। সাধারণত ১০-১২ বছর এই গাছ ফলন দেয়।

পান চাষের ব্যাপারে হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান জানান, জেলার বাহুবলের আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জি ও চুনারুঘাটের বৈরাগীপুঞ্জির পাহাড়ে খাসিয়া এবং সমতলে মিষ্টি পানের আবাদ হয়েছে ৫৯৮ একর জমিতে।

সিলেটের জৈন্তাপুর, জাফলং, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, বড়লেখা, কুলাউড়া, রাজনগর, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এবং হবিগঞ্জের বাহুবল ও চুনারুঘাট উপজেলায় খাসিয়াদের বসবাস। বাংলাদেশে প্রায় ৩৫ হাজার খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে।



রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/২৩ মার্চ ২০১৭/ মামুন চৌধুরী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়