ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বোরো ধান: আগাম বন্যাই চিন্তার বিষয়

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৪, ২১ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বোরো ধান: আগাম বন্যাই চিন্তার বিষয়

হাওরাঞ্চলের সাত জেলাসহ দেশে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে দিনরাত পরিশ্রম করছে কৃষক। তবে আগাম বন্যার শঙ্কায় ভুগছে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হাওরে পাকা ধানের এখন প্রধান প্রতিবন্ধকতা পোকামাকর নয়, আগাম বন্যা। হাওরে আগাম বন্যা হলে নিচু এলকার ধান ক্ষেত ডুবে যেতে পারে। তাই চলতি মাসের মধ্যে বোরো ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তানে পঙ্গপালে ফসল খেয়ে ফেললেও এ দেশে পঙ্গপাল এখনও আসেনি। তাই বোরো ধানের কোন ক্ষতি হয়নি। পাশাপাশি এবছর আসার সম্ভাবনা নেই। তবে কিছু এলাকায় পাকা বোরো ধানে মাঝরা পোকা আক্রমন করলে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে দমন হয়েছে। 

সূত্র আরো জানায়, এবছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি ০৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। এ লক্ষ্যমাত্রার ২০ ভাগের যোগান দেয় হাওরাঞ্চলের বোরো ধান। আগাম বন্যায় বোরো ফসল নষ্ট হলে দেশে খাদ্যের সংকট সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই চলতি মাসের মধ্যে বোরো ধান কাটার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকের বিশেষ পরিবহনে যাতায়াত ব্যবস্থা, কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহসহ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

এছাড়াও হাওড়ের ২৯৪ টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার, ৪০৬ টি রিপার ধান কাটার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাওরের বোরো ধান কাটার জন্য কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার প্রেরণ করায় পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি জেলার কর্মহীন বিভিন্ন পেশার মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ধান কাটায় উৎসাহিত করে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে আজ (২১ এপ্রিল পর্যন্ত) হাওড় এলাকায় ২ লাখ ৬১ হাজার শ্রমিক ধান কাটার কাজ করছে। আগাম বন্যা বা অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এমাসের মধ্যে হাওরের পাকা ধান কৃষকেরা সুষ্ঠুভাবে ধান ঘরে তুলতে পারবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, হাওরাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই সাতটি জেলায় এবছর শুধু হাওরে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে (২১ এপ্রিল) পর্যন্ত হাওরের  ৯৪,৭৩৭ হেক্টর (২১.২৭শতাংশ) জমির ধান কাটা হয়েছে। নেত্রকোনা জেলার হাওরে ৪০ হাজার  ৮৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। ধান কাটার জন্য ৬২ টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও ২৫টি রিপার ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে ১১ হাজার ৪৫০ জন শ্রমিক ধান কর্তনের কাজে নিয়োজিত আছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক পাঠানো হয়েছে। নেত্রকোনায় এর মধ্যে (২১ এপ্রিল) পর্যন্ত ১২ হাজার ৬২০ হেক্টর (প্রায় ৩১ শতাংশ) জমির ধান কাটা হয়েছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউটের এক কর্মকর্তা বলেন, এবছর আগাম বন্যাসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই চলতি মাসের মধ্যে সব পাকা ধান কেটে ফেলতে হবে। পাকা ধান বন্যার আগে উঠাতে না পারলে চরম মূল্য দিতে হবে। এছাড়া এবছর হাওরের অনেক জায়গা থেকে পানি দেরিতে নামায় ধান রোপনও হয়েছে বেশ কদিন পরে। সেজন্য ধান অনেক জায়গায় এখনও পাকেনি। আগাম বন্যা হলে দেরিতে রোপন করা ধান ঘরে তোলা যাবেনা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, পার্শবর্তী দুটি দেশে পঙ্গপালে ফসল খেয়ে ফেললেও বাংলাদেশে আসেনি। তাই বোরো ধান আক্রমন করবে কিভাবে? পাকা বোরো ধান দেশের কয়েকটি এলাকায় মাজরা পোকায় আক্রমন করেছিল। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ওষুধ ছিটিয়ে এ পোকা দমন করা হয়েছে। বোরো ধানের প্রধান প্রতিপক্ষ বন্যা। আগাম বন্যা। বন্যা না হলে বোরো ধানের কোন ক্ষতি হবে না।

তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বসে নেই। তারা বিভিন্ন জেলার শ্রমিকদের ধান কাটতে নিতে যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন বাস এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য কৃষি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বোরো ধান কাটাসহ সার্বিক বিষয়ে দেখভাল করতে একটি সেল গঠন করা হয়েছে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যথাসময়ে ধান কাটা না গেলে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে। ২০১৭ হাওরে বন্যায় ক্ষতি হয়েছিল। তাই যেকোন ভাবে দ্রুত পাকা বোরো ধান কাটতে হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, এ দেশে পঙ্গপালের আক্রমণ সম্ভাবনা কম। আমাদের ভয়ের কিছু নেই। আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। ধান কাটতে বিভিন্ন জেলা থেকে হাওরে ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা সহায়তা করছে।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বোরো ধান লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ ভাগের যোগান দেয় হাওরাঞ্চলের বোরো ধান। এই ফসল ফলাতে হাওরের কৃষকেরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম ও বিনিয়োগ করেছে। এ ফসল যদি নষ্ট হয়, সময়মতো ঘরে না তোলা যায়, তাহলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি দেশে খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হতে পারে। কৃষি মন্ত্রণালয় এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।


ঢাকা/আসাদ/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়