ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ব্যাগে হৃদপিণ্ড নিয়ে ঘোরেন তিনি

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪২, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্যাগে হৃদপিণ্ড নিয়ে ঘোরেন তিনি

ব্যাগে হৃদপিণ্ড নিয়ে দিব্যি ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছেন সেলওয়া হুসাইন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কোনো জাদুবাস্তবতা নয়, নয় কোনো কল্পকাহিনি। সত্যি, সত্যি, তিন সত্যি! শরীরে নয়, এই নারীর হৃদপিণ্ড থাকে তার ব্যাগে।

অবিশ্বাস্য হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের অবদানে ব্যাগে হৃদপিণ্ড নিয়ে দিব্যি ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছেন যুক্তরাজ্যের নাগরিক সেলওয়া হুসাইন। তিনিই হলেন দেশটির প্রথম নারী, যার দেহের বাইরে একটি কৃত্রিম হৃদপিণ্ড লাগানো হয়েছে এবং তার বদৌলতে তিনি চলাফেরা করতে পারছেন।

শখের বশে নয়, সংকটে পড়েই কৃত্রিম হৃদপিণ্ড নিয়ে চলতে হচ্ছে সেলওয়া হুসাইনকে। তার হৃদপিণ্ডে সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসের শরণাপন্ন হন তিনি। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে শরীর সচল রাখতে একটি কৃত্রিম হৃদপিণ্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়, যেটি শরীরের বাইরে একটি ব্যাগে রাখেন তিনি। যতদিন পর্যন্ত কেউ তাকে একটি হৃদপিণ্ড দান না করছেন, ততদিন কৃত্রিম হৃদপিণ্ড বয়ে বেড়াতে হবে তাকে।

ডেইলি মেইলকে সেলওয়া হুসাইন বলেছেন, ‘আমার মেয়ের বয়স তখন ছয় বছর। একদিন সকালে বুকে মারাত্মক ব্যথা অনুভব করি। শ্বাসকষ্টও ছিল। আমি বুঝতে পারি, ভয়াবহ কিছু একটা হয়েছে।’ কেন তাকে এই কৃত্রিম হৃদপিণ্ড বহন করতে হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার পর চিকিৎসরা বললেন, আমার হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করতে হবে। তড়িঘড়ি করে হৃদপিণ্ডদাতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু আমি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন তারা আমাকে একটি কৃত্রিম হৃদপিণ্ড লাগিয়ে দিতে বাধ্য হন।’

বয়ে বেড়ানোর মতো করে লাগিয়ে দেওয়া হৃদপিণ্ডটি সেলওয়ার শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে। নিঃসন্দেহে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অমূল্য অবদান এটি।

সেলওয়ার ব্যাগে থাকা হৃদপিণ্ড যেভাবে কাজ করে
কৃত্রিম হৃদপিণ্ডে বেশ কিছু টিউব আছে।  কিছু টিউব দিয়ে শরীরের রক্ত ব্যাগে থাকা কৃত্রিম হৃদপিণ্ডে আসে এবং পরিশোধিত হয়ে অন্য টিউবগুলো দিয়ে শরীরের ভেতরে বসানো আরেকটি কৃত্রিম হৃদপিণ্ডে পৌঁছায়। পরিশোধিত রক্ত পাম্প করে ভেতরের হৃদপিণ্ডটি সত্যিকারের হৃদপিণ্ডের মতো বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সঞ্চালন করে।

যুক্তরাজ্যের অনেক মানুষ হৃদপিণ্ডের রোগে ভুগছেন। তাদের মধ্যে কারো কারো হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন জরুরি। কিন্তু সময়মতো দাতা পাওয়া কঠিন। ২০১৬-২০১৭ এই দুই বছরে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ৪০ জন রোগী মারা গেছে।

এদিকে, হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পর সেলওয়ার চিন্তাভাবনায় অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। জীবনের নানাবিধ চাহিদা তার কাছে এখন অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বেঁচে থাকাই তার কাছে বড় পাওয়া। ব্যাগে হৃদপিণ্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সেলওয়া হুসাইনের এখনকার ভাবনা অনেক সরল। তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যু শয্যায় আমি অনেক কিছুই উপলব্ধি করতে পেরেছি। এর মধ্যে একটি হলো- যেসব বিষয় নিয়ে আমরা চিন্তা করি, এই যেমন বয়লার সমস্যা, গাড়ি বা মানুষসম্পর্কিত সমস্যা; এসব আসলে কিছুই না। জীবনকে আমি এখন আরো ভালো করে উপলব্ধি করতে শিখেছি।’

৩৬ বছর বয়সি সেলওয়ার শরীরের বাইরে হৃদপিণ্ড লাগাতে খরচ হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আমেরিকার একটি কোম্পানি তৈরি করেছে এটি। ছয় ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এটি লাগানো হয়।

সেলওয়ার আগে যুক্তরাজ্যে এক পুরুষের শরীরের বাইরে কৃত্রিম হৃদপিণ্ড লাগানো হয়। দুই বছর পর তিনি একজন দাতা পান এবং সত্যিকারের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পর তিনি এখনো বেঁচে আছেন। সেলওয়ার প্রত্যাশা, হয়তো তিনিও একজন দাতা পাবেন এবং স্বাভাবিক আয়ু পাবেন।

তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জানুয়ারি ২০১৮/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়