ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ব্রিটেনে থাকতে সাইফুলের ১৬ বছরের লড়াই

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৭, ১৩ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্রিটেনে থাকতে সাইফুলের ১৬ বছরের লড়াই

নির্দোষ হয়েও কর্তৃপক্ষের ভুলে যৌন অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্য থেকে বহিষ্কৃত হবার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাতে হচ্ছে এক বাংলাদেশিকে।

২০০৩ সালের জানুয়ারিতে সাইফুল ইসলাম ব্রিটেনে গিয়েছিলেন এক রেস্তোরাঁয় কাজ করতে। তিনি থাকেন কার্ডিফে, বয়স ৪৪। কিন্তু সরকারি দপ্তরে থাকা তার কাগজপত্র কোনোভাবে মিশে গিয়েছিল অন্য তিন লোকের সাথে। এ কারণে কোনো দোষ না করেও সাইফুল ফেঁসে যান এক অপরাধের দায়ে।

ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই এ ভুলের জন্য সাইফুলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে। কিন্তু এর পরও তাকে ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে থাকার অধিকার দেয়া হচ্ছে না। সাইফুল যুক্তরাজ্যে থাকার জন্য ১৬ বছর ধরে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন।

তার এ সমস্যার শুরু ২০০৫ সালে। তার তখনকার কর্মস্থল ছিল যে রেস্তোরাঁ- সেখানকার পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

এরপরই পুলিশ এবং হোম অফিস (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়)  ব্যাপারটি নিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে বছরই তার ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ কমিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তাকে কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি।

অভিবাসীদের অধিকার সংক্রান্ত নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী ফিজা কুরেশি বলেন, সাইফুল যদি ১৬ বছর ধরে মামলা লড়ে না যেতেন, তাহলে তার জানাই হতো না যে হোম অফিস তার কাগজপত্র গুলিয়ে ফেলেছে এবং তাকে ভুলভাবে একজন অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ সাইফুল যেভাবে তার নিয়োগদাতার শোষণ সম্পর্কে খবর দিয়েছে তার প্রশংসা করতেও ব্যর্থ হয়েছে। তা না করে উল্টো তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়েছে এবং তাকে বহিষ্কার করতে চাইছে - যদিও সে সাহসী ও নির্দোষ।

সাইফুল এক পর্যায়ে তিনি তথ্য কমিশনারের মাধ্যমে তার ফাইল দেখার সুযোগ পান এবং তাতে ভুল ধরা পড়ে। ২০১৯ সালে তার কাছে এজন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়।

তিনি বলছেন, হোম অফিস আমাকে মানুষ বলে মনে করেনি। তারা এমন আচরণ করেছে যেন আমি একজন অপরাধী।

‘আমি এজন্য অনেকগুলো বছর হারিয়েছি, আমার স্বাস্থ্য ও অর্থ হারিয়েছি। এজন্য মানসিক বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়েছি।’

এ সংক্রান্ত এক বিচারবিভাগীয় পুনর্বিবেচনার রায়ে বলা হয়, ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য সাইফুলের আবেদন প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে ভিত্তি ছিল ২০০৮ সালের একটি প্রত্যাখ্যাত আবেদন। কারণ সে সময় তার কোনো ওয়ার্ক পারমিট ছিল না। হোম অফিসের ভুলের কোনো প্রভাব ফেলেনি।

কিন্তু সাইফুল বলছেন, ২০০৮ সালে তার কোনো ওয়ার্ক পারমিট না থাকার কয়েকটি কারণ ছিল। একটি হচ্ছে তাকে ভুলভাবে অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা। তাছাড়া তার ফাইলের কিছু অংশ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে এবং অন্য একটি মামলায় তা আদালতে উত্থাপন করা হয়নি।

তিনি যে আইনসঙ্গতভাবে ব্রিটেনে প্রবেশ করেছিলেন- তার প্রমাণ হিসেবে তার পাসপোর্টের প্রাসঙ্গিক পৃষ্ঠাগুলোও আদালতকে দেয়া হয়নি।

বিচারপতি জ্যাকসন রুলিং দেন যে- সাইফুলের আবেদনের ক্ষেত্রে অতীতে বেশকিছু ভুল ও অবিচার করা হয়েছে। কিন্তু ‘এগুলোই তার বর্তমান অবস্থার কারণ’ বলে সাইফুল যে দাবি করছেন তা দলিলপত্রে প্রমাণ হয় না। রুলিংএ আরো বলা হয়, ‘এমন কোনো নিশ্চয়তাও নেই যে তাকে কোনো একটি বিশেষ পদে নিযুক্ত রাখা এখনো প্রয়োজনীয়।’

সাইফুল বলছেন, তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের পরিকল্পনা করছেন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ১৮টি মামলা এবং হোম অফিসের সাথে বিপুল পরিমাণ চিঠিপত্র বিনিময় হয়েছে।

হোম অফিস বলছে, তারা কোনো চলমান আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করবে না তবে তারা এটা নিশ্চিত করেছে যে সাইফুলের বিবরণের সাথে অন্য তিনজন লোকের বিবরণ ‘ভুলক্রমে’ যুক্ত হয়ে গেছে।

হোম অফিস আরো বলেছে যে, ব্রিটেনে বসবাসের প্রতিটি আবেদনই স্বতন্ত্রভাবে অভিবাসন আইন অনুযায়ী বিবেচনা করা হয়, এবং কারো এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি না থাকলে এটাই আশা করা হয় তিনি স্বেচ্ছায় চলে যাবেন। তারা তা না করলে তাদের এদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হবে।

তথ‌্যসূত্র : বিবিসি বাংলা


ঢাকা/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়