ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

সর্বগ্রাসী পদ্মা একের পর এক গিলে খাচ্ছে জমি, সড়ক, ঘরবাড়ি, বাজার, স্কুল, হাসপাতাল। চোখের সামনেই  বিলীন হয়ে যাচ্ছে সবকিছু। সর্বস্বান্ত, নি:স্ব হয়ে যাচ্ছে মানুষ। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মানুষ নদী ভাঙনের কারণে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, পদ্মার তীব্র ভাঙনে নড়িয়া উপজেলায় তিন/চার তলা ভবনসহ শত শত ঘরবাড়ি ও বড় বড় স্থাপনা নদীগর্ভে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। ফলে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছে পরিবার। গত দেড় মাসে পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় অন্তত সাড়ে তিন হাজার পরিবার বাড়িঘর ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।

ভয়াবহ ভাঙনে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের রাস্তা, কমপ্লেক্সের প্রাচীর এবং মসজিদও উত্তাল পদ্মার পেটে চলে গেছে। যে কোনো মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যাবে কমপ্লেক্সের পুরনো ভবন। এছাড়া গত সপ্তাহে ৩৫০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শতাধিক বাড়িঘরসহ বড় বড় স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মারাত্মক ভাঙনের মুখে মুলফৎগঞ্জ বাজারের আট শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। পদ্মাতীরের মানুষের রাত কাটছে নির্ঘুম।

এছাড়া টাঙ্গাইলের ফতেপুর, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, রংপুরের কাউনিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা নদীভাঙনে বিপর্যস্ত। কুষ্টিয়ায় হুমকির মুখে শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়িসহ দুটি ইউনিয়ন। পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়ন। গত কয়েক দিনের অব্যাহত ভাঙনে এ ইউনিয়নের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি এখন নদী গর্ভে। পদ্মাপারের শত শত পরিবার ফসলসহ জমি ও বসতভিটা হারিয়ে এখন নিঃস্ব। দিশাহারা কৃষকরা।

লোকজনের অভিযোগ, বছরের পর বছর নদী শাসন বা খনন না করায় পদ্মা নদীর ভাঙন এবার অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পদ্মা সরতে সরতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার দিকে এগোতে থাকায় বিভিন্ন সময় এলাকাবাসী সরকারের কাছে আবেদন-নিবেদনসহ মিছিল-বিক্ষোভ করে আসছিল। এ বছরের জানুয়ারিতে হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাসও হয়। কিন্তু কাজ শুরুর আগেই পদ্মার ভাঙনে এলাকাবাসী সব হারিয়ে নি:স্ব।

শুধু পদ্মা নয়, মেঘনা, যমুনাসহ অন্যান্য নদীও কম-বেশি জনপদ গ্রাস করছে। সরকারের তরফে ভাঙন রোধে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সময় মতো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তার খেসারত দিতে হয় নদী পাড়ের মানুষগুলোকে। নদীশাসন বা ব্যবস্থাপনায় কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভাঙন ও ক্ষয়ক্ষতি ক্রমাগত বাড়তে থাকবে। দেশের নদীগুলোর ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রয়োজন। কিন্তু সেরকম কোনো ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এ ব্যাপারে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ভাঙনরোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি ঘরবাড়ি, জমি হারা মানুষের পুনর্বাসন এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা প্রদানে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়