ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভাঙ্গনের মুখে এলডিপি, চলছে নতুন কিছুর চেষ্টা!

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৬, ১৫ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাঙ্গনের মুখে এলডিপি, চলছে নতুন কিছুর চেষ্টা!

ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ।

অলি আহমদের সঙ্গে রাজনীতি করতে চান না- এমন কয়েকজন নতুন চিন্তা নিয়ে বসবেন আগামীকাল। সেখান থেকে আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত। দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, সিদ্ধান্ত আসতে পারে-কর্নেল অলিকে ছাড়া এলডিপি পুনর্গঠন বা নতুন কিছুর। তবে সিন্ধান্ত যাই আসুক, তা হবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জন্য ইতিবাচক।

সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি কারণে ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে দলটি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাতীয়তাবাদী দলের বিপক্ষে কর্নেল অলির বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক বক্তব্য, সম্মেলন ছাড়া ত্যাগীদের বাইরে রেখে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা ও কর্নেল অলির স্বেচ্ছাচারিতা, অগণতান্ত্রিক আচরণ ও আত্মঅহংকার।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি গঠনের অন‌্যতম উদ্যোক্তা শাহাদৎ হোসেন সেলিম বলেন, ‘গত তিন মাস আগে থেকে কর্নেল অলির সঙ্গে রাজনৈতিক দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মুলত জাতীয়তাবাদী ঘরানার। আর তিনি জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে বেশ কিছুদিন ধরে অবস্থান নিয়েছেন। জাতীয়তাবাদী দলের বিপক্ষে কথা বলছেন। বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। এগুলো আমি মানতে পারি নি। আমি এর প্রতিবাদ করেছি। তার সাথে আর রাজনীতি করা সম্ভব না। ’

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছেন, আগামীকালের বৈঠকে কর্নেল অলি আহমেদকে অব্যহতি দিয়ে এলডিপি পুনর্গঠন করার মত সিদ্ধান্ত বা অন্য কোনো সিদ্ধান্তও আসতে পারে।

এই সূত্রটি জানায়, এই মুহুর্তে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচয় দেওয়ার মত কেউই অলি আহমদের সঙ্গে নেই। তার অগনতান্ত্রিক আচরণ ও আত্মঅহংকার বা অন্য বিভিন্ন কারণে যারা এলডিপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রীয় ছিলেন বা যারা বেরিয়ে গিয়েছিলেন, তারা একত্রিত হয়েছেন। তারা চাচ্ছেন কর্নেল অলিকে বাদ দিয়ে কিছু করতে।

এর আগে গত ২৬ জুন এলডিপি ছেড়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল করিম আব্বাসী, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গণি। তারাও একত্রিত হয়েছেন শাহাদৎ হোসেন সেলিমের সাথে।

কিছুদিন আগে সম্মেলন ছাড়া এলডিপি পুনর্গঠন করেন কর্নেল অলি আহমদ। সেখানে বাদ দেওয়া হয়েছে আগের কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিমকে। দলের সবার কাছেই যার অন্যরকম অবস্থান। তাকে বাদ রেখে কমিটি করার পর নতুন আলোচনা শুরু হয়।

নতুন ঘোষিত কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন- কর্নেল অলি, মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ, ১৭ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে ৪ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ২১জন ভাইস প্রেসিডেন্টের মধ্যে ১১ জনের, ২১ সদস্যের উপদেষ্টার মধ্যে ১০ জনের, যুগ্ম মহাসচিব পদে ৫ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যান্য সম্পাদকীয় পদগুলোর মধ্যেও বেশ কিছু পদ ঘোষণা করা হয়নি। কমিটিতে ৭৫ জনকে নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে।

শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরে কর্নেল অলি মুক্তি মঞ্চ গঠন করেন। কিন্ত মুক্তি মঞ্চের উদ্দেশ্য আমাদের কাছে পরিস্কার না। আমরা ভেবেছিলাম, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য তিনি এই মুক্তি মঞ্চ করেছেন। কিন্তু পরে দেখলাম, সেখান থেকে বিএনপির বিরুদ্ধেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আবার তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে জামায়াতের পক্ষ নিচ্ছেন। তার উদ্দেশ্য আমাদের কাছে ভালো বলে মনে হচ্ছে না। যে কারণে তাকে ছাড়া কিছু করার চিন্তা করছি।’

একটি সূত্রে জানা গেছে বিভিন্ন কারণে এলডিপিতে কর্নেল অলি একপ্রকার কোনঠাসা হয়ে আছেন। এখন যে অবস্তা তাতে দলটির অস্তিত্ব শূন্যের কোঠায় বললেই চলে। বিএনপি থেকে আসা ৩২ এমপি-মন্ত্রীর দুই একজন ছাড়া কেউই নেই উনার সাথে। ’

এ সকল বিষয়ে কথা বলা চেষ্টা করেও অলি আহমদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয় নি।

২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ ও অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বে এলডিপির আত্মপ্রকাশ ঘটে। তাদের সঙ্গে জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী-এমপিও ছিলেন। এলডিপি গঠনের আগে কর্নেল অলি বিএনপির স্থায়ী কমিটির তৎকালীন সদস্য ছিলেন। এলডিপি গঠনের দিনই তিনি পদত্যাগ করেন।

আর অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন জোট সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির আত্মপ্রকাশের পর বেশি দিন এই দুই নেতা একসাথে চলতে পারেন নি। মতবিরোধ দেখা দিলে দুজনে ভিন্ন পথে চলতে শুরু করেন।

২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত মহাজোটের সাথে থাকা এলডিপি দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে মহাজোট ছাড়ে। একক ভাবে নির্বাচন করে। ৩৮ আসনে প্রার্থী দেয়। তারমধ্যে জয় পায় মাত্র একটি আসনে। ২০১২ সালে এলডিপি ভেড়ে বিএনপির ঘাটে। এরপর বিএনপির সাথে দশম জাতীয় নির্বাচন বয়কট করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫ আসনের চারটিতে ধানের শীষ প্রতীকে লড়ে এলডিপির প্রার্থীরা।


ঢাকা/সাওন/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়