ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ভালোবাসার আরেকটি সত্যি গল্প

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভালোবাসার আরেকটি সত্যি গল্প

কেট ও চন্দন

শাহ মতিন টিপু : ভ্যালেন্টাইনস ডে। ভালোবাসার দিন আজ। এইদিনে সত্যিকারের আরেকটি ভালোবাসার গল্প শুনুন।

এই ভালোবাসার মাধ্যমটি ফেসবুক।ফেসবুক থেকে ধীরে ধীরে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে গা‌ন এবং অন্যান্য তথ্য আদান-প্রদানও শুরু হয়ে যায়। তা থেকে ভিডিও-কলিং।আর এভাবে চলতে চলতেই প্রোপোজ করে বসেন চন্দন। আর সেখান থেকেই একতারে বাঁধা পড়ে দুই মেরুর দুটি জীবন।

চন্দন পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরের বাঙালি ছেলে।চন্দন রায় ডুবে ছিলেন গানবাজনা, সিনেমা তৈরি এবং বৌদ্ধধর্ম নিয়ে পড়াশোনায়। আর মেয়েটি ব্রাজিলের সাওপাওলো শহরের। নাম কেট রেজিনা সিলভা ইয়ামাগুটি।বয়স ত্রিশ।

কেট প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। আগ্রহ রয়েছে ইতিহাসেও। মাতৃভাষা পর্তুগিজ।বাবা রজার কিয়োজি ইয়ামাগুটি অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংককর্মী। মা রোজ নার্স। দাদা আছেন। আর রয়েছে পোষা কুকুর-বিড়াল।

যে চন্দন বিয়ে না করার জেদ ধরেছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যাজিকে শ্রীরামপুরের বছর চল্লিশের চন্দন এখন কেট রেজিনার স্বামী।

চন্দন বছর পাঁচেক আগে বৌদ্ধধর্মের চর্চা শুরু করেন। সেই সূত্রেই মাস ছয়েক আগে ফেসবুকে কেটের সঙ্গে আলাপ। তা ছাড়া, লাতিন আমেরিকার সংস্কৃতির প্রতিও চন্দনের ঝোঁক রয়েছে। পর্তুগিজে একটি আর স্প্যানিশ ভাষায় পাঁচটি গানও গাইতে পারেন তিনি।

এই ফাগুনেই এক হয়ে গেল চার হাত। মিলিয়ে দিল সোশ্যাল মিডিয়া। ভৌগোলিক অবস্থান, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, ভাষার দূরত্ব—সব পেছনে ফেলে প্রেমের টানে কেটই উড়ে এলেন চন্দনের কাছে।

চন্দন-ঘরণী কেট এখন শাঁখা-সিঁদুর, শাড়ি পরছেন। রুটি বেলছেন। চা করছেন। বাংলা বলছেন— ‘খাব’, ‘ভাত’, ‘মুড়ি’, ‘ধন্যবাদ’। শ্বশুরবাড়িতে মুগ্ধ হয়ে আছেন।  চন্দনের পরিবারও ব্রাজিলকন্যাকে ভালোবাসছেন খুব। কেট তাদের কাছে হয়ে গেছেন কেকা ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় চন্দনের প্রোপোজ তিনবার ফিরিয়ে দিয়েছিল কেট। রাজি হচ্ছিলেন না। শেষে যখন রাজি হন সব শুনে আপত্তি তুলেছিলেন কেটের মা। পরে রাজি হন। অল্প দিনের পরিচয়ে কেট শ্রীরামপুরের যুবকটিকে এতটাই ভালোবেসে ফেলেন যে একাই চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন।

২৫ ডিসেম্বর বিমানে চড়েন। ৩০ ঘণ্টার যাত্রা শেষে দমদম বিমানবন্দরে দেখা হতেই জড়িয়ে ধরেন চন্দনকে। চন্দনের বন্ধুরা কেটের ছবি নিয়ে ঘুরছিলেন। চন্দন বলেন, ‘রানওয়ে ফাঁকা না থাকায় বিমানটা আকাশে চক্কর কাটছিল। যত সময় গড়াচ্ছিল, টেনশন বাড়ছিল। ওকে দেখে চোখের জল আটকাতে পারিনি।’

চন্দনের বাড়িতে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন কেট। সদর দরজা থেকে ঘর পর্যন্ত ফুল বিছানো হয়েছিল। চন্দনের চার পিসি-পিসেমশাই, দিদি জামাইবাবু সকলেই বলে উঠেছিলেন, ‘ব্রেভ গার্ল।’

ভাষার দূরত্ব সত্ত্বেও কেট এখানে এসে দিব্যি মানিয়ে নিয়েছেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি চন্দনের সঙ্গে কেটের রেজিস্ট্রি-বিয়ে হয়। ছোট্ট অনুষ্ঠা‌ন হয়। লাল শাড়ি আর গয়নায় সেজে কেট বলেন, ‘এই পোশাক পরে দুর্দান্ত অনুভূতি হচ্ছে।’

ব্রাজিলের বাড়িতে বসে কেটের পরিজনেরা বিয়ের অনুষ্ঠান দেখেছেন। আনন্দে তাদের চোখের পানি গড়িয়েছে।

কেটের ডাকনাম কিকা। চন্দনের মা রেখাদেবী ডাকেন‌ কেকা বলে। চন্দন বেরিয়ে গেলে রেখাদেবীর সঙ্গেই থাকেন কেট। রেখাদেবীর কথায়, ‘আমি ওর কথা বুঝি না। ও আমার কথা বুঝতে পারে না। দুজনেই আকার-ইঙ্গিতে কথা বলি। অসুবিধা হয় না। নিজের মেয়ের মতোই হয়ে গিয়েছে এই ক’দিনে।’

পেলে-গ্যারিঞ্চার দেশে জন্মেও কেট অবশ্য ফুটবল ভালোবাসেন না। চন্দন বলেন, ‘ও গান নিয়ে থাকতে ভালোবাসে। ও আমার জীবনে না এলে সংসারের মানেটাই জানতাম না। সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আমার জন্য একটা মেয়ে এতটা দূর চলে এল। এ তো রূপকথা!’

তথ্যসূত্র : ভারতীয় মিডিয়া



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/টিপু/এএন

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়