ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে সফল এক যুবকের গল্প

ফয়সল বিন ইসলাম নয়ন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ৩ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে সফল এক যুবকের গল্প

ভোলা সংবাদদাতা: নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন দ্বীপজেলা ভোলার যুবক মো: জাহিদুল ইসলাম জাহিদ।

ভোলার ভেদুরিয়া ইউনিয়ন সংলগ্ন তেতুলিয়া নদীতে ভাসমান খাঁচায় নিজ উদ্যোগে মাছের চাষ শুরু করেন জাহিদ।

প্রথম দিকে পুকুর ও ঘেরে মাছ চাষ করলেও তিন বছর হলো নদীতে নেটের (জাল) সাহায্যে তৈরি করা খাঁচায় বিভিন্ন ধরনের মাছ পালন করছেন।

কঠোর পরিশ্রম ও মৎস্য অধিদপ্তরের পরামর্শে আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছেন শিক্ষিত এই যুবক। বর্তমানে মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় তার। কোন মাসে এর চেয়ে বেশি লাভ থাকে।

অর্থনীতিতে অনার্স সম্পন্ন করা জাহিদ চাকরির জন্য বসে না থেকে নিয়েছেন স্বাবলম্বীতার পথ। তাকে দেখে এখন অনেকেই খাঁচায় মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বেকারত্ব ঘোঁচাতে এলাকার যুবকরা নদী পাড়ে নেট দিয়ে ছোট ছোট মাছের প্রকল্প গড়ে তুলছেন। খুব অল্প সময়ে প্রাকৃতিক উপায়ে বিক্রির উপযোগী হয় এসব মাছ। এর স্বাদও ভাল, বাজারেও চাহিদা বেশ।

সরেজমিনে ভেদুরিয়ার ৩নং ওয়ার্ডের শেরেবাংলা বাজার সংলগ্ন তেতুলিয়া নদীর পাড়ে জাহিদের মাছের খামারে গিয়ে দেখা যায়, ১৫টি খাচাঁয় তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, মিরর কার্প (লাল মাছ) মাছ চাষ করছেন। খাঁচার চারপাশে লোহার পাইপ, বাঁশ ও ড্রাম দিয়ে শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ১০ ফুট বাই ২০ ফুটের খাঁচাগুলোর গভীর রয়েছে ৮ ফুট। প্রতিটি খাঁচায় ২ হাজার করে মোট ৩০ হাজার মাছ রয়েছে। সার্বক্ষনিক থাকা ও মাছের খাবার, নেট ইত্যাদি রাখার জন্য নদী পাড়ে একটি ঘর তৈরি করেছেন। জাহিদকে দেখা যায় নৌকায় করে মাছের খাবার দিচ্ছেন।

জাহিদ বলেন, ‘সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে বেড়ে ওঠা এসব মাছের রোগ-বালাই হয়না। তাই কোন মেডিসিন প্রয়োগ নেই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিক্রি করা যায়। পুকুর বা ঘেরে একটি তেলাপিয়া মাছ এক কেজি হতে সময় নেয় ৬ থেকে ৭ মাস, আর নদীতে খাঁচায় তেলাপিয়া কেজি হয় ৩ থেকে ৪ মাসে। প্রতি ৩ মাস পর পর মাছ বিক্রি করা যায়।’

জাহিদ শোনান জীবনের প্রথম দিকের গল্প। বরিশাল বিএম কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স পাশ সম্পন্ন করার পর চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। পড়ে বসে না থেকে পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। পরবর্তীতে পত্রিকায় খাঁচায় মাছ চাষের খবর দেখে আগ্রহী হন। মৎস্য অধিদপ্তরের সাথে আলাপ করলে তারা উৎসাহ দেন। তাদের সার্বিক তত্বাবধায়ন ও পরামর্শে শুরু করেন মাছ চাষ।

এছাড়া সরকারিভাবে ১০টি খাঁচা ও ৭ হাজার মাছ পাওয়াতে প্রথম দিকে তার খরচও অনেক কম হয়েছে বলেও জানান। বর্তমানে আরো ৫টি খাঁচা নিজ উদ্যেগে নদীতে স্থাপন করেছেন তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: মাকসুদ আলম বলেন, ‘একজন অনার্স পাশ ছেলে হয়েও জাহিদ যেভাবে পরিশ্রম করে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করছেন, তা সকলের জন্য অনুকরনীয়। সে সারারাত জেগে মাছের প্রকল্প পাহারা দেয়। কাজের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান রয়েছে বলে আজ সফলতা ধরা দিয়েছে তাকে।’

এব্যপারে সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জাহিদ একজন শিক্ষিত ও উদ্যমী মানুষ। তাকে প্রথম বলার পর সে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষে রাজি হয়। সরকারিভাবে তাকে ১০টি খাঁচা ও মাছ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাকে দেখে এখন অনেক খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেছে। জাহিদ খাঁচায় মাছ চাষের সাথে তার পারিবারিক উন্নতি ও নিজ আত্বকর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি করেছেন।’

মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জাহিদসহ সকল চাষিরে সব ধরনের পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান আসাদুজ্জামান।




রাইজিংবিডি/ভোলা/৩ অক্টোবর ২০১৮/ ফয়সল বিন ইসলাম নয়ন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়