ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ভাড়া বেশি, তবু লোকসান!

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ৩০ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাড়া বেশি, তবু লোকসান!

হাসিবুল ইসলাম মিথুন : ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাসের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ভিড় জমছে বাস কাউন্টারগুলোতে। বরাবরের মতো এবারও টিকিটের দাম নিয়ে যাত্রী ও বাস মালিক-শ্রমিকদের কাছে থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। টিকিটের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। অপরদিকে, পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিকিটের দাম বেশি হলেও তাদের লোকসান হচ্ছে।

রাজধানীর গাবতলীতে এনা পরিবহনের কাউন্টারে এসেছেন মোহাম্মদ ইমদাদ হোসেন। তিনি পঞ্চগড়গামী বাসের অগ্রিম টিকিট কিনতে এসে দাম নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন কাউন্টার মাস্টারের সঙ্গে।

পরে ইমদাদ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, অন্য সময়ে পঞ্চগড়ে যেতে বাসভাড়া নেয়া হয় ৬৫০ টাকা। এখন এসে দেখি ভাড়া চাচ্ছে ৮৫০ টাকা। ঈদ আসলেই পরিবহনগুলো ভাড়া বেশি নিয়ে থাকে। তারা বলে, সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমার কথা হচ্ছে, সরকার যদি নির্ধারণ করেই দেয়, তাহলে ঈদ ছাড়া অন্যান্য দিনে কেন কম ভাড়া নেয় তারা? সব সময় তাহলে সরকারের নির্ধারিত ভাড়া নিলেই তো হয়। তাহলে আর ভাড়া বেশি-কম নিয়ে কোনো হট্টগোল হবে না।

শুধু ইমদাদ হোসেন নন, অনেক যাত্রীই এরকম অভিযোগ করেন। তারা বলেন, ঈদ আসলেই বাসের ভাড়া বেড়ে যায়। এটা ঠিক নয়। এর একটা সুষ্ঠু সমাধান দরকার।

এনা পরিবহনের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সাধারণ দিনের তুলনায় ঈদের সময় আমাদের লস হয়ে থাকে। কারণ, ঈদের সময় আমরা শুধু ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় বাসভর্তি যাত্রী পাই। কিন্তু আসার সময় সর্বোচ্চ দুই বা তিনজন যাত্রী ঢাকায় আসে।

ঈদের সময় ঢাকা থেকে যেকোনো জেলায় যেতে এবং আসতে কত খরচ হয়, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদের সময় ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম যেতে নন-এসি গাড়িতে ১২ হাজার বা ১৩ হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে থাকে। ঢাকায় আসতেও ঠিক তেমনই খরচ হয়। সেক্ষেত্রে ঈদের সময় কুড়িগ্রামের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে সরকার নির্ধারিত ৬৭০ টাকা। অন্য সময় নেয়া হয় ৬০০ টাকা।

তিনি বলেন, ঈদ ছাড়া অন্য সময় আমাদের একটি গাড়ির কুড়িগ্রাম যাওয়া- আসার ট্রিপে টিকিট বিক্রি করে আসে ৪৮ হাজার টাকার মতো। কিন্তু ঈদের সময় আমাদের আসা-যাওয়ার ট্রিপে টিকিট বিক্রি করে আসে ২৭ হাজার টাকার মতো। যেখানে আমাদের আসা-যাওয়ার খরচই আছে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এখন আপনি বলুন, আমাদের কি লাভ থাকে? তাই আমি বলব, ঈদের থেকে স্বাভাবিক দিনে গাড়িতে লাভ বেশি হয়।

যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের নির্ধারণ করা ভাড়ার থেকে এক টাকাও বেশি ভাড়া নিচ্ছে না এনা পরিবহন। শুধু এনা পরিবহন নয়, অন্যান্য পরিবহনও বেশি ভাড়া নিচ্ছে না, আমার জানা মতে। আমাদের পরিবহনের কেউ যদি ভাড়া বেশি নিয়েও থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।

ঠিক একই কথা বলেন হানিফ পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের ইনচার্জ মোহাম্মদ বাবুল হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের পরিবহনে ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হয় না। আসলে ঈদের সময় সরকারের নির্ধারিত ভাড়া নেয়া হয় বলেই যাত্রীরা মনে করছেন, বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সব সময়ই সরকারের নির্ধারিত ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও আমরা সেটা নিচ্ছি না। তার কারণ হচ্ছে, অন্য সময় আমরা যে গাড়িটি ট্রিপে পাঠাই সেটা যেতে এবং আসতে ফুল যাত্রী পেয়ে থাকে। তাই আমরা ভাড়া একটু কম নিলেও লোকসান হয় না। কিন্তু ঈদে যাওয়ার সময় যাত্রী পেলেও আসার সময় না পাওয়ায় লোকসান হয় আমাদের।

গাবতলীতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে নন-এসি বাসে যেতে অন্য সময় ভাড়া ৬০০ টাকা, ঈদে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৮০০ টাকা। পঞ্চগড় রুটে স্বাভাবিক সময়ের ভাড়া ৬৫০ টাকা, ঈদে ৮৫০ টাকা। ডিমলা রুটে এসি বাসে স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া ৮০০, ঈদে ১২০০ টাকা। রংপুরগামী নন-এসি বাসে স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া ৫০০, ঈদে ৬০০ টাকা। এমন দেশের সব রুটেই স্বাভাবিক ভাড়ার থেকে ঈদে ভাড়া বেশি নেয়া হয়।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুলাই ২০১৯/হাসিবুল/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়