ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভিন্ন আঙ্গিকের কিছু স্কুল (প্রথম পর্ব)

রুহুল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভিন্ন আঙ্গিকের কিছু স্কুল (প্রথম পর্ব)

রুহুল আমিন : প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য মানুষকে স্কুলে যেতে হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের শিক্ষা পদ্ধতি। বিষয়বস্তুও বিভিন্ন রকম। কোথাও শিক্ষার্থীরা সুযোগ-সুবিধা বেশি পায়, কোথাও কম। আবার বিষয়ের ভিন্নতার কারণে স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষাগ্রহণের পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে। এমনকি প্রয়োজনে স্কুল ভবনেরও বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। এমনি কিছু ভিন্ন ঘরানার স্কুল নিয়ে এ আয়োজন।

 


ম্যাকোকো ভাসমান স্কুল : স্কুলটি নাইজেরিয়ার লেগোসে উপকূলীয় অঞ্চলে। ছোট একটি হ্রদে নির্মিত এই স্কুলে সব বয়সী ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে পারে। সমুদ্রের কাছাকাছি অবস্থিত এই হ্রদে ক্রমবর্ধমান পানির স্তরের তারতম্যে যেন কোনো সমস্যা না হয় তাই স্কুলটি নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকগুলো খালি ড্রাম দিয়ে মাঁচা বেধে তার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে স্কুলটি। স্কুলে ক্লাসরুমের পাশাপাশি খেলাধুলার জায়গাও আছে। অনন্য এই ভাসমান স্কুলে  ১০০ জনের বেশি বাচ্চা নিরাপদে ক্লাস করতে পারে।  এমনকি বিরূপ আবহাওয়ায়ও স্কুলের নিয়মিত কার্যক্রমে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে না।

 


ঘনক আকৃতির স্কুল : ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের এই স্কুলের বিশাল ক্লাসরুমে ১১শ’র বেশি শিক্ষার্থী একসঙ্গে পড়াশোনা করতে পারে। স্কুলটিতে ক্লাস নেওয়া হয় কাঁচের তৈরি ব্যয়বহুল ঘনকের ভেতরে। আর খালি জায়গায় গোলাকৃতির মঞ্চ নির্মাণ করে আড্ডার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আছে আরামদায়ক বসার ব্যবস্থাও। যা শিক্ষার্থীদের শান্ত রাখে এবং সৃজনশীল চিন্তা করতে উৎসাহ জোগায়।

 


যে স্কুলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করে : এই স্কুলটি অস্ট্রেলিয়ায়। এই স্কুল ভবন দেখতে অনেক সুন্দর। বিভিন্ন রকমের মনোমুগ্ধকর নকশা দিয়ে সাজানো হয়েছে স্কুলের ভেতরের দিক। স্কুলের সব শিক্ষার্থীর পড়াশোনার নিজস্ব পরিকল্পনা আছে। আর তাদের ওই পরিকল্পনা খুব সহজে শিক্ষক ও বাবা-মা মেনে নেয়। এ ছাড়া শিক্ষাগ্রহণের পদ্ধতির উন্নয়নের জন্য যেকোনো শিক্ষার্থী প্রস্তাব দিতে পারে। এই স্কুলে শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে ক্লাস নেওয়া হয়।

 


যে স্কুলে হাতে কলমে শেখানো হয় : আমেরিকার রোড আইল্যান্ডের এই স্কুলে হাতে কলমে শেখানো হয়। একেবারে শুরু থেকেই শিক্ষার্থীরা প্রকৃত অর্থেই যা শিখতে চায় তা শিখতে পারে। পেশা হিসেবে পছন্দের কাজ বেছে নিতে সহায়ক হবে এই ভাবনায় এ স্কুলের কিশোররা তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে কাজ করে। স্কুল কর্তৃপক্ষের যুক্তি এই কিশোররা একদিন তাদের পছন্দের কাজকেই পেশা হিসেবে বেছে নিবে। তাই কিশোর বয়স থেকেই তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করা স্কুলের দায়িত্ব। এ ছাড়া এর আরো একটি অর্থ আছে, স্কুলটির উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীরা কেবল তাই শিখুক যা প্রকৃতপক্ষেই তারা ভবিষ্যতে পেশা হিসেবে বেছে নিবে। বর্তমানে আমেরিকাজুড়ে ৫৫টি স্কুলে এই ধরনের শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। 

 


দেখতে অফিসের মতো স্কুল : আমেরিকার ওহাইওতে এই স্কুলের কোনো ক্লাসরুম নেই। স্কুলের ভেতরে প্রধান কক্ষে অফিসের মতো ৩০০টি ডেস্ক আছে। একজন ছাত্র একটি ডেস্কে বসে। দেখলে মনে হবে বিশাল বড় অফিস ঘর। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা আলাদা কম্পিউটার আছে যা তাদের নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষাগ্রহণ করতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে শিখে নেয়। যদি কোনো সাহায্যের প্রয়োজন মনে করে তখন শিক্ষককে ডাকে।

 


যে স্কুলে শিক্ষার্থীরা ‘ভয়ঙ্কর’সব বিষয় শিখে : আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোতে এই স্কুলটি অবস্থিত। এই স্কুলের সিলেবাসে বেশ ‘ভয়ঙ্কর’ কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও শিক্ষার্থীদের বাবা-মা তাদের সন্তানদের তা করতে নিষেধ করে এবং স্কুলজীবনের পুরোটা সময় এইসব থেকে দূরে থাকতে বলে। এই স্কুলের বাচ্চাদের নোংরা হতে, আগুন নিয়ে খেলতে এবং বাসায় ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি খুলে নাড়াচাড়া করার অনুমোদন দেয়।

 


লিঙ্গ বৈষম্যহীন স্কুল : সুইডেনের স্টকহোমের এই স্কুলে সব লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য একই নীতি অনুসরণ করা হয়। সিলেবাসেরও কোনো তারতম্য হয় না। কোনো ধরনের লিঙ্গভেদ নেই। এই স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সর্বনাম যেমন হি, শি ব্যবহার করেন না। তার পরিবর্তে শিশুদের তাদের নামের প্রথম অংশ ব্যবহার করে থাকেন।  এই পদ্ধতি অনুসরণ করার উদ্দেশ্য হলো কেউ যদি নিজেকে অন্যদের চেয়ে ভিন্ন মনে করে তবে তাকে একই কাতারে নিয়ে আসা। শিক্ষা ব্যবস্থার এই পদ্ধতি শিশুদের মানসিকভাবে ভাল রাখে বলে কর্তৃপক্ষের ধারণা। 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/রুহুল/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়