ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ভিসির অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ৩ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভিসির অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর : বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

তদন্ত কমিটি উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। ইউজিসি তদন্ত শেষে গত ২২ এপ্রিল রিপোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। আজ বুধবার তদন্ত প্রতিবেদনের ফাটোকপি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিলি করা হলে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।

উপাচার্যের নানা অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের করা অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটি উপাচার্যের অনিয়মের সত্যতা পেয়েছেন।’

তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে উপাচার্যের ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, একাই একাধিক পদে দায়িত্ব পালন, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অকার্যকর, পুলিশের দায়েরকৃত অজ্ঞাতনামা মামলায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি, জাল সনদকারীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৩৪ মাসে রেজিস্ট্রার পদে পছন্দের পাঁচজনকে নিয়োগ দেন। এ ছাড়া বন্ধ ক্যাফেটেরিয়া ও ডরমেটরি চালুকরণে উপাচার্যের উদাসীনতা, পদায়ন ও ভাতা প্রদানে অনিয়ম, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপ দেওয়ার চেষ্টাসহ নানা অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

২০১৬ সালের ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান সরেজমিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা দেখতে আসেন। সেই সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আর এম হাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওইসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে ০২ আগস্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি। গত ২৬ ডিসেম্বর কমিটির আহ্বায়ক ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক আক্তার হোসেন, সদস্য সচিব ফখরুল ইসলাম ও সদস্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মুহম্মদ মিজানুর রহমান সরেজমিন তদন্ত করতে রংপুরে আসেন।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহম্মদ ইব্রাহীম কবির বলেন, ‘আমার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য অফিসিয়ালি আসেনি। তবে শুনেছি ইউজিসির তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। ক্যাম্পাসে অনেকের কাছে নাকি এর কপিও আছে। তবে এটি ইউজিসির প্রতিবেদন কি না বলতে পারব না।’ 

ইউজিসির তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বেশ কিছু দিন আগেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নুর-উন-নবীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে তার রিপোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নুর-উন-নবীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আমি এখনো কোনো চিঠি পাইনি। তাই এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য করতে পারব না।’

ছাত্রলীগ নেতাদের চাকরির আবদার

বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবীকে অবরুদ্ধ করে। তারা বেলা সাড়ে ১১টা থেকে উপাচার্যের কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেয়। পরে উপাচার্যের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং বিকেল পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করেন। 

পুলিশ ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্যের সঙ্গে চাকরির দাবি নিয়ে দেখা করতে যান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির নেতা হাদীউজ্জামান হাদী, শহীদ মুখতার ইলাহী হল শাখা সভাপতি ইমতিয়াজ বসুনিয়া, তিতাশ চন্দ্র, কেন্দ্রীর ছাত্রলীগের সদস্য ফয়সাল আজম ফাইন, আজিজুল হাকিম রাসেল, বঙ্গবন্ধু হল শাখার সেক্রেটারি মৃতিশ চন্দ্র বর্মণ, তৌফিকুর রহমান তুষার, রাজীব মন্ডলসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। এ সময় উপাচার্য তাদের দাবির মেনে নেওয়ার বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা আন্দোলনের ঘোষণা দেন। 

ছাত্রলীগ নেতারা জানান, উপাচার্য দীর্ঘ দিন ধরে যোগ্যতার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা কার্যকর করেননি। তবে অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও চাকরি নিশ্চিত করতে হবে।

আগামী ৫ মে উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হচ্ছে উল্লেখ করে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা বলেন, যদি এই সময়ে উপাচার্য ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়োগ না দিয়ে যান। তবে তাকে অপমানিত হয়ে ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়া বলেন, ‘শুনেছি ছাত্রলীগের কিছু সাবেক নেতা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তাদের দাবির বিষয়ে উপাচার্য সঠিক পদক্ষেপ নেবেন।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।



রাইজিংবিডি/রংপুর/৩ মে ২০১৭/নজরুল মৃধা/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়