ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভেসাল জাল: খাল-বিলে মাছ ধরার বিশেষ ফাঁদ

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৩, ২৭ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভেসাল জাল: খাল-বিলে মাছ ধরার বিশেষ ফাঁদ

জুনাইদ আল হাবিব : আবহমান বাংলার রূপের মধ্যে ভেসাল জাল দিয়ে মাছ শিকারের দৃশ্যটি বেশ চিরচেনা। তবে সময়ের পালা বদলে এ ভেসাল জালে মাছ শিকারের দৃশ্য এখন সর্বত্র চোখে পড়ে না। ‘ভেসাল জাল’ বইয়ের ভাষা হলেও স্থানীয়ভাবে এটি ‘বেয়াল জাল’ নামে মানুষের কাছে অধিক পরিচিত। বিশেষত, গ্রামের খাল-বিলে এ জাল দিয়ে মাছ শিকারের দৃশ্য চোখে পড়বে। তবে সচরাচর নয়। বলতে গেলে এটি যেন অনেকটা বিলুপ্তির দুয়ারে এসে ঠেকেছে।

ভেসাল জাল ব্যবহারের মাধ্যমে একজন জেলে খুব সহজে মাছ শিকার করতে পারেন। এর থলি বেশ বড়। খালের ব্যাসার্ধের উপর নির্ভর করে ভেসাল কত বড় হবে। জালের সামনের প্রান্ত খাল বা বিলের পানির গভীর ছুঁয়ে মাছকে থলিতে বন্দি করে। তখন জেলে দু’হাত দিয়ে জালে ঢুকে পড়া মাছগুলোকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারেন। যার কারণে এ জালকে মাছ ধরার বিশেষ ফাঁদ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

মাছ শিকারের দারুণ এ কৌশল বেশি চোখে পড়বে উপকূলবর্তী এলাকা এবং গ্রামাঞ্চলে। তবে উপকূলবর্তী এলাকায় জলবায়ুর পরিবর্তনে সৃষ্ট নদীভাঙনের কারণে বহু খাল হারিয়ে গেছে। যার কারণে ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরার সংখ্যাটাও দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।

যেমনটির উদাহরণ, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা লক্ষ্মীপুরের কমলনগর। এখানে এমপির খাল নামে বড় একটি আছে। যেটি নদীভাঙনের কারণে এখন খুব ছোট। আরেকটি বাতির খাল। বাতির খালের দৈর্ঘ্যও কমেছে কয়েক কিলোমিটার। বাতির খালের দৈর্ঘ্য বর্তমানে আড়াই কিলোমিটার হলেও এমপির খালের দৈর্ঘ্য এখন দাঁড়িয়েছে এক কিলোমিটারেরও খুব কমে। তবে এসব খালপাড় ঘুরলে চোখে পড়ে, পানি চলাচলে নাব্যতা সংকটের কারণে স্রোতে খালের পাড় ভেঙে খাল এলোমেলোভাবে বড় হয়েছে।

ভেসাল জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা হয়। যেমন চিংড়ি, টেংরা, লইট্টা, পুঁটি, বাইলা, বাইমসহ নানান প্রজাতির মাছ। খাল-বিলে মাছ ধরার আরো অন্যান্য কৌশল থাকলেও এটি একটি স্থায়ী কৌশল। ভেসাল স্থায়ীভাবে নির্মাণ করার জন্য জেলেকে হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। জাল কেনা, ভেসাল তৈরি করার জন্য বাঁশ, রশি কিনতে হয়। তবে বর্ষা ঋতুতে জেলেরা কেবল এ ভেসাল দিয়ে মাছ ধরতে পারেন। শুষ্ক মৌসুমে খাল-বিলে পানি না থাকায় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

ভেসাল জালে মাছ ধরার মাধ্যমে অনেক জেলের জীবনে পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে। সংসারে মাছের চাহিদা পূরণের পরেও ভেসালে ধরা পড়া মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন তারা।

খালে সাধারণত জোয়ারের পর ভাটা পড়লে ভেসাল জাল পাতেন জেলেরা। এতে কম স্রোতে নদীর দিকে ফিরে যাওয়া মাছ জেলেদের জালে আটকা পড়ে। তবে ছোট মাছ ছাড়াও জেলেরা মাঝে মাঝে বড় বড় মাছও পেয়ে থাকে ভেসাল পেতে। যা গ্রাম-বাংলার অপরূপ গল্পের সাথে আমাদের পরিচয় করিযে দেয়।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরা জেলে মো. শাহজাহান (৫৬), আবুল কালাম (৪৫), আবুল বাশার (৫০) জানান, ‘বেয়াল (ভেসাল) জাল দিয়ে মাছ ধরা খুব সহজ৷ অবসর সময়ে আমরা এ জাল বেয়ে থাকি। আমরা ছাড়াও আমাগো ছেলে সন্তানরা এ জাল বায়। সংসারের একটা বাড়তি আয় আসে এখান থেকে। আমরা কৃষি কাজ করি, আর পাশাপাশি এ জাল দিয়ে মাছ ধরি। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচও চালাতে পারি। বেয়াল দিয়ে মাছ ধরার জন্য ভাটার উপর নির্ভর করতে হয়। জোয়ারে স্রোত বেশি, তাই জোয়ারে বেয়াল দিয়ে মাছ ধরা সম্ভব হয় না।’

তবে এ জাল মশারির নেট দিয়ে তৈরি হওয়ায় মাছের রেণু পোনাও ধরা পড়ে। এতে দেশি মাছের বংশ বিস্তার বিলুপ্ত হচ্ছে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ আগস্ট ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়