ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মসজিদে তারাবি: বাড়বে করোনা ঝুঁকি

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ২৩ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মসজিদে তারাবি: বাড়বে করোনা ঝুঁকি

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলছে। আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যু হারও। এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৫ মে (মঙ্গলবার) পর্যন্ত আরেকদফা সরকারি ছুটি বাড়ানো হয়েছে। ছুটিকালীন করোনারোধে জনগণকে ঘরে অবস্থানে  কড়া নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।

দুদিন পরেই (শনিবার) থেকে শুরু হচ্ছে মাহে রমজান।  নিয়ম মতে প্রথম রোজার তারাবি পড়তে হবে আগেরদিন শুক্রবার দিবাগত রাতেই। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে -এমন সময়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে দেশের কওমি ঘরানা শীর্ষ আলেমরা ১৪শর্তে সুস্থ মুসল্লিদের মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ, জুমা, জামাতের পাশাপাশি তারাবি পড়ার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি প্রস্তাবনা জানিয়েছেন। এ অবস্থায় মুসল্লিরা তারাবির নামাজ কোথায় পড়বেন? ঘরে নাকি মসজিদে। সরকারি নির্দেশনা কী আছে, কওমি আলেমদের অনুরোধের বিষয়ে দেশের ধর্মীয় আলেমরা কী বলছেন খুটিনাটি সবকিছুই জানতে চান ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

সরকার বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুসল্লিদের মসজিদে নয়, ঘরেই তারাবি পড়তে হবে। করোনা সংক্রমণরোধ ও জনগণের সুরক্ষায় মসজিদের পরিবর্তে মুসল্লিদের ঘরে জুমা, জামাত পড়ার বিষয়ে আগ থেকে ধর্মমন্ত্রণালয়ের যে নির্দেশনা রয়েছে সেটি বহাল রয়েছে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী মুসল্লিদের তারাবি ঘরে পড়তে হবে। এর আগে (১৬ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই রোজার তারাবি ঘরে পড়ার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তারাবির বিষয়ে সরকারের কোনো নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ বলেন, ধর্মমন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া আছে তার বাইরে এ মুহূর্তে নতুন করে কোনো নির্দেশনা নেই।

এ বিষয়ে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে নতুন করে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হবে না। আগের নির্দেশনাই বহাল রয়েছে। মসজিদ আগের মতো খোলা থাকবে, একেবারে সীমিত নামাজ, তারাবি হবে। চাইলে খতম তারাবিও পড়া যাবে। তবে জুমার নামাজ এখন যেভাবে দশজন পড়ছেন ওইভাবেই পড়তে হবে। সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে বাইরে থেকে কোন মুসল্লি মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে না। বরং মসজিদের পরিবর্তে মুসল্লিদের ঘরেই তারাবি পড়তে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রাণঘাতি মহামারি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, মানুষ যে হারে আক্রান্ত হচ্ছে এ অবস্থায় মসজিদে যাওয়া অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। এ অবস্থায় মুসল্লিদের নামাজ পড়তে দেওয়া হলে করোনা আক্রান্ত কেউ মসজিদে ঢুকে পড়লে তাহলে তার দ্বারা অন্যদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে তারাবির নামাজ ঘরে পড়াই উত্তম।

'বিশ্ব মুসলিমের সবচাইতে পবিত্র জায়গা হচ্ছে মক্কা ও মদিনা। এখানেও জুমা, জামাত ও তারাবি সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশের মতো একই পদ্ধতি চালু আছে। ভারত, পাকিস্তানে আরও কঠোর অবস্থা। আমাদের দেশেও এর ব্যত্যয় ঘটানো কোনো অবস্থাতেই ঠিক হবে না। বরং মসজিদে জুমা, জামাত ও তারাবি সীমিত করা, মুসল্লিদের ঘরে পড়ার যে সিদ্ধান্ত সেটা কেবলমাত্র মানুষের জীবন বাঁচানোর স্বার্থেই- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।

শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, করোনা আক্রমণের পর দেশ ও জাতির স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলসভাবে যেভাবে জনগণের জীবন বাঁচাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তা বিশ্বে নজিরবিহীন। এখানে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নাই, মানুষের জীবন বাঁচানোই তার একমাত্র উদ্দেশ্য। তাই প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবেই মেনে চলার জন্য আমি সবার প্রতি সবিনয়ে অনুরোধ করছি।

কওমি আলেমদের প্রস্তাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে ওআইসি আন্তর্জাতিক ইসলামী ফিকহ একাডেমি (বাংলাদেশ) স্থায়ী প্রতিনিধি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরবী বিভাগের প্রফেসর ড. সাইয়েদ আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে এ মুহূর্তে যত শর্তই মানা হোক পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত মসজিদে মুসল্লিদের নামাজ পড়তে দেওয়া হলে তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বরং সেটি ওআইসি ও বাংলাদেশের আলেম-ওলামার সম্মিলিত ফতোয়ার বিরুদ্ধে হবে। সর্বোপরি রাষ্ট্রদ্রোহী ও মানবতাবিরোধী হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতা হলো প্রাণঘাতী এ ভাইরাস অদৃশ্য এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ মুহূর্তে মসজিদে নামাজ পড়তে দেওয়া হলে মুসল্লিদের একজন থেকে জনে জনে সেটা ছড়িয়ে পড়বে। 

কওমি আলেমদের প্রস্তাবনার বিষয়ে বৃহত্তর অরাজনৈতিক সুন্নি সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের নির্বাহী মহাসচিব আল্লামা আবুল কাসেম মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, যখন করোনার সংক্রমণ কম ছিল তখন তারা সরকারের নির্দেশনা মেনে মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়তে বলেছেন। আর এখন সংক্রমণ যখন বাড়লো তখন তারা মসজিদে নামাজ পড়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। এটা তাদের স্ববিরোধী অবস্থান। বরং সব আলেম-ওলামা যেখানে ফরজ নামাজ, জুমা ঘরে পড়তে বলেছেন সেখানে এ মুহূর্তে তাদের এ প্রস্তাবনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। তারা ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় জমায়েত করে যেভাবে করোনার প্রজনন ক্ষেত্রে তৈরি করেছেন, এখন মসজিদে তারাবি পড়ে সে অবস্থা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। আমরা মনে করি,  করোনা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি তাই এখনো জমায়েত হয়ে মসজিদে নামাজ পড়ার মতো অবস্থা হয়নি, দাবি করার সময়ও আসেনি। বরং সেটা শরীয়ত ও দেশবিরোধী হবে।

কওমি আলেমদের প্রস্তাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে হাইয়াতুল উলয়ার শীর্ষ আলেমগণ আমাদের কাছে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। এ বিষয়ে কী করা যায় আমরা তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করছি। প্রস্তাবনার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

 

নঈমুদ্দীন/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়