ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মহালয়ায় মর্ত্যলোকে মায়ের পা

তাপস রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মহালয়ায় মর্ত্যলোকে মায়ের পা

তাপস রায় : ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, নমস্ত্যসৈ নমস্ত্যসৈ নমস্ত্যসৈ নমঃ নমঃ’- শ্রীচণ্ডীর এ শ্লোক উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে আজ অনুষ্ঠিত হলো শুভ মহালয়া। এর মাধ্যমে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানানো হলো দেবী দুর্গাকে। এটি গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, এদিন থেকেই দেবীপক্ষের শুরু। অর্থাৎ আজ থেকে শুরু হলো আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্গাপূজার দিন গণনা।

 

আগামী ৭ অক্টোবর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব। মহালয়ার মধ্য দিয়ে ঘোষণা করা হলো মায়ের আগমনী বার্তা। বছর ঘুরে মা আসছেন বাপের বাড়ি। হিমালয়ে স্বামী শিবের সঙ্গে তার বারো মাস বাস। পূজার এ ক’দিন তিনি থাকবেন মর্ত্যলোকে। মা এখানে একা আসবেন না। সঙ্গে নিয়ে আসবেন তার চার পুত্র-কন্যাকে। একই সঙ্গে পূজিত হবেন তারাও- কার্ত্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতী।

 

শাস্ত্রমতে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া। এদিন আরো কিছু ধর্মীয় রীতি পালিত হতে দেখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো মৃত পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা। গঙ্গাতীরে দেখা যায় এমন আয়োজন। এ ছাড়া মন্দিরে মন্দিরে বেজে ওঠে শঙ্খধ্বনি। পুরোহিতদের শান্ত, অবিচল গম্ভীর কণ্ঠে শোনা যায় চণ্ডীপাঠ। এই মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে দেবতারা দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। তারা সমস্বরে দেবীকে আহ্বান জানান পৃথিবীর ঘোর অন্ধকার দূরীভূত করে মঙ্গল প্রতিষ্ঠায়। মহালয়ার সময় ঘোর অমাবস্যা থাকে। মহাতেজের আলোয় সেই অমাবস্যা দূর হয়। প্রতিষ্ঠা পায় শুভশক্তি।

 

দেবী দুর্গা দুর্গতিনাশিনী। হিন্দু সম্প্রদায় তাকে মহাশক্তির একটি রূপ মনে করেন। দেবী দুর্গার অনেকগুলি হাত। তার অষ্টাদশভূজা, ষোড়শভূজা, দশভূজা, অষ্টভূজা ও চতুর্ভূজা মূর্তিও দেখা যায়। তবে দশভূজা রূপটিই বেশি জনপ্রিয়। হিন্দুধর্মে দেবী দুর্গা পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ। হিন্দু পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে তিনি শিবের স্ত্রী পার্বতী, কার্তিক ও গণেশের জননী এবং কালীর অন্যরূপ।

 

দুর্গা মূলত শক্তির দেবী। বৈদিক সাহিত্যে দুর্গার উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে দুর্গার বিশেষ আলোচনা ও পূজাবিধি তন্ত্র ও পুরাণেই প্রচলিত। হিন্দুশাস্ত্রে ‘দুর্গা’ শব্দটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে :
‘দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।
উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।
রফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।
ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।’

 

অর্থাৎ ‘দ’ অক্ষরটি দৈত্য বিনাশ করে, উ-কার বিঘ্ন নাশ করে, রেফ রোগ নাশ করে, ‘গ’ অক্ষরটি পাপ নাশ করে এবং অ-কার শত্রু নাশ করে। এর অর্থ দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। অন্যদিকে শব্দকল্পদ্রুম বলেছে, ‘দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা।’ অর্থাৎ যিনি দুর্গ নামক অসুর বধ করেছিলেন, তিনি সব সময় ‘দুর্গা’ নামে পরিচিত হবেন।

 

দুর্গাপূজার চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের হিসেবে এ বছর সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৩৮৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন চলছে। রাজধানীতে এ সংখ্যা দুইশ’র অধিক। এ আয়োজন সুসম্পন্ন করার লক্ষ্যে দেশজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার ৭ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজা শুরু হয়ে ১১ অক্টোবর দশমী পূজার মধ্য দিয়ে এই আয়োজনের সমাপ্তি ঘটবে। গত কয়েকবছর পঞ্জিকায় উল্লেখিত তিথি অনুযায়ী অষ্টমী এবং নবমী পূজা একই দিনে হলেও এবার আর তা হয়নি। এবার আলাদা দিনেই অষ্টমী এবং নবমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। শুভ মহালয়া উপলক্ষে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহালয়ার বিশেষ অনুষ্ঠান ভোর ৬টায় এবং কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে সকাল ৯টায়  মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়