ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিত

মামলা করেই লাপাত্তা আমান?

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৫, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মামলা করেই লাপাত্তা আমান?

লাল বৃত্ত ঘেরা আমান মামলা করেই লাপাত্তা রয়েছেন

আরিফ সাওন : ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিত করতে মামলা দায়ের করেই লাপাত্তা আমানুল্লাহ আমান।

মামলার পর থেকে ছাত্রদলের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক আমানের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

তার এই মামলার পর বেশ সঙ্কটেই পড়েছে বিএনপি। এখন এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

আমানের মামলার পর গুজব-গুঞ্জনও ডালপালা মেলেছে দলের অভ‌্যান্তরে। মামলার নেপথ্য কারিগরদের বিষয়ে সন্দেহের তির বিভিন্ন দিকে ছুঁড়ছেন অনেকে। সন্দেহের তর্জনী উঠেছে সভাপতি পদে প্রার্থীতা বাতিল হওয়া দুই জনের দিকেও। এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক দুই একজন নেতাকে নিয়েও কানকথা চলছে।

কেউ কেউ বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদি তালুকদারের ঘনিষ্ট অনুসারী এই আমান। সুতরাং মামলার সাথে মেহেদির সম্পৃক্ততা থাকতেও পারে। তবে মেহেদি এসব গুঞ্জনকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।

অনেকেই ধারনা করছেন, ছাত্রদলের কাউন্সিলে যাচাই বাছাই ও আপিলে আল মেহেদির প্রার্থীতা বাতিল হয়। এই ক্ষোভে তিনি এটা করতে পারেন।

সূত্র জানায়, রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে আমানুল্লাহ আমান ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শাহবুদ্দিন লাল্টুর গ্রুপে ছিলেন। পরে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর গ্রুপেও কিছুদিন মিশে ছিলেন। এরপরে আব্দুল কাদের ভূইয়ার গ্রুপে যোগ দেন।

ছাত্রদলের অনেকেই বলেন, বিগত ৫ বছর বিএনপি ও ছাত্রদলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিস্ক্রিয় ছিলেন আমান। খুব বেশি একটা কর্মসূচিতে অংশ নিতেন না।

তবে তার ফেসবুকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু, চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, রাজীব আহসানসহ অনেক নেতার সাথে সেলফি দেখা যায়।

তবে সেলফি রয়েছে বলেই যে তিনি তাদের অনুসারী বা আস্তাভাজন এমনও নয় কিংবা তাদের ইন্ধনে কাজ করছেন এমনটা বলাও ঠিক হবে না বলে মন্তব‌্য করেছেন কেউ কেউ।

আল মেহেদি ছাড়াও সভাপতি পদে প্রার্থীতা বাতিল হওয়া সরদার আমীরুল ইসলাম সাগরকে নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।

কেউ কেউ বলছেন, তার ইন্ধনেও মামলা হতে পারে। তবে সাগর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এসব গুঞ্জন ভিত্তিহীন।

আল মেহেদি তালুকদার বলেন, মামলার কারণে সারাজীবন কাউন্সিল তো আর বন্ধ থাকবে না। হয়তো দুই দিন পিছাবে বা ১ সপ্তাহ। তাতে আমার কি লাভ? যাচাই বাছাই কমিটি আমাকে বাদ দিয়েছে, কাউন্সিল পেছালে কি তারা আমার প্রার্থীতা ফিরিয়ে দেবেন? দেবেন না। যদি আমার লাভ থাকতো তাহলে না হয় বুঝতাম তাদের আলোচনার ভিত্তি আছে।

তিনি বলেন, আমি সবসময় দলের মঙ্গলের কথা চিন্তা করি। দলের বাইরে কিছু ভাবিনা। দলের সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দেই। অযৌক্তিক ভাবে আমার প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। তারপরও আমি তা মেনে নিয়েছি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কথা বলিনি। আমার সমর্থকরা তারেক রহমানের কাছে আমার প্রার্থীতার ব্যাপারে তাদের আর্জি জানিয়েছেন।

ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে জলঘোলা করার পেছনে একটি সিন্ডিকেটের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

তবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা যা-ই হোক না কেন, কাউন্সিল স্থগিত করার পেছনে সরকারের কারসাজিকেই দায়ী করেছে বিএনপি।

স্থগিতাদেশ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে জরুরী সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক আমান উল্লাহ’র দায়ের করা  মামলায় কাউন্সিল স্থগিতাদেশ সম্পূর্ণরুপে অযৌক্তিক।

তিনি বলেন, আমান আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে প্রতিযোগী ছিলেন না এবং প্রতিযোগিতার জন্য আবেদন করেননি কিংবা তিনি কাউন্সিলরও নন। সুতরাং কোনো বিচার বিশ্লেষণ ও যুক্তিতর্ক ছাড়া তার করা মামলার প্রেক্ষিতে ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিতের আদেশ দেয়া গভীর চক্রান্তমূলক। সরকারের কারসাজিতেই এ আদেশ দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা আমাদের দল ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করতে চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টাকেও আজকে সরকার নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।

তবে যাকে নিয়েই আলোচনা হোক না কেন, মামলা করার পেছনে কারা থাকতে পারেন তার সঠিক সমীকরণ কেউই মেলাতে পারছেন না আমানের লাপাত্তা হওয়ার কারণে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯/সাওন/নবীন হোসেন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়