ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মাস্কের কৃত্রিম সংকট: দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব‌্যবস্থা

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ৯ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাস্কের কৃত্রিম সংকট: দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব‌্যবস্থা

করোনা আতঙ্কে রাজধানীতে  হ্যান্ড স্যানিটাইজার-মাস্কের সংকট তৈরি  হয়েছে।  এর কারণ হিসেবে মানুষের আতঙ্ক, উৎপাদনকারী ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের সরবরাহের মধ‌্যে ভারসাম‌্যহীনতাকে দায়ী করেছেন।  আর ক্রেতাদের অভিযোগ—সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন।  তাদের মতে, অনৈতিকভাবে বেশি মুনাফার লক্ষ‌্যে স্যানিটাইজার-মাস্কের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সিন্ডিকেট।  এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাপিড অ‌্যাকশন ব‌্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদর দপ্তর ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব‌্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজধানীর চকবাজার, মিডফোর্ড, শাহবাগ, পল্টন এলাকার পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কোনো দোকানেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই। দুই-একটি দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সামান্য পরিমাণ দেখা গেলেও তার বাড়তি দাম হাকাচ্ছেন বিক্রেতারা।  বাড়তি দামেই কিনতে দেখা গেছে গ্রাহকদের। ফার্মেসিগুলোয় মাস্ক পাওয়া না গেলেও ফুটপাতে চড়া দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

পল্টনে সার্জিক্যাল মার্কেটে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথ বলে জানা গেছে, রোববার (৮ মার্চ) বিকেল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত খুচরা ক্রেতারাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে নিয়েছেন। অনেকে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি কিনে নিয়েছেন।

সার্জক্যাল মার্কেটে ৩০ মিনিট অবস্থান করে দেখা গেছে, ক্রেতারা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক কিনতে আসছেন।  তবে, বিক্রেতারা স্টক নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন।

মার্কেটের নিলয় সার্জিক্যাল হাউজের বিক্রেতা সোবহান বলেন, ‘এখান থেকে সবচেয়ে বেশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে নিয়েছে বিভিন্ন অফিস। এরপর খুচরা ক্রেতারা বেশি ছিল। কিছু কিছু ফার্মেসি ও দোকানদার কিনে নিয়েছেন। আজ সকালের পর থেকে মার্কেটে কারও স্টক নেই। কোম্পানিগুলোকে বলার পরও সাপ্লাই দিচ্ছে না। ’ তিনি বলেন, ‘গতকাল মার্কেটে স্বাভাবিক দামে বিক্রি হয়েছে। তবে আজ একটু চড়া দাম ছিল।’

এই মার্কটের ‘ভাই ভাই সার্জিক্যাল’ নামের আরেকটি দোকানে খুচরা ও পাইকারিতে মাস্ক বিক্রি করে।  দোকানের মালিক নন্দ কুমার সরকার বলেন, ‘গ্রেটওয়াল, জিএমআইসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মাস্ক বানায়। গতকাল থেকে চাহিদা বেড়েছে।  এরপর সাপ্লাই ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। ’ তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্রেতাই খুচরা। তারা আতঙ্কে মাস্ক কিনছেন।’

বিট্রো সার্জক্যাল দোকানে লিখে রাখা হয়েছে, ‘এখানে কোনো ধরনের মাস্ক পাওয়া যায় না।’  দোকানের মালিক মো. নাঈম হোসেন বলেন, ‘প্রথমত সংকট। তারপরও বেশি দামে বিক্রি করতে হবে বলে বিক্রি করছি না। ’

পাশের এক ফার্মেসির মালিক বলেন, ‘‘যেখানে মাসে ৫টি হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করতে পারতাম না, সেখানে আজ সারা দিনে কমপক্ষে ৫০০ কাস্টমারকে 'না' বলে বিদায় করেছি। ’’

সোমবার বিকেলে পুরান ঢাকার চকবাজারের ও মিডফোর্ড এলাকার পাইকারি মার্কেটে গিয়েও সংকট দেখা গেছে।  দুই এলাকায় কমপক্ষে ২০জন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল,  এদিন সকালেই সব বিক্রি হয়ে গেছে। ’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুত কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, দাম বাড়তি দেখে অনেক ব্যবসায়ী মাস্ক স্টক করে রেখেছেন।  সুযোগ বুঝে এগুলো মার্কেটে ছাড়বে।  এখনো বাড়তি দাম পেলে লুকিয়ে লুকিয়ে বিক্রি করছে।’

শাহবাগে নাজ ফার্মার মালিক মোস্তাফিজুর রহমান অবশ্য পুলিশের ভয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করছেন না।  তিনি বলেন, ‘যে কয়েকটি ছিল তা বিক্রি হয়ে গেছে। এখন আনবো না।  কারণ বেশি দামে বিক্রি করতে পারবো না।  পুলিশ এসে ঝামেলা করবে। ’

রাজধানী ফার্মেসির মালিক মো. মোয়াজ্জিন বলেন, ‘গতকাল ৫০টা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অর্ডার করেছিলাম।  ছয়টা দিয়ে গেছে। মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ’

এদিকে আজিজ মার্কেটের ফার্মেসিগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, সেলফে কোনো স্যানিটাইজার নেই।  তবে, কেউ চাইলে আগে দাম বলে ভেতর থেকে এনে দেওয়া হচ্ছে। প্রায় ৩০ মিনিট অবস্থান করে দেখা গেছে, ক্রেতারা চাইলে ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে বলে ভেতর থেকে এনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে। এজন্য বেশি দামও নিচ্ছে। ’

আশরাফুল ইসলাম নামে একজন ২৫০ এমএল সাইজের একটি হেক্সিজল ২৫০ টাকায় কিনেছেন।  যদিও এর গায়ে মূল্য লেখা ছিল ১২০ টাকা। এ মার্কেটের বিক্রেতারা পরে দাম বেড়ে যাবে হুঁশিয়ারি দিয়ে ক্রেতাদের কাছে এগুলো বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী হাকিম সারোয়ার আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘জিম্মি করে ক্রেতাদের কাছে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। ’

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জাব্বার মণ্ডল বলেন, ‘ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হলে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে। ’

প্রসঙ্গত, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মাস্ক ও সেনিটাইজার বিক্রির দায়ে সোমবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, সারক্ষীরা, কুষ্টিয়া ও বান্দরবানে ভ্রাম‌্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।  এসব অভিযানে বিভিন্ন ফার্মেসি-দোকানকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম‌্যমাণ আদালত।  এছাড়া একাধিক ফার্মেসিকে সিলগালাও করে দেওয়া হয়েছে।

** মাস্কের দাম বাড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট
** মাস্ক-সেনিটাইজারের দাম বেশি রাখায় ২ ফার্মেসি সিলগালা
** করোনা: মাস্কের দাম বেশি রাখায় অর্থদণ্ড, ফার্মেসি বন্ধ
** করোনা: ৫০ টাকার মাস্ক কেন ১৫০ টাকা?


ঢাকা/নূর /হক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়