ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মিছিলে মিছিলে ঢাকা একাকার

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মিছিলে মিছিলে ঢাকা একাকার

৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২তে অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের তোলা মিছিলের একটি ছবি

শাহ মতিন টিপু : বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র তা শুরু হয়েছিল পাকিস্তান জন্মের আগেই। মাতৃভাষা আন্দোলনের ওপর দেশ বিদেশের বহু কবি সাহিত্যিক লিখেছেন। বিশ্বের ইতিহাসে ভাষার আন্দোলন শুধু এদেশেই হয়েছে। আর কোন দেশে মায়ের মুখের ভাষা নিয়ে আন্দোলন হয়নি। আর এ জন্য আমরা প্রকৃত অর্থেই ভাষাপ্রেমি।

কবি জসীম উদ্দীন তার ‘একুশের গান’ কবিতায় লিখেছেন-‘আমার এমন মধুর বাঙলা ভাষা/ভায়ের বোনের আদর মাখা/ মায়ের বুকের ভালবাসা।’ আবার কবি মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ কবিতায় লিখেছেন- এখানে যারা প্রাণ দিয়েছে/রমনার ঊর্দ্ধমুখী কৃষ্ণচূড়ার নিচে/যেখানে আগুনের ফুলকির মতো/এখানে-ওখানে জ্বলছে অসংখ্য রক্তের আলপনা,/সেখানে আমি কাঁদতে আসানি।/আজ আমি শোকে বিহবল নই,/আজ আমি ক্রোধে উন্মত্ত নই/আজ আমি রক্তের গৌরবে অভিষিক্ত ।

১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। এইদিনে মিছিলের শোভাযাত্রায় ঢাকার চেহারা এক ভিন্নরূপ পরিগ্রহ করে। কার্যত ঢাকাজুড়েই সেদিন মিছিলের স্রোত নামে।  চারদিকেই প্রতিবাদী চেতনার এক আলোকময় বিচ্ছুরণ। এ কথা অনস্বীকার্য যে, মাতৃভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক স্মরণীয় ঐতিহাসিক ঘটনা।

তদানীন্তন পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করেছিল এটা ঐতিহাসিক সত্য। এ সময় পূর্ব বাংলায় রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে যাদের আধিপত্য ছিল তার বেশিরভাগই ছিল হিন্দু জমিদার, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী শ্রেণির। এ কারণে মুসলমানরা এ সময় মুসলিম জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। এটা ছিল ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। পাকিস্তান জন্মের পর এদের আশা হতাশায় পরিণত হলো। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় পরিমন্ডলে বাঙালীদের তেমন আধিপত্য রইল না। তারা ক্রমেই শোষণ বঞ্চনার শিকার হতে লাগল।

পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যেই অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়তে লাগল। নানা শোষণ বঞ্চনার শিকার হয়ে তারাই আবার পাকিস্তানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। তখন বাঙালী জাতীয়তাবাদের চেতনায় সঞ্চারিত হতে লাগল। এর পর এল মাতৃভাষা বাংলা ভাষার ওপর আক্রমণ। গর্জে উঠল সমগ্র বাঙালী সমাজ। ’৫২ ভাষা আন্দোলন বাঙালী জাতীয়তাবাদের প্রথম স্ফূরণ।

বলা যায়, ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ তারিখটি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের প্রক্ষাপটে একটা প্রতিবাদী দিবস। এই দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শুরু হয়েছিল প্রতিবাদী জনতার প্রতিবাদী মিছিল। এই দিনের বেশ কিছু ছবি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ক্যামেরাবন্দী করেন। যা আজো এক ঐতিহাসিক দলিল হয়ে আছে।

এসব ছবিতে দেখা যায়, ঢাকায় আজিমপুরের দিক থেকে আসা ইডেন কলেজের ছাত্রীদের প্রতিবাদ দিবসের শোভাযাত্রা। হাবিবুর রহমান শেলীর নেতৃত্বে প্রতিবাদ দিবসের মিছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তায় সংগ্রামী ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ দিবসের শোভাযাত্রা। ঢাকার নবাবপুর রোডে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের প্রতিবাদ দিবসের শোভাযাত্রা ইত্যাদি।

কিংবদন্তি ভাষা সংগ্রামী আবদুল মতিন প্রতিবাদ দিবসের শোভাযাত্রা সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে জানান, ১৯৫২ সালের ৪  ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমবেত হবার পর এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে কর্মপরিষদের উদ্যোগে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনের মিছিলটি ছিল বিশাল।

সভা শেষে প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্র-ছাত্রী এক সুদীর্ঘ মিছিলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে করতে সদরঘাট থেকে চকবাজার হয়ে সারা শহর প্রদক্ষিণ করে। সাধারণ মানুষ সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে এবং পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে অভিনন্দন জানায়। সাধারণ মানুষের এই অংশগ্রহণ আন্দোলনকারীদের আরও উজ্জীবিত করে তোলে।

 




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়