মিশরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা বিরোধীদের
মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আর যা-ই হোক না কেন, প্রেসিডেন্ট সিসিই আবারো বিজয়ী হবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আগামী মার্চ মাসে মিশরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির বহুদলীয় বিরোধী জোট। একই সঙ্গে এই নির্বাচনকে ‘কিম্ভুতকিমাকার’ বলে আখ্যা দিয়েছে তারা।
ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ছাড়া মার্চে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আর মাত্র একজন প্রার্থী থাকছেন, যিনি নির্বাচনে সিসিকে বৈধতা দিতেই এই নির্বাচন করছেন বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন। সিসিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো অন্য প্রার্থীদের হয় গ্রেপ্তার করা হয়েছে নাহয় তারা যেন নির্বাচনী প্রচার চালাতে না পারে, সে জন্য ভয়ভীতির মধ্যে রাখা হয়েছে।
মিশরের আটটি প্রধান বিরোধী দল ও গণতন্ত্রপন্থি ১৫০ বিশিষ্ট ব্যক্তি এক যৌথ বিবৃতিতে মিশরীয়দের প্রতি মার্চের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানিয়ে অভিযোগ করেছেন, প্রেসিডেন্ট সিসির সরকার ‘স্বচ্ছ প্রতিযোগিতার নির্বাচন’ বানচাল করছে।
রাজধীন কায়রোয় এক সাংবাদ সম্মেলনে বিরোধী শিবিরের তুখোড় নেতা আবদেল গেলিল মুস্তাফা বলেছেন, অর্থহীন হয়ে ওঠা এই নির্বাচনের কাছে আত্মসমর্পণ করা ঠিক নয়।
২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিসির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হামদিন সাবাহি নির্বাচন বয়কটের জন্য ‘ঘরে থাকুন’ স্লোগানে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। সিসির শাসনকে ‘বর্বর ক্ষমতার রাজত্ব’ অভিহিত করে বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
২০১৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মিশরের প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির পতন ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা সিসি আর যা-ই করুন, মার্চের নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হবেন, তার সব বন্দোবস্ত পাকা করে রাখতে চান। তিনি আশাবাদী, নির্বাচনে তার ভূমিধস বিজয় হবে।
মিশরের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল সামি আনান সিসির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করায় মঙ্গলবার দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী বন্দুকের নলের মুখে তাকে গ্রেপ্তার করে। তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিশাম গেনেনা শনিবার কায়রোর ব্যস্ত রাস্তায় হামলার শিকার হন এবং এতে তিনি গুরুতর আহতও হন।
এ মাসের প্রথম দিকে দেশটির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আহমেদ শফিক ‘রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি নন’ দাবি করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা ত্যাগ করেন। শফিকের একজন আইনজীবীকে উদ্ধৃত করে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্র ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এক খবরে জানায়, তার বিরুদ্ধে আগের দুর্নীতির যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো তদন্ত করা হবে বলে হুমকি দিয়ে সিসি সরকার তাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করেছে।
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আহমেদ কনসোয়া নামে সেনাবাহিনীর এক কর্নেল প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার ঘোষণা দেওয়ার পর তাকে ছয় বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালেদ আলী নামে মানবাধিকার আইনবিদ নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ায় তাকে তিন মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সরকারের সহমর্মী সিসির প্রতিদ্বন্দ্বী
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিসির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মৌসা মুস্তাফা মৌসা, যিনি সরকারের একজন সহমর্মী। সিসি যদি একমাত্র প্রার্থী হন, তাহলে নির্বাচনে খুব কম ভোট গ্রহণ হতে পারে এবং এ নিয়ে তিনি বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে পারেন- এমন আশঙ্কা থেকে তাকে সহযোগিতা করতেই মূলত মৌসা প্রার্থিতা করছেন বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন।
নির্বাচনে প্রার্থিতার শেষ দিনের সময় শেষ হওয়ার মাত্র ১৫ মিনিট আগে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন বিতর্কিত প্রার্থী মৌসা। এর আগে কখনো নির্বাচনে দাঁড়ানোর কোনো ইচ্ছা প্রকাশ করেননি তিনি। বিরোধীদের অভিযোগের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এই নির্বাচনে আমরা নাচের পুতুল নই।’
কিন্তু ৬৬ বছর বয়সি মৌসা এর আগে বারবার সিসিকে সমর্থন করেছেন এবং দ্বিতীয় মেয়াদে সিসিকে ক্ষমতায় আনতে তার পক্ষে ‘প্রেসিডেন্ট আল-সিসির সমর্থকগোষ্ঠী’ নামে গত বছর একটি প্রচারশিবির গঠন করেন। মৌসার প্রার্থী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশরীয়রা তাকে নিয়ে উপহাস করে এবং ‘অতিরিক্ত সিসি’ হিসেবে তাকে আখ্যায়িত করে।
তথ্যসূত্র : আলজাজিরা অনলাইন
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জানুয়ারি ২০১৮/রাসেল পারভেজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন