ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধে নবীগঞ্জের দুই শহীদ

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২৭ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুক্তিযুদ্ধে নবীগঞ্জের দুই শহীদ

শহীদ আজিম উল্লাহ ও শহীদ ইজ্জত উল্লাহর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন এমপি কেয়া চৌধুরী

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর পাহাড়ি এলাকার শহীদ আজিম উল্লাহ ও শহীদ ইজ্জত উল্লাহ এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

শহীদ আজিম উল্লাহ : দিনারপুর পাহাড়ের পশ্চিম এলাকার জঙ্গল বেষ্টিত পাহাড়ি টিলা ‘টেকইয়া’য় স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে বসবাস করতেন আজিম উল্লাহ। শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু এ টিলাতেই রয়ে গেলেন আজিম উল্লাহ ও তার পরিবার।

এ পাহাড়ের পূর্ব পাশের মৌলভীবাজারের আতানগিরি এলাকার বাসিন্দা দেওয়ান আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী ভারতে ট্রেনিং দিয়ে টেকইয়া এলাকার আজিম উল্লাহ বাড়িতে আসেন। তিনি এ বাড়িটিকে মুক্তি ক্যাম্প হিসেবে পরিকল্পনা করেন। এতে আজিম উল্লাহও রাজি হয়ে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগীতার আশ্বাস প্রদান করেন।

ক্যাম্প করা হয়। দেওয়ান আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরীর নেতৃত্বে এ ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন। এক সময় পাক সেনারা টের পেয়ে যায়। তারা এ ক্যাম্পে হানা দেয়। এর পূর্বেই মুক্তিযোদ্ধারা টের পেয়ে অন্যত্র চলে যান।

পরে পাক সেনাদের হাতে আটক হন আজিম উল্লাহ। তাকে আটক রেখে পুরোদমে নির্যাতন চালায় পাক সেনারা। এতেও তিনি ক্যাম্প কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে কোন তথ্য দেননি। এক সময় পাক সেনারা পানিউমদা বাজার এলাকায় নিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে।  শহীদ হন আজিম উল্লাহ। তার লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা কবর দেন।

শহীদ ইজ্জত উল্লাহ : টেকইয়ার নিকটবর্তী মুড়াউড়া গ্রামের বাসিন্দা  ইজ্জত উল্লাহের বাড়ির মাটির নিচে অস্ত্র রাখতেন ক্যাম্প কমান্ডার  দেওয়ান আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী। পাক সেনারা সোর্সের মাধ্যমে এ বিষয়টিও জেনে যায়। তারা এ বাড়িতে গিয়ে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করে ইজ্জত উল্লাহকে ধরে ফেলে। বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

 

শহীদ আজিম উল্লাহর নাতি ও শহীদ ইজ্জত উল্লাহর ছেলের সঙ্গে কথা বলছেন প্রতিবেদক


পাক সেনারা ইজ্জত উল্লাহকে ধরে নিয়ে কমান্ডার দেওয়ান আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরীসহ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য দিতে বলেন। তিনি তথ্য দেননি। পরে তাকেও পাক সেনারা হত্যা করে। এতে তিনি শহীদ হন। তার লাশ পাওয়া যায়নি।

আলাপকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শহীদ আজিম উল্লাহর এ বাড়িটি একটি ইতিহাস। এ ইতিহাসকে ধরে রাখতে হবে। শহীদ ইজ্জত উল্লাহ’রও অবদানও কম নয়। তাকেও ভুলতে পারবেনা এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা।

আলাপকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ইজ্জত উল্লাহ’র ছেলে মোঃ দুরুদ মিয়া বলেন, ‘আজও তার পিতার মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে সে সময়েই নিশ্চিত হয়েছিল, ইজ্জত উল্লাহকে পাক সেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলেছে।’

তিনি জানান, তার মা নুরজাহান বেগম রয়েছেন। তিনি আজও শোকে কাতর। তার এক বোন মারা গেছেন। তারা দুইভাই রয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে রাজাকারদের দ্রুত কঠোর বিচার দাবি করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আজিম উল্লাহ’র মেয়ে জাহানারা খাতুন বলেন, ‘আমার পিতাকে পাকসেনারা নির্মমভাবে মেরে ফেলেছিল। পিতার এ ধরণের মৃত্যু এখন পর্যন্ত মেনে নিতে পারছি না।’  মা শোভা বিবি এখনও  বেঁচে রয়েছেন। যেকোন সময় মারা যেতে পারেন।

জাহানারা খাতুনের ছেলে মগল মিয়া বলেন, ‘আমার নানা নেই। আজও নানী তার স্বামীকে ভুলতে পারছেন না। তার বয়স হয়েছে। তিনি রাজাকারদের বিচার দেখে মরতে চান।’

স্থানীয় এমপি কেয়া চৌধুরী বলেন, ‘দুই শহীদের ঋণ পরিশোধ হবার নয়। তাদের স্মরণে এলাকার একটি রাস্তার নামকরণের চেষ্টা করা হবে। আগামী ডিসেম্বর মাসের ভেতরে পানিউমদা বাজার এলাকায় দুই মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ধরে রাখতে  ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণে বরাদ্দ দেব। শহীদ পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/২৭ মার্চ ২০১৭/ মামুন চৌধুরী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়