মুক্তিযুদ্ধের এক সাহসী সমর নায়ক
মুক্তিযুদ্ধের এক সাহসী সমর নায়কের নাম মোঃ আব্দুল আওয়াল। এই বীরযোদ্ধা ৩নং সেক্টর প্রধান মেজর কেএম শফি উল্লাহের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
আব্দুল আওয়াল হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা। পিতার নাম মৃত হাজী মকবুল হোসেন। বিজয়ের মাসে এ বীর যোদ্ধার সাথে একান্ত আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আলাপে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে জীবনের নানা প্রসঙ্গ মেলে ধরেন।
আব্দুল আওয়াল চুনারুঘাটের সাটিয়াজুরী স্কুলে এসএসসিতে পড়াকালীন সময় ২৮ মার্চ যুদ্ধে অংশ নিতে তিনি বাড়ি থেকে রওনা দেন। প্রথমে কামাইছড়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যান। সেখান থেকে শেরপুর হয়ে ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া বাংলোয় ৪ এপ্রিলের সভায় যোগদান করেন। সেখান থেকে ভারতের আসারাম বাড়িতে ৫ দিন, খোয়াই হাইস্কুলে ৫দিন, গৌরাঙ্গটিলা প্রাইমারী স্কুলে ১২ দিন অবস্থান করে অমপিনগরে ট্রেনিং সেন্টারে ১ মাস গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩নং সেক্টরের হেড কোয়ার্টার সিদাইয়ে ১৫ দিন ব্যাপী বিস্ফোরক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে আগরতলা বিএসএফ হেড কোয়ার্টারে আরো ৫দিন বিস্ফোরক প্রশিক্ষণ নেন। সেখান থেকে পুনরায় সিদাই চলে আসেন।
প্রশিক্ষণ শেষে ৩নং সেক্টর প্রধান মেজর কেএম শফি উল্লাহের নেতৃত্বে সাব-সেক্টর কমান্ডার এজাজ আহমেদ চৌধুরী, মতিউর রহমান ও আজিজুর রহমানের দিক নির্দেশনায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, ‘আমার মাধ্যমে ১০ থেকে শুরু পর্যায়ক্রমে ৬০ জন গেরিলা যোদ্ধা দেওয়া হয়। অস্ত্র দেওয়া হয় ৩৭টি।’
বলেন, ‘অস্ত্র হাতে নিয়ে ২৫ থেকে ৩০টি আক্রমণে অংশগ্রহণ করেছি। নতুন বাজার ব্রিজ, বানিয়াগাঁও ব্রিজ, ইছালিয়া ব্রিজ, করাঙ্গী ব্রিজ ভাঙ্গা এবং পাকবাহিনী ও রাজাকার ক্যাম্প মিরাশী, রানীগাঁও, কালেঙ্গায় হামলা চালিয়েছি। জারুলিয়া বাজার ঘেরাও করে রেড করেছি।’
অবশেষে পাকিস্তানীদের তাড়িয়ে জয়ী হয়ে ৬ ডিসেম্বর সহযোদ্ধাদের নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্যাপ্টেন এজাজ আহমেদ চৌধুরীর কাছে সেই ৩৭ অস্ত্র জমা দেন।
তিনি বলেন, ‘লোভ লালসা ত্যাগ করে যুদ্ধ করেছি। পরে বাড়ি ফিরে এ পর্যন্ত মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। আর কত দিন বাঁচব জানি না। তবে এলাকার তৃণমূল মানুষের কল্যাণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এলাকার লোকজনের জন্য বিরাট উপকার হবে। এজন্য গ্রামে নিজের প্রায় ২২৫ শতক জমি প্রকল্পকে দান করেছি। নাম দেওয়া হয়েছে ‘চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ (যম) বহুমুখী পল্লী প্রকল্প’।
২৮৩৫ শতক জমির মধ্যে এ প্রকল্পে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজ, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব দাখিল মাদ্রাসা, শহীদ শেখ রাসেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদ শেখ কামাল মিনি স্টেডিয়াম, শহীদ শেখ জামাল অডিটরিয়াম, মুজিব কেল্লা (এখানে এতিম ও অসহায়রা বসবাস করবে), শহীদ মিনার ও পাঠাগার, চেতনায় মুক্তি যুদ্ধ (যম) পল্লী উন্নয়ন ইসলামী ব্যাংক ও জীবন বীমা, জাতীয় চার নেতার নামে চারটি আবাসন প্রকল্প, প্রকল্প এলাকার রাস্তা পাশে হাটবাজার, কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনসহ ১৬টি প্রতিষ্ঠান’স্থাপন করা হবে।
এ বীর মুক্তিযোদ্ধার ৮ সন্তানের সবাই শিক্ষিত। অনেকেই চাকরিতে নিয়োজিত আছে। তিনি স্ত্রী নিয়ে সিলেটের বাসায় বসবাস করেন। সময় পেলেই তিনি গ্রামে আসেন।
তার সুপারিশে অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনি এলাকায় অনেক উন্নয়মূলক কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এবার তার কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
হবিগঞ্জ/ মামুন চৌধুরী/টিপু
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন