ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

'মুরব্বী হিসেবে যে দায়িত্ব সেটাই উনি পালন করছেন'

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
'মুরব্বী হিসেবে যে দায়িত্ব সেটাই উনি পালন করছেন'

‘উনার (বেগম রওশন এরশাদ) সঙ্গে আমার কোনো দূরত্ব নাই। তার সঙ্গে কোনো বিরোধ কিংবা সমস্যাই দেখছি না। উনি আমার মুরব্বি। সে হিসেবে উনার যে দায়-দায়িত্ব সেটা উনি ভালোভাবেই পালন করছেন বলে আমি মনে করি।’

বৃহস্পতিবার বনানী কার্যালয়ে রাইজিংবিডিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন জাতীয় পার্টির নতুন চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

জাপার কাউন্সিল, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনসহ দলের সার্বিক বিষয় নিয়ে জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে জিএম কাদেরের বিরোধ রয়েছে বলে চাওর আছে। এছাড়া বিরোধীদল হিসেবে জাপার ভূমিকা কী, নেতাকর্মীরা নতুন নেতৃত্ব নিয়ে কী ভাবছেন- এসব বিষয়ে কথা বলেছেন জি এম কাদের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক   মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন।

রাইজিংবিডি: কেমন আছেন?
জিএম কাদের:
ভালো আছি।

রাইজিংবিডি: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে আপনার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির কী অবস্থা?
জিএম কাদের:
বর্তমানে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা তুলনামূলক অনেক ভালো। ভবিষ্যতে ভালোর দিকেই যাচ্ছে। আমরা ডিসেম্বরের ২৮ তারিখে নবম জাতীয় কাউন্সিল করি। কাউন্সিলরা যে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করেছেন তাতে পার্টি একটি স্টেজ পার করেছে। নেতৃত্বে শূন্যতার যে শঙ্কা সেটা পেরিয়ে এসেছি আমরা। এটা আমাদের একটা বড় অর্জনও।

আমাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে দলের নেতৃত্ব নিয়ে যে অনিশ্চয়তা, পার্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের মধ্যদিয়ে দূর হয়েছে।

আমি আশা রাখি জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামনে দেশ ও জাতির স্বার্থে আরো শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। এর মধ্য দিয়ে আরো বেশি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে। সামনে দিকে এগিয়ে যাবে। এক সময় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা ও সমর্থন নিয়ে দেশের শাসনভার গ্রহণ করতে পারবে। এভাবেই জাতীয় পার্টি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এখন।

রাইজিংবিডি: জাপার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না, আপনার সঙ্গে কোনো দূরত্ব আছে কিনা?
জিএম কাদের:
উনার সঙ্গে (রওশন) আমাদের কোনো দূরত্ব নেই।  উনি স্বাস্থ্যগত কারণে সব সময় সবকিছুতে আসতে পারছেন না। তবে একুশে ফেব্রুয়ারির কর্মসূচিতে তিনি এসেছিলেন। আপনারা আমাদের একসঙ্গে দেখেছেনও।

উনি আগে সব প্রোগ্রামে থাকতেন। স্বাস্থ্যগত কারণে এখন সেটা পারছেন না। উনি কিছু কিছু বিশেষ প্রোগামে আসছেন। এজন্যই আমরা উনাকে পার্টিতে একটি অবস্থানে (প্রধান পৃষ্ঠপোষক) রেখেছি যাতে ঐ কাজটি উনি করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে মুরব্বী হিসেবে সম্মানটা উনার থাকবে। মুরব্বী হিসেবে উনার যে দায় দায়িত্ব সেটা উনি পালন করছেন। আমি মনে করি এটাই ঠিক আছে। তার সঙ্গে কোনো বিরোধ কিংবা সমস্যা দেখছি না।

রাইজিংবিডি: এরশাদের অবর্তমানে জাপার ভবিষ্যৎ কী?
জিএম কাদের:
সামনে জাতীয় পার্টির উজ্জল ভবিষ্যৎ রয়েছে। পার্টি আগের চাইতে অনেক বেশি শক্তিশালী। সবাই মিলে জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নিতে চাই। নেতাকর্মী সমর্থকদের মাঝেও সেই উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে।

দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো অনেকটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ব্যক্তি না থাকলে কিংবা তার অবর্তমানে দলের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়, বিপর্যয়ের একটা সম্ভাবনা কিংবা শঙ্কা থাকে। বড় রাজনৈতিক দলগুলোতে এ ধরনের সমস্যা রয়েছে। নেতৃত্ব সংকটে পড়লে দলটি এগিয়ে যাবে কিনা, দলের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে কিনা, আবার বড় কোনো বিপযয়ের সম্মুখীন হবে কিনা, বিশেষ করে ব্যক্তিকেন্দ্রীক দলের নেতাদের বয়স হয়ে গেলে, তাদের অবর্তমানে দলের কী হবে এসব বিষয়ে মানুষের মনে শঙ্কা থাকে। আমি মনে করি জাতীয় পার্টি সেই স্টেজটি এখন পার করে এসেছে। এটা আমাদের বড় অর্জন। সাধারণভাবে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী তো বটেই, আমাদের সমর্থকগোষ্ঠী তারাও এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। এ কারণে সামনে জাতীয় পার্টির উজ্জল ভবিষ্যৎ দেখা দিয়েছে।

রাইজিংবিডি: বিরোধীদল হিসেবে জাপা সরকারের বিকল্প হতে পারবে কী?
জিএম কাদের:
দেশে বড় তিনটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি অন্যতম। বড় অন্য দুটি রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপিতে নেতৃত্ব শূন্যতা দেখা দিয়েছে। যদিও জাতীয় পার্টির চেয়ে তাদের জনসমর্থন একসময় বেশি ছিল। কিন্তু এখন তাদের নেতৃত্ব শূন্যতার কারণে দলে বড় বিপর্যয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে আমি মনে করি। এ কারণে দেশের মানুষের মধ্যে যারা সরকারের বিকল্প কিংবা সরকারবিরোধী হিসেবে বিএনপিকে ভাবছিল, তারাও দলটিকে এখন আর আস্থায় আনতে পারছে না।

আমি মনে করি, নতুন নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাচ্ছে। সবাই মিলে দলকে আরো শক্তিশালী করা গেলে, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে যদি আমরা সঠিক কর্মসূচি দিতে পারি, তাহলে জাতীয় পার্টি বিরোধীদল হিসেবে সরকারের বিকল্প বিএনপির এ জায়গাটা নিতে পারে।

জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক ভূমিকায় বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অনেক মানুষ বিশ্বাস করছেন যে সরকারের বিকল্প হিসেবে দাঁড়াতে পারলে কিংবা কাজ করলে দেশবাসীর কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে।

নতুন নেতৃত্ব হাল ধরার কারণে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মানুষের আস্থাও ফিরে আসতে শুরু করেছে। সামনে জাতিকে আমরা যদি সঠিক রাজনীতি দিতে পারি তাহলে দলের ভবিষ্যৎ খুবই ভালো। এটা শুধু আমার মত না, যারা রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেন তাদেরও মত। সাধারণ মানুষেরও এটা প্রত্যাশা।

রাইজিংবিডি: জাপার কমিটি গঠন নিয়ে অনিয়ম, পদ বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। পদত্যাগের ঘটনাও আছে- এসব বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
জিএম কাদের:
কমিটি গঠনে কোনো অনিয়ম হয়নি। পদ বাণিজ্য, কিংবা মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগও সঠিক নয়। আমি যা কিছু করেছি ইনসাফভিত্তিক করেছি। এখানে কেউ অনৈতিক কিছু কিছু করেছে বা মনোনয়ন বাণিজ্য কিংবা পদ বাণিজ্য হয়েছে এমনটা ভাবা ঠিক নয়। যারা বলছেন, তারা হয়তো না বুঝেই বলছেন। আর এ ধরনের কথা বলার অধিকারও তেমন কারো নেই। কারণ ভালো খারাপের দায়িত্ব একজনকে (চেয়ারম্যান) দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলরা সকলে মিলে তাকেই এই দায়িত্ব দিয়েছেন। তাই তিনি যা ভালো মনে করেছেন দলের স্বার্থে করেছেন।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আকার ২৯৯, কাউন্সিলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় এবং কমিটি গঠনের একক এখতিয়ার দেয়া হয় তাকেই। এখন চেয়ারম্যান যাদের নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবেন তাদেরকে নিয়ে টিম সাজাবেন, এটাই স্বাভাবিক। এখানে সিনিয়র জুনিয়র প্রশ্নটি আসে না। সব দলে এটাই হয়ে থাকে। আমাদের দলেও এটা করা হয়েছে।

কমিটি গঠন নিয়ে দলে আমাকে চ্যালেঞ্জ করার অথরিটি আর কারো নেই। যদি চ্যালেঞ্জ করতে চায় তাহলে সকল কাউন্সিলর এক হয়ে করতে হবে। কারণ কাউন্সিলে কাউন্সিলররাই আমাকে এই এখতিয়ার দিয়েছেন। তাই আমি মনে করি, এখন চ্যালেঞ্জ করার সে সুযোগ আর নেই।

রাইজিংবিডি: কমিটির পদ পদবি নিয়ে অনেকেই অসন্তুষ্ট?
জিএম কাদের:
কোনো বিষয়ে সবাইকে শতভাগ সন্তুষ্ট করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। কিছু কাজ সবাইকে সুখী করবে- এ ধারণা করাও ঠিক নয়। আমি বিশ্বাস করি যা হয়েছে এটা ন্যায়ভিত্তিক করা হয়েছে।

এখানে যারা অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তারা সম্পূর্ণ বিষয়টি বুঝতে পারেননি অথবা কোনো না কোনো কারণে তারা এটা গ্রহণ করতে চাচ্ছেন না। কিন্তু সার্বিকভাবে কর্মীরা এটা গ্রহণ করেছেন। দেশবাসী কমিটি গঠনে কোনো অনিয়ম দেখছেন না। ফলে আমি মনে করি না যে এটা নিয়ে অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ আছে। অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ থাকলে সেটা আমার বিরুদ্ধে উঠা উচিত। কারণ সঙ্গে যারা কাজ করছেন তারা আমার নির্দেশে কাজ করছেন। সেখানে কোনো অনিয়ম যাতে না হয় আমি চেষ্টা করেছি।

তবে মানুষ হিসেবে ভুলত্রুটি হতেই পারে। ভুল ছাড়া শতভাগ মানুষ বলা মুশকিল। সেরকম যদি কিছু হয় আমরা পরবর্তীতে শুদ্ধ করার চেষ্টা করব। আমি সমালোচনা অপছন্দ করি না, পছন্দই করি।   সমালোচনা বিশ্লেষণ করি, ত্রুটি থাকলে কারেকশন করার চেষ্টা করি। তবে ঢালাওভাবে অভিযোগ আনা ঠিক নয়। অনিয়ম হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু এখানে অনিয়ম করার কারো সুযোগ ছিল না। আমি মনে করি এ কথাগুলো রটানো সঠিক নয়। নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখা সাংগঠনিক শৃঙ্খলার জন্য একটা বড় বিষয়।

রাইজিংবিডি: দল কতটুকু ঐক্যবদ্ধ, বর্তমান পরিস্থিতিতে দল ভাঙবে কিনা?
জিএম কাদের:
 আমার ধারণা দল সম্পূর্ণ সুসংগঠিত। শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ আছে। দলের কাউন্সিল হওয়ার পরে যে অবস্থাটি দাঁড়িয়েছে দল এক জায়গায় থাকবে। যদি কেউ কোনো কারণে দলের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে দল থেকে চলে যায় সেটির কারণে দল ভেঙে যাবে না। দলের এখন যে ঐক্য তাতেও ক্ষতি হবে না।

আমি মনে করি, কাউন্সিলের পর নতুন নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ আছে, সামনেও থাকবে। এখান থেকে দল ভাঙার সুযোগ আমি দেখছি না। দলে মেইনস্ট্রিম মোটামুটি এক জায়গায় চলে এসেছে। অসন্তুষ্টি থাকলে কেউ চলে যেতে চাইলে চলে যেতে পারেন। কিন্তু এজন্য যে দল ভেঙে যাবে সেটা হবে না। অনেকে আগেও চলে গেছেন, পরে আবার ফিরে এসেছেন। এবারও ডেজিগনেশনের যে কথা এসেছে সেটা খুব অল্প কয়েকজন মানুষ, তারা ৫/৭ জন। কিন্তু তার মধ্যেও অনেকে ফিরে এসে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় আছেন।

তাছাড়া অনেকেই দলে ফিরে আসতে চাচ্ছেন, কিন্ত শৃঙ্খলাজনিত কারণে তাদের অনেককে আমি সেভাবে নিতে পারছি না। আর দলের যারা বলেছিলেন, মনক্ষুণ্ন তারাও অনেকে আমার কাছে অ্যাপ্রোচ করেছেন। আসলে দলের নেতাকর্মী সমর্থকরা নতুন নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। কিছু মানুষ আমাকে কিছুটা ছোট করার জন্য হয়তো এ ধরনের নেতিবাচক প্রচার করতে পারেন। তবে এর তেমন প্রভাব দলের মধ্যে আসেনি। জনগণের মধ্যেও প্রভাব পড়েছে বলে মনে হয় না।

রাইজিংবিডি: বিরোধীদল হলেও সংসদে জাপার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা আছে- এ বিষয়ে কিছু বলবেন?
জিএম কাদের:
আমরা সংসদে বিরোধীদল, বাইরেও আমরা বিরোধীদল। সংসদে আমাদের বিরোধীদলের ভূমিকা হলো পরামর্শক, অথবা সহায়ক। সাংবিধানিকভাবে সরকার প্রধানকেই সর্বাত্মক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে দায়িত্ব পালনের জন্য। ফলে, সংসদে এমন কোনো ক্ষমতা নেই যে সরকারের বিষয়ে বিরোধীদল নিজস্ব কিছু করতে পারবে। অথবা সরকারি প্রস্তাব কিংবা সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে অনুমোদন দেবে না এমন সুযোগও নেই।

বিরোধীদল হিসেবে সংসদে আমরা যেটা করতে পারি সেটা হলো সরকারের প্রস্তাবের বিপক্ষে জনগণের কিছু সেন্টিমেন্ট তুলে ধরা। জনগণের কল্যাণ নয় এমন কিছু বিষয় তুলে ধরতে পারি। জনগণের মুখের ভাষা হিসেবে সংসদে কথা বলাই আমাদের কাজ। এ কাজটি জাপা খুব সুচারুরূপে পালন করছে।

রাইজিংবিডি: জাতীয় পার্টি গৃহপালিত বিরোধীদল, এ কারণে রাজপথে সরব নয় বলে অভিযোগ আছে?
জিএম কাদের:
রাজপথে বিরোধীদলের আগে একটা কনসেপ্ট ছিল, সেটা এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেটা হলো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দিয়ে জালাও পোড়াও করে সরকারকে বিপাকে ফেলা, তার মাধ্যমে দাবি আদায়ের যে প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন চালু ছিল সেটি এখন আর নেই। জনগণও এই প্রক্রিয়া এখন গ্রহণ করছেন না। বলতে গেলে বাংলাদেশের রাজনীতির কালচার থেকে বিরোধীদলের সন্ত্রাস জালাও পোড়াও সংস্কৃতি উঠে গেছে। তার পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি কিংবা প্রতিবাদ। জনগণের জন্য জাতীয় পার্টি সে ভাষাতেই রাজপথে সরব রয়েছে।

রাইজিংবিডি: জনগণের জন্য জাপার কর্মসূচি কী?  
জিএম কাদের:
ওই যে বলছিলাম, এতদিন যে কর্মসূচি পালন করা হতো তাতে জনগণের ক্ষতি হতো, সরকারের আর পাবলিকের গাড়ি ভাঙচুর করা হতো, রাস্তাঘাট বন্ধ করে অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হতো, এটাই ছিল আগে বিরোধীদলের প্রতিবাদের ভাষা। এই ভাষা জনগণ এখন আর গ্রহণ করছেন না।

দেখুন, বিএনপি এর আগে তিন মাস দেশ অচল করলেও সরকারের তেমন কিছুই করতে পারেনি। কিন্তু দেশের ও জনগণের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ধরনের কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে এখন আর বাধ্য করা যায় না। সেটা জনগণও পছন্দ করে না। তাই আমরা বিরোধীদল হিসেবে এ ধরনের কর্মসূচি সমর্থন করি না। কারণ জাতীয় পার্টি শান্তিতে বিশ্বাস করে। আমরা জনগণের ক্ষতি নয়, কল্যাণেই কাজ করি। তাই জনগণকে সচেতন করার জন্য সংসদে কিংবা রাজপথে আমরা বিবৃতি, সমাবেশের মাধ্যমে আমরা গণতান্ত্রিকভাবে শান্তিপুর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। আমরা সরকারের খারাপ কিছু প্রতিবাদ করছি না তা কিন্তু নয়। যেখানে দরকার আমরা প্রতিবাদ করেছি।

রাইজিংবিডি: সামনে মন্ত্রিত্বের রদবদলের কথা শোনা যাচ্ছে, সেখানে বিরোধীদলের যোগদানের সম্ভাবনা আছে কিনা?
জিএম কাদের:
 মহাজোটগতভাবে মন্ত্রিত্বের কোনো প্রস্তাব আমাদের কাছে এখনো আসেনি। যদি এমন কোনো প্রস্তাব আসে তাহলে আমরা দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। মন্ত্রিত্ব নেয়া না নেয়া দেশের জন্য, দলের জন্য ভালো হবে কিনা আমরা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

রাইজিংবিডি: এরশাদের ট্রাস্ট পুনর্গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার কোনো বক্তব্য আছে কিনা?
জিএম কাদের:
আমার ভাইয়ের ট্রাস্ট যেহেতু, এটাতে অনিয়ম না হোক আমি সেটাই চাই। উনি যেভাবে যে উদ্দেশ্যে করে গেছেন, সেভাবেই ট্রাস্ট চলুক। এটা আমরা সকলেই চাই। যেটা উনার ছেলের ভরণ পোষণ, সামাজিক কাজকর্ম করতেন সেগুলি যাতে ট্রাস্টের মাধ্যমে সুন্দরভাবে পরিচালিত হয় এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

রাইজিংবিডি: আপনাকে ধন্যবাদ
জিএম কাদের: রাইজিংবিডিসহ সবাইকে ধন্যবাদ।

 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ/নাসিম 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়