ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মেকআপ ছাড়াই ত্বকে উজ্জ্বলতা আনার কৌশল

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১০, ২৭ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মেকআপ ছাড়াই ত্বকে উজ্জ্বলতা আনার কৌশল

সৌন্দর্য সকলের অধিকার। শারীরিক সৌন্দর্যের অনেকটাই প্রকাশ পায় ত্বকের মাধ্যমে। স্বাভাবিক সৌন্দর্য অথবা উজ্জ্বল ত্বক যে কাউকে সহজে আকৃষ্ট করতে পারে। শুধু তাই নয় ত্বক সুস্থ থাকলে নিজের মনেও এক ধরনের স্বস্তিকর অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে, যা প্রাত্যহিক কাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে।

রূপচর্চার জন্য আপনি কতকিছুই না করেন, কত মেকআপ কিংবা প্রসাধন সামগ্রীই না ব্যবহার করেন। কিন্তু আপনার জন্য সতর্কবার্তা হচ্ছে, অতিরিক্ত মেকআপে অথবা প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবহারে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। একারণে সৌন্দর্য বাড়াতে অথবা ত্বকে উজ্জ্বলতা আনতে মেকআপের ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক কৌশলের প্রয়োগ ঘটানো উচিত। মেকআপ ছাড়াই ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে কিছু স্বাস্থ্যকর পরামর্শ নিয়ে তিন পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

কি খাচ্ছেন তা জানুন : আপনার ত্বককে দীপ্তিময় করতে প্রতিদিন ১৬০ মিলিগ্রাম সয়া আইসোফ্লেভোনস অথবা সিরিয়ালে সয়া মিল্ক মিশিয়ে খেতে পারেন। সয়া খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয়, কারণ এ খাবারটি কোলাজেন উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চমানের প্রোটিন সরবরাহ করে- কানেক্টিভ টিস্যুর জন্য কোলাজেনের প্রয়োজন রয়েছে, বলেন নর্থ ক্যারোলিনার রিভাইভাল সয়ার মেডিক্যাল রিসার্চ ডিরেক্টর অ্যারন টাবোর। সয়া আইসোফ্লেভোনস অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবেও কাজ করে, যা কোলাজেনকে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল জনিত ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে- ফ্রি র‍্যাডিক্যাল হচ্ছে উচ্চ প্রতিক্রিয়াশীল অণু, যা কোষ ঝিল্লিকে দুর্বল বা ধ্বংস করতে পারে। ফ্রি র‍্যাডিকেল ডিএনএ ড্যামেজ করতে পারে- যা বয়স্কতার ছাপ বা বলিরেখা সৃষ্টি করে, ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা কমায় ও স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। সয়া আইসোফ্লেভোনসের ভালো উৎস হচ্ছে সয়া মিল্ক ও টফু।

ডায়েটে স্যালমন মাছ ও অলিভ অয়েল রাখুন : স্যালমন মাছ ও অলিভ অয়েলে পলিআনস্যাচুরেটেড ও মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাবেন, বিশেষ করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ত্বকের জন্য স্বাস্থ্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে সূর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে ও বয়সের ছাপ বিলম্বিত করে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট না খেলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। আপনার প্রাত্যহিক রান্নায় অলিভ অয়েলকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের প্রধান উৎস হিসেবে রাখুন ও প্রতিসপ্তাহে দু’বার বা এর বেশি স্যালমন মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন। এছাড়া ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবারও খেতে পারেন।

প্রতিদিনের রান্নায় রসুন ব্যবহার করুন : যেহেতু রসুনে ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করার মতো উপাদান রয়েছে, তাই ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট ব্রণ দূর করতে পারে। কিন্তু রসুনকে সরাসরি ব্রণে ব্যবহার করবেন না, কারণ এতে ত্বক উক্ত্যক্ত হতে পারে অথবা অ্যালার্জিক কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস ডেভেলপ হতে পারে, সতর্ক করেন নিউ ইয়র্কের ত্বক বিশেষজ্ঞ জেরেমি এ. ব্রাউয়ার।

ফ্রিজে সংরক্ষিত চা পান করুন : আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে চা বানিয়ে ঠান্ডা করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন এবং সারাদিন ধরে তা পান করুন। আপনি সম্ভবত এ সত্য জানেন যে চা হচ্ছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের চমৎকার উৎস- এ অণু ত্বককে ফ্রি র‍্যাডিকেল ড্যামেজ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে, এ ড্যামেজ সাধারণত সূর্যালোকের সংস্পর্শ ও ধূমপান থেকে হয়ে থাকে, যার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। এক গবেষণায় পাওয়া গেছে, চায়ে বিদ্যমান পলিফেনলস ইউভিবি-প্ররোচিত স্কিন ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

সাপ্লিমেন্টের কথা বিবেচনা করুন : আপনার ত্বকে দীপ্তি আনতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রতিদিন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিভিটামিন সেবন করতে পারেন। ত্বকের উজ্জ্বলতার জন্য অনেক পুষ্টি দরকার, যেমন- ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও ভিটামিন বি। এসব পুষ্টির নির্ভরযোগ্য উৎস হচ্ছে খাবার। তাই বেশি করে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খান, প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের কথা ভাবতে পারেন।

প্রতিসকালে রোজ হিপ সেবন করুন : প্রতিদিন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ রোজ হিপ খেয়ে কোলাজেন গঠনে সাহায্য করতে পারেন। নিয়মিত রোজ হিপ সেবনে আপনার ত্বক মসৃণ, তারুণ্যসুলভ ও উজ্জ্বল হবে। ডা. ব্রাউয়ার বলেন, ‘রোজ হিপে গোলাপের বীজ থাকে এবং ফ্রেশ রোজ হিপ হচ্ছে ভিটামিন সি এর ভালো উৎস।’ ভিটামিন সি স্কিন টোন ও ত্বকের গঠন উন্নত করে। এ প্রোডাক্ট সেবনের পূর্বে লেবেল ভালোভাবে পড়ুন ও মেনে চলুন।

সূর্যালোকে দীর্ঘসময় থাকলে সুবাসিত প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলুন: যদি আপনি সূর্যালোকে দিন কাটাতে চান, তাহলে সুবাসিত লোশন ও পারফিউম থেকে দূরে থাকুন। সুবাসিত প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয়েছে এমন ত্বক সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসলে তা বিদঘুটে লাল হয়ে যেতে পারে অথবা রোদে সহজে পুড়ে যেতে পারে অথবা ফোসকা ওঠতে পারে অথবা বিবর্ণ হতে পারে। ডা. ব্রাউয়ার বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকেরা অ্যালার্জি ও অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস প্রবণ রোগীদেরকে সুবাসিত প্রোডাক্টের পরিবর্তে সুবাসমুক্ত ডিটারজেন্ট, সোপ, লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করতে পরামর্শ দিই।’

গরমের দিনে হাঁটুন, সাইকেল চালান অথবা বাগানে কাজ করুন : আপনার শরীর থেকে ঘাম ঝরাতে পারে এমন যেকোনো কাজ ত্বকের জন্য সুসংবাদ বয়ে আনে। শরীর থেকে ঘাম নিঃসরণের মানে হচ্ছে ত্বকের নিচে জমে থাকা বিষাক্ত কেমিক্যাল বের হয়ে যাওয়া। এছাড়া নিয়মিত এক্সারসাইজে শরীরের সঞ্চালন প্রক্রিয়া অথবা রক্তপ্রবাহ ঠিক থাকে, যার ফলে ত্বকের স্বাভাবিক আভা হারাতে পারে না। বাইরে এক্সারসাইজের সময় ইউভিএ ও ইউভিবি রশ্মি থেকে সুরক্ষা পেতে মুখমণ্ডলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন অথবা সানস্ক্রিন প্রোটেকশনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

(চলবে)

 

ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়