ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মোটরসাইকেল শিল্পখাতে ২০২৭ পর্যন্ত মূসক অব্যাহতির দাবি

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৫, ২২ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
মোটরসাইকেল শিল্পখাতে ২০২৭ পর্যন্ত মূসক অব্যাহতির দাবি

ফাইল ফটো

স্থানীয় পর্যায়ে মোটরসাইকেল ও এর যন্ত্রাংশ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ২০২৭ সাল পর্যন্ত মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে মোটরসাইকেল ম্যানুফাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমএমইএবি)।

করোনাভাইরাসজনিত অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা ও তার পরবর্তীতে এ শিল্প টিকিয়ে রাখা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, আমদানি ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও সর্বোপরি শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে এ দাবি জানিয়েছে।

সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট শিল্প মালিকদের সংগঠন এমএমইএবি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান খান এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এমএমইএবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

করোনাভাইরাসে বৈশ্বিক মহমারি ও অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য 'জনমুখী ও কল্যাণকর' একটি বাজেট প্রণয়ন করায় কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিনিয়োগঘন উৎপাদনমুখী ও সেবাখাতগুলো। মোটরসাইকেল উৎপাদন খাতও এর ব্যতিক্রম নয়। সরকারের ধারাবাহিক বিভিন্ন নীতি সহায়তা এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ও উদ্যমের কারণে মোটরসাইকেল উৎপাদন শিল্প বাংলাদেশের একটি দ্রুত উদীয়মান শিল্প হিসেবে বিকশিত হয়েছে। ক্রমান্বয়ে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদনমুখী খাত হিসেবেও আবির্ভুত হয়েছে।

এ শিল্পের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যকে ২০২০ সালের ‘প্রোডাক্ট অব দ্যা ইয়ার’ ঘোষণা করেছেন। যেখানে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য হিসেবে মোটরসাইকেল শিল্প অন্তর্ভুক্ত। জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬ অনুসরণ করে ২০১৮ সালে ‘মোটরসাইকেল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা, ২০১৮’ প্রকাশ করা হয়। নীতিমালার লক্ষ্যগুলো হচ্ছে- স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেলের উৎপাদন ২০২১ সালের মধ্যে ন্যূনতম ৫ লাখ এবং ২০২৭ সালের মধ্যে ১০ লাখে উন্নীত করা। প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে মানসম্মত মোটরসাইকেল সরবরাহ, এ শিল্প থেকে জিডিপি’র অবদান ২০২৫ সালের মধ্যে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করা, ২০২৭ সালের মধ্যে ন্যূনতম ৫০ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান ৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১৫ লাখে উন্নীত করা। 

এ বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, নীতিমালার একাধিক স্থানে মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক-কর অব্যাহতিসহ অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। যা এ শিল্পের উন্নয়নে সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে। তাছাড়া, মোটরসাইকেল উৎপাদন শিল্প হালকা প্রকৌশল শিল্প হিসেবে জাতীয় শিল্পনীতিতে উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতভুক্ত এবং অটোমোবাইল শিল্প হিসেবে অগ্রাধিকার খাতভুক্ত।

জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬ এর অনুচ্ছেদ ৪.৪ অনুযায়ী অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতসমূতে প্রদত্ত বিশেষ প্রণোদনা ও শুল্ক-কর অব্যহতি দেওয়া হবে এবং এ ধরনের সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে উচ্চ অগ্রাধিকার শিল্পখাত প্রাধান্য পাবে, যার অন্যতম দাবিদার মোটরসাইকেল উৎপাদন শিল্প। এ ধারাবাহিকতায় এ শিল্পে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুল্ক, ভ্যাট ও কর অব্যাহতি দিয়ে আসছিল।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সরকারের প্রদত্ত নীতি সহায়তার আলোকে এ খাতে দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও তৎপর রয়েছে। এর ফলে ইতোমধ্যেই হোন্ডা, সুজুকি, ইয়ামাহা, হিরো, টিভিএস -এর মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাংলাদেশে উৎপাদন শুরু হয়েছে। যাতে দেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক বিনিয়োগ  রয়েছে।  তাছাড়া, সম্পূর্ণ দেশীয় মালিকানাধীন মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রানার অটোমোবাইল লি., নিউ গ্রামীণ মোটরস, রোডমাস্টার বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত মান সমৃদ্ধ শিল্পে বিশ্বে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে। বর্তমানে এ শিল্প খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ আট হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোটরসাইকেল এখন আমাদের সার্কভুক্ত ভুটান, নেপালসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর ফলে ক্রমশ একদিকে যেমন মোটরসাইকেল আমদানির বিপরীতে ব্যয় কমছে ও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে এ পণ্যটি রপ্তানির মাধ্যমে বৈিেদশক মুদ্রা দেশের রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতায় এ শিল্প মারাত্মক হুমকির মুখে। বিগত দুই মাসেই এ শিল্পে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা, যা আগামী এক বছরে ৭২০০ কোটি টাকা হতে পারে। ফলে, প্রায় ৮০০০ কোটি টাকার দেশি বিদেশি বিনিয়োগ এখন অনিশ্চয়তার মুখে এবং এ শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৫ লাখ কর্মী জীবিকা হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত ও দিশেহারা। ফলে সরকারের সহায়তা ছাড়া এ খাত টিকিয়ে রাখাই এখন অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে।

এ অবস্থায় ২০২৭ সাল পর্যন্ত মূসক অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার না করে তা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে মোটরসাইকেল ম্যানুফাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমএমইএবি)।


হাসনাত/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়