ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

যুবলীগ-ছাত্রলীগের বিতর্কিত নেতাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে নামছে দুদক

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যুবলীগ-ছাত্রলীগের বিতর্কিত নেতাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে নামছে দুদক

ক্যাসিনো ব‌্যবসা, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়া আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবলীগ- ছাত্রলীগের বিতর্কিত নেতাদের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তাদের সম্পদের বিষয়ে ইতিমধ্যে খোঁজ নেয়া শুরু করেছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা। অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহও করা হয়েছে। শিগগরিই আসছে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত। তবে তফসিলভুক্ত না হওয়ায় বেসরকারি পর্যায়ে ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সংক্রান্ত সব অপরাধের অনুসন্ধান করতে পারবে না দুদক।

দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান বিষয়টি নিশ্চিত করে মঙ্গলবার রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাদের কথাই বলেন না কেন সবারই তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা কিংবা টেন্ডার কমিশনের সঙ্গে যাদের নামই আসছে সবারই তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। আমদের কাজ অব্যাহত রয়েছে। অনুসন্ধান করার মতো যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। আমরা অনুসন্ধান করব।

তিনি বলেন, ক্যাসিনো কিংবা টেন্ডারবাজি সকল বিষয় দুদকের তফসিলভুক্ত নয়। এসবের বিরুদ্ধে পুলিশ ও র‌্যাব অভিযান চালাচ্ছে ও মামলা করছে। তারা তাদের মতো আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে। এখানে দুদকের করণীয় কিছু নেই। তবে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের বিষয়টি অবশ্যই দুদক দেখবে। এর সঙ্গে যদি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা কিংবা সরকারে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় আমাদের নজরে আসে তা অবশ্যই দুদক খতিয়ে দেখবে। এ বিষয়ে আগামী ২ অক্টোবর কমিশনের বিশেষ বৈঠক আছে। আশা করছি, ওখানেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে।

দুর্নীতির দায় নিয়ে ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শোভন-রাব্বানী পদত্যাগ করেছেন ইতোমধ্যেই। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, তারা বিভিন্ন কাজে কমিশন নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। ছাত্রজীবনেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। আয়ের উৎস না থাকলেও গাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প থেকেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও জাবি ছাত্রলীগের নেতারা কমিশন নিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত অডিও ফাঁস হয়েছে।

এদিকে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী যুবলীগের নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীমকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। ২০ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডির কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালিয়ে ক্লাবের সভাপতি কৃষকলীগের নেতা সফিকুল আলম ফিরোজসহ পাঁচজনকে অস্ত্র-গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। ক্যাসিনো ব্যবসার নিয়ন্ত্রক বিতর্কিত এই নেতাদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন ধারায় ডজন খানেক মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে র‌্যাব ও ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যুবলীগ নেতা খালেদ স্বীকার করেছেন, নামে-বেনামে তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ আছে। বিদেশেও তার সম্পদ আছে। নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে বাড়ি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। আছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। খালেদের কাছ থেকে প্রভাবশালী আরো অনেকের নাম জানা গেছে।

ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) খালেদ ও শামীমের যাবতীয় ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। ঘুষ লেনেদেনের তথ্য থাকায় গণপূর্তের সাবেক দুই প্রকৌশলীর ব্যাংক হিসাবও চেয়েছে এনবিআর।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবর অনুয়ায়ী, ঢাকায় ৬০টির মতো ক্লাবে ক্যাসিনোসহ জুয়ার আসর বসতো নিয়মিত। এর সূত্রে ধরেই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হোতার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। খুঁজে বের করা হচ্ছে সম্পদ।

দুর্নীতিসহ অপরাধের বিভিন্ন তথ্য থাকায় ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ ১৪ নেতার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্রাট কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক ও বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ আছে।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা  ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ, কাউন্সিলর আবু সাঈদসহ যুবলীগের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের লোকজন এ ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এখন পর্যন্ত মোট ১২৮ জনের নাম পাওয়া গেছে। চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে আজ (২৪ সেপ্টেম্বর) ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হারুনুর রশিদ এবং এক যুবলীগকর্মীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। দুটি বাসার চারটি সিন্দুক থেকে ৪ কোটি টাকার বেশি উদ্ধার করা হয়। একই দিনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ও ৭২০ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়।

 

ঢাকা/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়