ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যে চলে যায়, সে আর ফেরে না

শিহাব শাহরিয়ার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২২, ২ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে চলে যায়, সে আর ফেরে না

বিটিভির অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করছেন কাজী আরিফ। ছবি: লেখক

শিহাব শাহরিয়ার: কাজী আরিফ। চলে গেলেন দূর সীমানায়। দূর শাদা কুয়াশায়। সপ্ত সমুদ্র পেরিয়ে সপ্ত আকাশেরও ওপারে। যে পারের ঠিকানা আমরা জানি না। সেই ঠিকানায় তিনি কেমন থাকবেন, তাও আমরা জানি না। এই যে আমরা জানি না, এই অজানাতে লুকিয়ে আছে সত্যের গূঢ় রহস্য। ক্ষণিকের জীবন নিয়ে আমরাও দেখছি, এক এক করে সেই দূর রহস্যে পাড়ি জমাচ্ছেন পরিচিত প্রিয়জনরা। আমরা অসহায়, এই পাড়ি জমানোর সময় কিছুই করতে পারি না। অমোঘ মৃত্যুকালে দমটা বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধ হয়ে যায় চোখ। তারপর শাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হয় মুখ। মুখের কাপড়টা খুললে, কিছুক্ষণ দেখা যায় তাকে, তারপর আর নয়। দেখাদেখির খেলাও বন্ধ হয়। কেউ কেউ মাটির তলায়, কেউবা শ্মশানে পোড়ে ছাই হয়ে শূন্যে ওড়েন। হায় মৃত্যু, হায় সত্য! হায় ক্ষণিক জীবন! কাজী আরিফ, তিনিও পেলেন ক্ষণিক জীবন।   

কাজী আরিফ ছিলেন একাধারে খাঁটি বাঙালি, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী, মেধাবী স্থপতি, বাংলা চৈত্র-সংক্রান্তি উদযাপনের অন্যতম পথিকৃৎ, বসন্ত উদযাপনের প্রধানতম অধিকারিক আর এসব ছাপিয়ে তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত মানুষ। তিনি ছিলেন অমায়িক, মানবীয় গুণের অধিকারী। এদেশ, জাতি, মাটি ও মানুষের সত্যিকারের বন্ধু। তিনি সব সময় সুন্দর ও শ্রুতি-মধুর কণ্ঠে কথা বলতেন। দেখতে ছিলেন সুপুরুষ। কারো সঙ্গে রাগত স্বরে কথা বলতে অন্তত আমি তাঁকে দেখিনি। আমাকে খুব স্নেহ করতেন। আদর করে, বড় আপন করে বলতেন কখনো তুমি, কখনো তুই করে। মনে পড়ছে, যখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি, সেই ১৯৮৫ সালে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। সেটি সম্ভবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে অথবা বাংলাদেশ টেলিভিশনের কোনো আবৃত্তির অনুষ্ঠানে। সম্ভবত একইসঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল তাঁর সাবেক স্ত্রী বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী প্রজ্ঞা লাবনীর সঙ্গেও। এরপর থেকে ক্রমশ ঘনিষ্ট ও স্নেহভাজন হতে পেরেছি তাঁর।

মনে পড়ছে, ঢাকার ইন্দিরা রোডের বৃক্ষশোভিত একটি বাড়ি। যে বাড়িতে বাস করতেন কাজী আরিফ ও প্রজ্ঞা লাবনী। এই দুই প্রজ্ঞাবান বাঙালি তাদের বাড়িতে বাংলা বছরের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র-সংক্রান্তিতে আয়োজন করতেন দারুণ এক অনুষ্ঠান। এতে থাকত নানা রকমের বাঙালি খাবার, সংগীত, আবৃত্তি আর আড্ডা। আসতেন সংস্কৃতি অঙ্গনের অসংখ্য মানুষ। আমিও একবার দাওয়াত পেলাম। গিয়ে মুগ্ধ হলাম। এরপর বহু বছর গেছি। এখানে যেতাম শুধু কাজী আরিফ, আমাদের প্রিয় আরিফ ভাইয়ের আমন্ত্রণে। কোথাও দেখা হলে অথবা ফোনে বলে দিতেন, শিহাব চলে আসিস। এই বলাতে থাকত দারুণ আন্তরিকতা। এখন প্রতি বছর নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুল তলায় পহেলা ফাল্গুন যে বসন্ত-উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেই উৎসব উদযাপন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কাজী আরিফ। বাঙালিকে বাংলার প্রাণের উৎসবগুলোকে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে তাঁর চিন্তা-চেতনা ছিল অসাধারণ।

এই আন্তরিক ও চিন্তক শ্যামল মাটির মানুষটি মাতৃভূমির প্রতি অগাধ ভালবাসার টানে কিশোরোত্তীর্ণ বয়সে যোগ দিয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। মানুষটি ছিলেন বাঙালির মহান পুরুষ স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক সৈনিক। বঙ্গবন্ধুর গড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য ও মেধাবী স্থপতি। মধুর কণ্ঠে আবৃত্তি করে দেশ ও বিদেশে খ্যাতিমান হয়ে ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে। সত্যি এক্ষেত্রে অসাধারণ দক্ষতা ছিল তাঁর। অনেকেই বলেন, বাংলাদেশের এই শিল্প মাধ্যমে তাঁর জুড়ি বেশি নেই। মঞ্চ বলেন, গণ-মাধ্যমে বলেন, কাজী আরিফ তাঁর মিষ্টি গলা দিয়ে কবিতা উচ্চারণ করে কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের কবিতা হোক, সংগ্রামী বা জাগরণী কবিতা হোক অথবা প্রেম-প্রকৃতির কবিতা হোক, তাঁর অনিন্দ কণ্ঠ, বাচনভঙ্গি, বলিষ্ঠ উচ্চারণে দর্শকদের আমোদিত, আকুলিত, মন্ত্রমুগ্ধ ও হৃদয়গ্রাহী করে তুলতেন। বাংলাদেশের আবৃত্তিশিল্প আধুনিক রূপ দিতে তিনি ছিলেন অনন্য। তাঁর একটি আবৃত্তি অ্যালবামের নাম ‘পত্রপুট’।

কিন্তু কি যেন হলো? তাঁর ঘর ভেঙে গেল, দেশও ছেড়ে দিলেন। পাড়ি জমিয়ে কিছুটা জীবন বাস করলেন সুদূর আমেরিকা। এসব আমি জানি না। জানতে চাইও না। কেননা মানুষের ব্যক্তিগত আবেগ, বোধ ও বিষয় অনেক সময় ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। অনেক সময় অমানসিক চিন্তায় শরীরে বাসা বাঁধে মরণের অসুখ। ব্যক্তি জীবনে না ঢুকেই এটুকু অনুমান করে বলা যায়, ঘর ভেঙে যাওয়ার আঘাত কি তাঁকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে? এই জন্যে কি তিনি ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের অধিবাসী হয়ে গিয়েছিলেন? ঘরের কেউ ঢাকা, কেউ কানাডা, কেউ আমেরিকায় আলাদা আলাদা জীবন বেছে নিয়েছেন। আবারও বলি, আমি জানি না। আবারও কিন্তু? কিন্তু আরিফ ভাইয়ের মত একজন বড় মাপের মানুষের শেষ দিককার অসহায় ও নিঃসঙ্গ জীবন আমাকে ব্যক্তিগতভাবে কষ্ট দিয়েছে। আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে, কি এমন ঘটে যাতে আমরা ক্ষণিকের কয়েকটি বছর যাপন করার জন্য কেউ নায়াগ্রা, কেউ হার্ডসন আর কেউ বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী হই? একই নদীর কল স্রোতের ধ্বনি কেন আমরা একত্রে শুনি না?

কাজী আরিফ শেষ নিঃশ্বাস ফেললেন হার্ডসন নদীর তীরে। বুড়িগঙ্গা আর পদ্মার বিধৌত মানুষ ছিলেন তিনি। নদী পদ্মার তীরঘেষা রাজবাড়ী জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন, বেড়ে উঠেছেন কর্ণফুলি ও তুরাগের তীরবর্তী চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। এই ঢাকা থেকেই সর্বশেষ চলে যান ১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে। এক মাসের ব্যবধানে জীবনবিহীন অসাড় দেহে ফিরে এলেন প্রিয় ঢাকায়।

 


ঢাকা-নিউইয়র্ক করছিলেন বেশ কিছুদিন। আগের বার যখন ঢাকা এলেন, এসেই আমাকে ফোন দিলেন। বললেন, শিহাব আমি কাল এসেছি। আমি বললাম, স্বাগতম, খুবই আনন্দের খবর। থাকবেন কতদিন?
থাকবো, থাকবো কয়েকদিন। ওপেন হার্ট করে এসেছি, শরীরটা বেশি ভাল না।
বললাম, আমার অফিস জাদুঘরে একটি আবৃত্তির অনুষ্ঠান হবে, আপনি কি আসতে পারবেন? বললেন, হ্যাঁ আসবো, তুই সময় মত আমাকে ফোন দিস।
যথাদিনে ফোন দিলাম। তিনি সাদা পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরে এলেন, আবৃত্তি করলেন দরাজ কণ্ঠে। সামান্য সম্মানি হাতে দিলাম। সম্মানির খামটি হাতে নিয়ে, আমার পিঠে ডান হাতটি রেখে বললেন, আবৃত্তি করে এখন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানি পাওয়া যায়, এটি একটি সুখবর। জানিস, আমি এবার আসার আগে আমেরিকার কয়েকটি শহরে আবৃত্তি করে বেশ কয়েক শ’ ডলার সম্মানি পেয়েছি। তারপর তাঁকে মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত আমার ‘প্রেমের কবিতা’ গ্রন্থটি উপহার দিলাম। তিনি বইটির প্রশংসা করলেন এবং হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে চলে গেলেন।

আবার ঢাকায় এলেন সম্ভবত মাস দুয়েক আগে। একই ভঙ্গিতে বললেন, শিহাব এসেছি। আমার ভালই লাগে যে, এতো বড় মাপের একজন মানুষ, ঢাকায় এসেই আমাকে ফোনে জানায়, আহা। আমি বললাম, আরিফ ভাই, এবার আমার উপস্থাপিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাহিত্যানুষ্ঠান ‘কথা ও কবিতা’য় আপনাকে ডাকবো, আসতে পারবেন?
বললেন, অবশ্যই পারবো। তারপর ডাকলাম একদিন, কিন্তু সম্ভবত শরীর খারাপের কারণে সেই রেকর্ডিং-এ আসতে পারেননি। পরের রেকর্ডি-এ আবার ডাকলাম। তিনি যথারীতি, যথাসময়ে এসে হাজির হলেন। এসে প্রথমে বসলেন, ভিআইপি রেস্ট রুমে। তাঁর পরনে বাঙালি পুরুষের আদি এবং অকৃত্রিম সেই পোশাক শাদা পাঞ্জাবি ও পায়জামা। তাঁকে চা-নাস্তা দেয়া হলো, কিন্তু তিনি কিছুই খেলেন না। বললেন, ডাক্তারের পরামর্শে বাইরের খাবার একদমই খাই না। এরপর আমরা স্টুডিওতে গেলাম। তাঁকেই প্রথম কবিতা পড়তে আমন্ত্রণ জানালাম। তিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন। পড়লেন মুক্তিযুদ্ধের একটি কবিতা। পড়ার সময় খেয়াল করলাম, তাঁর আগের তেজোদীপ্ত কণ্ঠস্বর আর নেই। থাকবেই বা কি করে? ওপেন হার্ট করা শরীর। প্রযোজক বললেন, আরিফ ভাই কবিতাটির আরেকটি টেইক (রেকর্ড) করতে চাই। তিনি বললেন, না, আর পারবো না। পরে তিনি মুক্তিযুদ্ধের আরো একটি কবিতা আবৃত্তি করলেন। আবৃত্তি করার সময় আমার আইফোন দিয়ে তুললাম তাঁর তিনটি একক ছবি ও অনুষ্ঠানে আসা অন্যান্য অতিথি বরেণ্য শিশু সাহিত্যিক সুকুমার বড়ুয়া, কবি সরকার মাসুদ, লেখক মুম রহমান, প্রযোজক ইমাম হোসেইনসহ একটি গ্রুপ ছবি উঠালাম। এরপর তাঁর হাতে তুলে দিলাম আমার সর্বশেষ প্রকাশিত কবিতার বই ‘দূরে ওড়ে শঙ্খচিল’। তিনি চলে গেলেন।

এই অনুষ্ঠানটির প্রচার ছিল ২ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে। আমি আগের দিন ১ এপ্রিল তাঁকে ফোন করলাম। বললাম, আরিফ ভাই, আগামীকাল রোববার দুপুরে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হবে, আপনি অনুগ্রহ করে দেখবেন। তিনি বললেন, না রে ভাই, আমি আজই নিউইয়র্ক চলে যাচ্ছি, দেখা হবে না, কারণ আমি তখন থাকবো দূর আকাশে। বললাম, অনুষ্ঠানের সম্মানি চেকটি হয়ে গেছে, সেটি কাকে দিবো? বললেন, ওটা বিটিভি আমার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবে, তোমার কষ্ট করার দরকার নেই। শোনো আশা করি, এবার গিয়ে তোমার কবিতার আবৃত্তি করবো। তবে আমার আবারো একটি ওপেন হার্ট সার্জারি আছে, আমার জন্যে দোয়া করো, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ শিহাব, তুমি ভাল থেকো ভাই। তারপর দূর আকাশে উড়লেন, গিয়ে পৌঁছালেন নিউইয়র্ক।

২১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে ভাইবারে আমাকে ম্যাসেজে লিখলেন: ‘শিহাব, আমি হাসপাতালে। আগামী ২৫ এপ্রিল ২০১৭ তারিখ আমার Open Heart Surgery হবে। Mitral Valve Replace/Repair করবে, একটা Artery Bipassও করবে। হাসপাতালের নাম: Mount Sinai St. Luke’s Hospital, NY. স্থপতি কাজী আরিফ।’
আমি উত্তরে লিখলাম, ‘আরিফ ভাই সালাম, আপনি হাসপাতালে এটি আমি জানি, কবি শামস আল মমীন আমাকে ফোনে জানিয়েছেন। আর আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহ আপনার ছবিসহ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে, ওখানেও দেখেছি। আপনার জন্য দোয়া করছি।’
সেদিনই যুক্তরাষ্ট্রের সকালে, তিনি ধানখেতবেষ্টিত সূর্যোদয়ের ছবি দিয়ে আমাকে লিখে পাঠালেন, সুপ্রভাত। আমি বললাম, সুপ্রভাত আরিফ ভাই। এরপর আরেকটি ছবি পাঠিয়ে নিচে লিখলেন, ‘জমে রয় এ মনে/ কৃতজ্ঞতার বিন্দু শিশির/ একেবারে আনমনে...’। আবার আরো একটি সূর্যোদয়ের ছবি পাঠিয়ে লিখলেন:
বাদামওয়ালা আর পাঠানের বাৎচিত ...
- বাদাম খাইলে কি হয়?
- আক্কল বাড়ে!
- কেমনে?
- ১ কেজি চাইলে কত দানা কইতে পারো?
- নাহ্!    
- এই লও কয়ডা বাদাম খাও।
- খাইলাম!
- এখন কও ১ ডজনে কয়ডা কলা?
- ১২ টা!
- আক্কল খুলছে না!
- তাইতো! জলদি দুই কেজি দাও! আইজ গুষ্ঠি শুদ্ধা বাদাম খাওয়ামো! শালার আক্কল না হইয়া যাইব কই!!

আমি লিখলাম, দারুণ। আমি জানি না এই লেখাটি কেন লিখলেন? তারপর ২৪ এপ্রিল ২০১৭ তারিখ। আবারো সূর্যোদয়ের ছবি সংবলিত বৃক্ষের মাঝখানে লেখা সুপ্রভাত বাংলাদেশ। আমি বললাম, গুড মর্নিং। এরপর তিনি লিখলেন, ‘একলা বয়স্ক মানুষ, কফি শপে ঢুকলাম বিকেলে টিফিন করতে। দেখি একটাও টেবিল খালি নেই, সব জোড়ায় জোড়ায় বসে গল্প করে চলেছে, উঠবার কোনো লক্ষণ নেই কারো। এ তো মহা সমস্যা! হলের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে পকেট থেকে ফোনটা বার করে সাইলেন্ট করে কানে লাগিয়ে বেশ জোরে জোরে বাঁজখাই গলায় বললাম, “আরে, তোর বউ তো দেখছি আরেকজনের সঙ্গে কফি শপে বসে আড্ডা দিচ্ছে ...।” বলার সঙ্গে সঙ্গে দশটার মধ্যে আটটা টেবিল খালি! আর কোনো সমস্যা রইলো না। (সংগৃহীত)।

আমি লিখলাম, দারুণ, শালা পরকিয়ার বাচ্চারা সব পালালো ... হা হা... জানি না কেন সংগ্রহ থেকে এই মজার বাস্তবসম্মত জীবনমুখি জোকসটি আমাকে লিখলেন? এরপর আমি তাঁকে ভাইবারে ফোন কল দিলাম। তিনি ওপাশ থেকে বললেন, হ্যাঁ শিহাব, খুশি হলাম তুমি ফোন করেছো। আমি একা এই হাসপাতালে, বড় নিঃসঙ্গ লাগছে, ভয়ও করছে। আমি বললাম, ভয়কে জয় করতে হবে আরিফ ভাই। ওপাশ থেকে তিনি আমার জন্যে সবাইকে দোয়া করতে বললেন।

এই শেষ, আর কোনো কথা হয়নি, হয়নি লেখা চালাচালি। হবেও না কোনো দিন। তিনি চলে গেছেন ওপারে বহু দূরের অজানাতে। প্রশ্ন জাগে, বুকের ভিতর কত অসুখ থাকলে দু-দু’বার খুলতে হয় বুক? কোনো কি অভিমান ছিল কারোর প্রতি? শুনেছি নিউইয়র্কে এক আত্মীয়ের বাসায় কোনো রকম থাকতেন! ঘরের মানুষটি পর হলে, তিনি কি খুবই ব্যথা পেয়েছিলেন? না অন্য কোনো বেদনা? জানি এসব উত্তর আর পাওয়া যাবে না, এখন আর প্রয়োজনও নেই, কারণ তিনি চিরতরে চলে গেছেন, ফিরবেন না আর কোনোদিন। তাঁর জন্যে আমাদের বুক ভারী হয়ে আসছে, চোখ ভরে আসছে জল! হায় বেদনার জল!

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ মে ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়