যেখানে দাঁড়ানো নিষেধ, সেখানেই দাঁড়ায় বাস
শাহবাগ মোড়ে রাস্তার মাঝেই বাসে উঠছেন যাত্রীরা (ছবি : আরিফ সাওন)
রাজধানীর শাহবাগ মোড়। সময় ৩টা ৩৪ মিনিট। সিগন্যাল পড়েছে। মৎস্য ভবনের দিক থেকে আসা ট্রান্স সিলভা পরিবহনের একটি বাস, একটি সিএনজি অটোরিকশা ও দুটি প্রাইভেট কার ঠিক জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর এসে দাঁড়ালো। আরেকট গাড়ি দাঁড়ালো জেব্রা ক্রসিং পার হয়ে।
পথচারীদের একটু দুর্ভোগে পড়তে হলো। জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর গাড়ি থাকায় এলোমেলাভাবে তাদের রাস্তা পার হতে হলো। বাস আর সিএনজির মাঝ দিয়ে যেতে হলো রাস্তার অপর পাশে।
ঢাকা মেট্রো ব ১৫-৪৯৬৯ নম্বরের ওই বাসের চালকের কাছে গিয়ে জানতে চাওয়া হলো, তিনি যে কাজটা করেছেন, এটা ঠিক করেছেন কি না? চালক বলেন, ‘জানি, এটার ওপরে বাস থামানো ঠিক না।’ তাহলে কেন দাঁড়িয়েছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নিরুপায়।’ এরপর সিগন্যাল ছেড়ে দেয়। তিনি গাড়ি চালিয়ে চলে যান।
এমন চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে।
জাদুঘরের সামনে লেখা আছে, ‘এখানে বাস দাঁড়ানো নিষেধ, দাঁড়ালে দণ্ড।’ কিন্তু দেখা গেল, যাত্রী ওঠানো-নামানোর জন্য বেশিরভাগ বাস সেখানেই দাঁড়িয়েছে। যাত্রী ওঠা-নামা শেষ হলেও অনেক বাস অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানোর জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। বেশি দাঁড়ায় মোহাম্মদপুরগামী এফটিসিএল পরিবহনের বাস।
রোববার বেলা আড়াইটা থেকে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান করে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট বাস স্টপেজে কোনো গাড়িতে যাত্রী ওঠানো বা নামানো হয় না। সিগন্যালে যাত্রী নামানো বা ওঠানো হয়। আবার সিগন্যাল ছেড়ে দিলে চলন্ত অবস্থায় রাস্তার মাঝে যাত্রী নামানো বা ওঠানো হয়।
বাসচালকের সহকারীরা (হেলপার) শুধু খেয়াল করেন, কাছাকাছি বা সামনে পুলিশ আছে কি না। যে পাশে পুলিশের চেকপোস্ট থাকে সে পাশে কোনো গাড়ির দরজা খোলে না। চেকপোস্ট পার হলেই দরজা খোলা হয়।
চলন্ত গাড়িতে ওঠার জন্য সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, ‘গাড়ি যদি নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়াতো তাহলে আমাদের এভাবে রাস্তার মাঝে এসে দাঁড়াতে হতো না। আমাদের তো যেতেই হবে। তাই তারা যেখান থেকে ওঠায় সেখান থেকেই ওঠতে হয়, যেখানে নামায় সেখানে নামতে হয়। আমরা সাধারণ মানুষ জিম্মি।’
সড়কের বিশৃঙ্খলা দেখিয়ে একজন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দেখেন, এখানে কোনো শৃঙ্খলা আছে? সব গাড়ি একসাথে মুভ করছে। যে যেভাবে খুশি বাস চালাচ্ছে। এসব কারণেই তো যানজট লাগে।’
এ সময় শাহবাগে দুজন পুলিশ ও দুজন পতাকাবাহী লোককে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। যে যেখানে সুযোগ পান সেখানেই গাড়ি একটার সাথে আরেকটা লাগিয়ে দেন। মোটরসাইকেলের অনেক চালকই সিগন্যাল মানেন না। একটু ফাঁক পেলেই তারা গাড়ির ফাঁকফোকর দিয়ে চলে যান।
শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ট্রাফিক বক্সে দায়িত্বরত মাজহারুল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সাতটা মামলা দিয়েছি শুধু মাঝপথে যাত্রী ওঠানো-নামানোর জন্য।’
লোকবল কম থাকায় সমস্যা হয়, জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের লোকবল কম। এখানে আমিসহ পাঁচজন দায়িত্ব পালন করছি। লোকবল বেশি থাকলে আমাদের দেখে যেখানে সেখানে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠাতে ও নামাতে পারত না।’
ঢাকা/সাওন/জেনিস/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন