ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

যোগাযোগের দুরবস্থায় আকর্ষণ হারাচ্ছে রেমা–কালেঙ্গা

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ১৮ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যোগাযোগের দুরবস্থায় আকর্ষণ হারাচ্ছে রেমা–কালেঙ্গা

রেমা–কালেঙ্গার আকর্ষনীয় মুখপোড়া হনুমান

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ প্রাকৃতিক বনভূমি রেমা–কালেঙ্গায় যাওয়ার প্রধান অন্তরায় যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থা। এ কারণে ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত অভয়ারণ্যটি দীর্ঘ সময়েও ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষনীয় হয়ে উঠতে পারেনি।

রেমা–কালেঙ্গাকে জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্যে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল হিসাবে গণ্য করা হয়। বর্তমানে এই অভয়ারণ্যের আয়তন ১৭৯৫.৫৪ হেক্টর। দেশের যে কয়েকটি প্রাকৃতিক বনভূমি এখনো মোটামু্টি ভাল অবস্থায় টিকে আছে, রেমা-কালেঙ্গা তার মধ্যে অন্যতম।

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত এই অভয়ারণ্যের প্রকৃতি  চিরহরিৎ।  রয়েছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণি।  প্রাপ্ত এক তথ্যমতে, এই বনে রয়েছে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, সাত প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৬৩৮ প্রজাতির গাছপালা-লতাগুল্ম । আছে বিরল প্রজাতির পাখি ভীমরাজ, টিয়া, হিল ময়না, লাল মাথা কুচকুচি, সিপাহি বুলবুল, বসন্তবৌরি, শকুন, মথুরা, বনমোরগ, পেঁচা, মাছরাঙা, ঈগল, চিল । আছে উল্টোলেজি বানর, রেসাস ও নিশাচর লজ্জাবতী বানর, পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালি, মুখপোড়া হনুমান, চশমাপরা হনুমান, উল্লুক, মায়া হরিণ, মেছোবাঘ, দেশি বন শুকর, গন্ধগোকুল, বেজি, সজারু ।  রয়েছে কোবরা, দুধরাজ, দাঁড়াশ, লাউডগা এমন আঠারো প্রজাতির সাপ।
 

রেমা–কালেঙ্গায় যাওয়ার কর্দমাক্ত পথ


সব মিলিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার পর্যাপ্ত উপকরণ থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা সেভাবে গড়ে ওঠেনি।

পর্যটকরা এ অভয়ারণ্যে যেতে চুনারুঘাট উপজেলা শহর অবধি আসার পর বাকি পথটুকু কষ্ট স্বীকার করে দুর্ভোগের মধ্যদিয়েই পার হতে হয়। অর্ধেক পাকা সড়ক ও বাকিটুকু কাঁচা, তাও কর্দমাক্ত। ঝুঁকি আর কষ্ট উপেক্ষা করেই তারপর পৌঁছতে হয় রেমা–কালেঙ্গায়।

এতে করে পর্যটকদের দুর্ভোগতো পোহাতে হচ্ছেই, অন্যদিকে পর্যটক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নাজুক। রাত যাপনে নামমাত্র ব্যবস্থা। বনের ভেতরে রিসোর্ট নির্মাণ হলেও, চালু হয়নি। খাবারের জন্য নেই মানসম্মত হোটেল। এসব দুর্ভোগ উপেক্ষা করেও  বৃক্ষবেষ্টিত মনোরম দৃশ্য ও বন্যপ্রাণি অবলোকনের নেশায় কষ্ট স্বীকার করেই আসছে পর্যটক।

এ অভয়ারণ্যে ঘুরতে আসা পরিবেশপ্রেমিক ইমন আহমেদ জানান, কাঁদাভরা রাস্তা অতিক্রম করে  এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে আসার  সড়কটির সংস্কার ও পর্যটক থাকার সু-ব্যবস্থা করা হলে দিন দিন দর্শনার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।’
 

রেমা–কালেঙ্গায় নির্মিত রিসোর্টটি এখনো চালু হয়নি


ঢাকা থেকে আগত সুজন মিয়া, কাজল ও শায়েস্তাগঞ্জের বাসিন্দা জুনাইদ আহমদও একই অভিযোগ করলেন। 

হবিগঞ্জ জেলার সহকারী বন সংরক্ষক এজেডএম হাছানুর রহমান বলেন, ‘এ অভয়ারণ্যটি রক্ষা করতে বনরক্ষীরা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। পর্যটক সমাগমের কারণে এখানে রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়েছে। তবে পুরোপুরি চালু হয়নি। এখানে আসার বাকী রাস্তা ও রিসোর্ট চালু হলে পর্যটক সমাগম বৃদ্ধি পাবে।’

হবিগঞ্জ এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মোঃ আবু জাকির সেকান্দর জানান, কিছু রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। বরাদ্দ  আসলে বাকীটুকু পাকাকরণ করা হবে।



রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/১৮ মার্চ ২০১৭/মামুন চৌধুরী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়