ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রংপুরে একই পরিবারের ৫ সদস্য থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১৪ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রংপুরে একই পরিবারের ৫ সদস্য থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর : রংপুরে একই পরিবারের পাঁচ সদস্য থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।

এর আগে এই পরিবারের দুই সদস্য একই রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকবছর চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায়।

মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনি ইউনিয়নের ভাংনি আদর্শপাড়া গ্রামের এই পরিবারটি বর্তমানে অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ আছে।

রংপুর নগরী থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রাম হচ্ছে ভাংনি আদর্শপাড়া। এই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সোলায়মান আলী একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। কয়েক বছর আগে অবসরে যান সোলায়মান। তার ১০ বিঘার মতো জমি ছিল। এই জমি চাষাবাদ করে মোটামুটি সুখেই চলছিল এই পরিবার।

কিন্তু পরিবারের সদস্যদের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়া ও তাদের চিকিৎসা করাতে সোলায়মান সব জমি বিক্রি করে দিয়েছেন ইতোমধ্যে। ১০ বছর আগে প্রথমে তার স্ত্রী সখিনা বেগম মারা যায় থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। এরপর  এক এক করে তার ৫ ছেলে ও এক মেয়েও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়। এরই মধ্যে ১৫ বছর বয়সী ছেলে সাইফুল থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এখন তার দুই ছেলে রবিউল ইসলাম (৩০) , শাহিন (২৫) ও একমাত্র মেয়ে তাসনিমা বেগম , বড় ছেলে শহিদুল ইসলামের দুই ছেলে আহাদুজ্জামান (১৩) ও আবু নাইম (৫) থ্যালাসেমিয়া রোগে ভুগছে।

এদের প্রত্যেককে এক মাস পর পর রক্ত দিতে হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ পথ্য রয়েছে । গড়ে তাদের চিকিৎসার জন্য মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার প্রয়োজন। আগে জমি-জমা যা ছিল তা বিক্রি করে করে চিকিৎসা করিয়েছেন। এখন শেষ সম্বল বাসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই সোলায়মানের। ফলে অর্থের অভাবে সবার চিকিৎসা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর অসুস্থ রবিউল ইসলাম। সে এইচএসসি পাস করার পর এই রোগে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসার জন্য ঢাকার পিজি হাসপাতালে দেড় মাস ভর্তি ছিল সে। তার জন্য প্রতিদিন  ৫০০ টাকার ওষুধ প্রয়োজন। বর্তমানে টাকার অভাবে তার চিকিৎসা পুরোপুরি বন্ধ।

রবিউল জানান, পরিবারের মধ্যে একমাত্র ভাই শফিকুল ইসলাম ছাড়া প্রায় সব ভাই বোন এই রোগে আক্রান্ত। আর শফিকুলও বেকার। তার কোনো আয় রোজগার নেই। তার একটা চাকরি বা আয়ের পথ করে দেওয়া গেলে ভাই বোনদের চিকিৎসা না হোক, অন্তত দু-বেলা দু-মুঠো ভাত খেতে পারতো তারা।

রবিউল এখন পুরোপুরি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন বেশীর ভাগ সময় বিছানায় শুয়ে কাটায়। সে বলে, ‘আমি বাঁচতে চাই।’

‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রতি যদি একটু সদয় হতেন’ একথা বলে সে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে।

রবিউলের ছোট ভাই শাহিন জানায়, তার প্রতি মাসে রক্ত দিতে বলেছে চিকিৎসকরা। ওষুধ সেবন করতে বলেছে। কিন্তু টাকা কোথায় পাবে।

সে জানায়, অর্থের অভাবে তাদের চিকিৎসা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শাহিনও বাঁচতে চায় । তার আকুতি তাদের সাহায্যে কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি এগিয়ে আসুক।

একমাত্র বোন তাসনিমার বিয়ের পর এ রোগ ধরা পড়ে। একটি বাচ্চাও হয়েছে তার। ডাক্তাররা বলেছে তার সন্তানও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সে রকম লক্ষণও নাকি দেখা ডাক্তাররা জানিয়েছেন।

বড় ভাই শহিদুল ইসলাম এ রোগে আক্রান্ত না হলেও সে হার্ট অ্যাটাকের কারণে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। তার মুখ বাঁকা হয়ে গেছে। ভাল করে কথা বলতে পারেন না। তার দুই ছেলে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না।

শহিদুল জানায়, পরিবারের ভাই-বোনদের মধ্যে একমাত্র সুস্থ শফিকুল ইসলাম। সে এইচএসসি পাস।একটি চাকরির ওয়েটিং লিস্টে তার নাম আছে। তবে কবে নাগাদ চাকরি হবে তা জানেন না তিনি।

শহিদুল বলেন, আমাদের জমি-জমা যা ছিল তা বিক্রি করে ভাই-বোনদের চিকিৎসা করানো হয়েছে। এখন এমন কিছু নেই যা বিক্রি করে চিকিৎসা করানো যাবে। তার (শফিকুল) যদি একটা সরকারি চাকরির ব্যবস্থা হতো তাহলেও অন্তত পরিবারটি খেয়ে পরে বাঁচতে পারতো।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সিরাজুল ইসলাম জানান, একটি পরিবারের সবার দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হবার ঘটনা বিরল। তবে উন্নত চিকিৎসা করালে তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।



রাইজিংবিডি/রংপুর/ ১৪ মে ২০১৭/নজরুল মৃধা/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়