ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রপ্তানির নামে পাচার ২০০ কোটি টাকা, তদন্তে এনবিআর

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০০, ৩০ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রপ্তানির নামে পাচার ২০০ কোটি টাকা, তদন্তে এনবিআর

এম এ রহমান মাসুম: আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে মাটির তৈরি টেরাকোটা টাইলস রপ্তানির নামে ২০০ কোটি টাকা পাচারের রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

ঝিনাইদহের এসবি এক্সিম নামের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রয়েছে এমন গুরুতর অভিযোগ। এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) এরই মধ্যে অভিযোগের তদন্ত নেমেছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে সিআইসির উর্ধ্বতনরা কেউ মুখ খুলছেন না।

তবে এনবিআরের উর্ধ্বতন অপর একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করে বলেছেন, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরপরই তাদের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর তদন্তে নেমেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছে।

এ বিষয়ে গত ১৯ জুলাই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেছিলেন, ‘অর্থ পাচারকারী যতই শক্তিশালী হোক, এমনকি আমার পরিবারের সদস্য হলেও তাকে শাস্তির আওতায় আসতে হবে। যদি তিনি (শাহজাহান) করে থাকেন, তিনি যেই হোন, যত শক্তিশালী হোন, তার বাড়ি যেখানেই হোক, তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় আসতে হবে।

তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া তদন্তাধীন বিষয়টি নিয়ে কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন।

অর্থপাচারের অভিযোগের বিষয়ে এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে মাটির তৈরি টেরাকোটা টাইলস রপ্তানির বিপরীতে ২০০ কোটি টাকা দেশে আসছে না।  যদিও ওই রপ্তানি বিল কিনেছে এসবি এক্সিম গ্রুপ। ইতিমধ্যে ১৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। কিন্তু সেই রপ্তানির টাকাও দেশে আসছে না। ফলে ১৯০ কোটি টাকাও শোধ হচ্ছে না। অথচ ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ গ্রুপের চেয়ারম্যান নিজেদের (ওয়েবসাইটে) বাংলাদেশের একজন বড় বিজনেস গ্রুপ দাবি করেন। দুবাই ও সিঙ্গাপুরে তাঁর পাঁচ ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।  

অন্যদিকে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাত ও বিদেশে পাচারের বিষয়ে সত্যতা পাওয়ার পর শাহজাহান বাবলু ও কমার্স ব্যাংকের জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও দুদকে চিঠি দেয় বিএফআইইউ।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুসারে, এসবি গ্রুপকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের যে তিনটি প্রতিষ্ঠান টেরাকোটা টাইলস কেনার আদেশ দেয়, এর মধ্যে দুটির মালিকানায় বাংলাদেশিরা। এর মধ্যে হেন্ডিওয়্যার ইন্টারন্যাশনাল জেনারেল ট্রেডিংয়ের কর্ণধার বাংলাদেশের মোহাম্মদ রাফিউদ্দিন ও সাবিয়া আফরিন। আবার আল মাওয়াদ জেনারেল ট্রেডিংয়ের কর্ণধারও মোহাম্মদ রাফিউদ্দিন।  

প্রতিষ্ঠান দুটি চামড়াজাত পণ্য ও পশুর লোম নিয়ে ব্যবসার জন্য দেশটিতে নিবন্ধিত হলেও বাংলাদেশ থেকে টাইলস আমদানি করেছে বলে ব্যাংকের নথিপত্রে বলা হচ্ছে। আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মিলস্ট্রিম গ্লোবাল জেনারেল ট্রেডিং। এ তিনটি প্রতিষ্ঠানই ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭২টি ঋণপত্রের মাধ্যমে ৪ কোটি ১২ লাখ ৫২ হাজার ডলারের (৩৫০ কোটি টাকা) টাইলস আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলে।  

এসবি গ্রুপ যে টাইলস রপ্তানি করে, তার প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ১০ ডলার। বিদেশি চারটি ব্যাংক থেকে এসবি এক্সিম থেকে টাইলস কিনতে কমার্স ব্যাংকে ঋণপত্র আদেশ আসে। এ ব্যাংক চারটি নিজের দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। নিজ দেশে তাদের শাখাও নেই। কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণেও নেই এসব ব্যাংক। এসব ব্যাংক বৈশ্বিকভাবে ‘শেল ব্যাংক’ নামে পরিচিত।

বৈশ্বিক অর্থ পাচার প্রতিরোধ সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো শেল ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ ব্যাংকেরও এ নিয়ে কড়াকড়ি নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও এমন অনিয়মের ঘটনা ঘটায় বিস্মিত সংশ্লিষ্টরা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে এসবি গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। এমনকি ইমেইল পাঠিয়ে জানতে চাইলে তাদের কোনো বক্তব্য জানা যায়নি। 

শুধু তাই নয় এসবি গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহজাহান বাবলু ও ছয় ব্যাংক কর্মকর্তাসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে ২২ অক্টোবর প্রায় সাড়ে ২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুটি মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলার এজাহারে প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট তৈরি, বন্ধকী জমির জাল দলিল, নামজারির সার্টিফিকেট, ডিসিআর, দাখিলা, আরএস ও মহানগর খতিয়ানের কপি ইত্যাদি দাখিল করে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ওই টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। অদৃশ্য কারণে মামলাগুলো এফআরটি (অভিযোগ থেকে অব্যাহতি) হলেও এখনো অনুসন্ধান চলছে বলে জানা যায়।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জুলাই ২০১৯/এম এ রহমান/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়