ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রফিকুলের স্বপ্ন জয়

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৬, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রফিকুলের স্বপ্ন জয়

ছাইফুল ইসলাম মাছুম: বেড়ে উঠেছেন গ্রামের অন্য দশজনের মতো। পরিবারের সাত ভাইবোনের মধ্যে ছোট হওয়ায় সবার আদরের ছিলেন। শাসন তো দূরের কথা, কখনো বকাও খেতে হয়নি তাকে। স্কুল কলেজের পাঠ চুকিয়েছেন মফস্বলে। পরিবারের কেউ ভাবেননি এই ছেলে ভালো রেজাল্টের জন্য একদিন রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পাবেন। রফিকুল নিজেও কখনো ভাবেননি। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পাবো, এমন চিন্তা থেকে কখনো পড়িনি। পড়েছি ভালো কিছু করতে হবে এমন ভাবনা থেকে। তবে আমি যখন থেকে জেনেছি, ভালো রেজাল্টের জন্য রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়, তখন থেকে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকের স্বপ্ন দেখতাম। রাষ্ট্রপতি দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তি, রাষ্ট্রপতির নামে স্বর্ণপদক সত্যি গৌরবের।’

রফিকুল ইসলামের জন্ম, বেড়ে ওঠা রাজশাহী জেলার দূর্গাপুর উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে। বাবা ঝড়ু উদ্দীন প্রামাণিক ব্যবসায়ী ছিলেন। মা রহিমা খাতুন গৃহিনী। শিক্ষাজীবন শুরু করেন মাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে দূর্গাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং দূর্গাপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।

ছোটবেলা থেকে বিজ্ঞানে আগ্রহ থাকায় কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে অনার্স শেষ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। স্টামফোর্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স অফ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে ২০১৫ সালে সিজিপিএ-৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়ায় স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত হন রফিকুল। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে রফিকুল ইসলামকে স্বর্ণের মেডেল পরিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

অনুভূতি জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কেন রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পেলাম এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া একটু কঠিন। তবে এতটুকু বলতে পারি সাধনা করলে নাকি সাধনার ফল পাওয়া যায়। আমার সাধনার ফল হিসাবে হয়ত আল্লাহপাক আমাকে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পাওয়ার সৌভাগ্য দান করছেন। সেজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, শিক্ষকদের দক্ষতা নিজের অধ্যবসায় এবং পারিবারিক সহযোগিতা আমার সাফল্যের রহস্য বলে মনে করি।’

বর্তমানে রফিকুল ইসলাম একটি বেসরকারি সংস্থায় সহকারী ব্যবস্থাপক-তথ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চতর শিক্ষার আগ্রহের কথা জনিয়েছেন তিনি, যাতে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারেন। রফিকুল ইসলাম কেবল ভালো পড়ালেখা করেননি, তিনি সামজিক অনেক স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের সাথেও যুক্ত। তিনি গ্রামে থাকাকালীন বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন জয়কৃষ্ণপুর যুব সংঘ। যার মাধম্যে বিভিন্ন সামাজিক কাজ, দরিদ্র মেধাবীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। ভবিষ্যত জীবন নিয়ে ভাবনার কথা জানতে চাইলে রফিকুল বলেন,  ‘আমার স্বপ্ন বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক, পরিবারের একজন সাধারণ সদস্য এবং সর্বোপরি একজন সৎ মানুষ হিসেবে ভবিষ্যত জীবন কাটিয়ে দিতে চাই। সুযোগ ও সামর্থ্য অর্জিত হলে সমাজের দুস্থ, অবহেলিত, অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করবো।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জানুয়ারি ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়