ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রমনায় বোমা হামলা: বিস্ফোরক আইনের মামলায় বিচার শেষ হয়নি দুই দশকেও

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ১৩ এপ্রিল ২০২১  
রমনায় বোমা হামলা: বিস্ফোরক আইনের মামলায় বিচার শেষ হয়নি দুই দশকেও

২০ বছর আগে পহেলা বৈশাখে রাজধানীর রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় রায় হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলাটির বিচারকাজ শেষ হয়নি দুই দশকেও। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মামলাটি প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারলে শিগগিরই মামলাটির বিচার শেষ হবে।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ৫ এপ্রিল এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব রোধে সরকার দেশে লকডাউন ঘোষণা করে। এজন্য আদালতও সাধারণ ছুটিতে যায়। ফলে, ওই দিনও সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। লকডাউন শেষে, সাধারণ ছুটি শেষে মামলাটির শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

বিস্ফোরক আইনের মামলা সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেছেন, ‘মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। গত বছর করোনাভাইরাসের কারণে বিচার বিলম্বিত হয়। এবারও করোনাভাইরাসের কারণে মামলাটি আবার আটকে গেল। যেহেতু, এখন ভার্চুয়াল কোর্টে শুধু প্রোডাকশন মামলায় শুনানি হবে, ট্রায়াল মামলাগুলো হবে না, সেজন্য করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠিক না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিবেশ স্বাভাবিক হলে, আশা করছি, দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ হবে। রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যেন হয়, সেজন্য রাষ্ট্রপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে।’

সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউর আবু আবদুল্লাহ ভূঞা জানান, ‘মামলাটির বিচার প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অসুস্থ থাকায় গত এক বছরে সাক্ষ্য গ্রহণ কয়েক দফা পিছিয়েছে। তিনি সুস্থ হয়ে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিলে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হবে। এরপর ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের- ৩৪২ ধারায় আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করবেন। এরপর শুরু হবে যুক্তিতর্ক। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে আদালত রায় ঘোষণা করবেন।’

তিনি বলেন, ‘এ মামলার আসামিরা একাধিক মামলায় জড়িত থাকায় বিচার অনেকটাই বিলম্বিত হয়েছে। তাছাড়া, করোনাভাইরাসও বিচারে বাধা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। তারপরও মামলাটির বিচার যেন দ্রুত শেষ হয়, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিনা বিচারে কারাগারে থাকা কারও জন্যই কাম্য নয়। আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে বিনা বিচারে কারাগারে আছেন। বিচার শেষ হলে একটা না একটা কিছু তো হতো। আমরা আশা করি, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করে বিচার দ্রুত শেষ করবে।’

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে মামলাটিতে ৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য হলেও মাঝে প্রায় ৪ বছর মামলাটির বিচার স্থগিত ছিল। হত্যা মামলার রায়ের পর ২০১৪ সালে মামলাটির বিচার পুনরায় শুরু হলে চার্জশিটভুক্ত ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

২০০১ সালের পহেলা বৈশাখের ভোরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি এবং এর পরপরই আরেকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই নিরীহ সাত ব্যক্তি প্রাণ হারান এবং ২০-২৫ জন আহত হন। পরে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। এতে ১৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ।

দুটি মামলার মধ্যে প্রায় ১৩ বছর পর হত্যা মামলার রায় হয় ২০১৪ সালের ২৩ জুন। রায়ে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো— নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলালউদ্দিন, মো. তাজউদ্দিন, আলহাজ মাওলানা হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আব্দুল হাই।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো—শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আ. রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া।

তাদের মধ্যে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনও পলাতক। আর শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের অন‌্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এজন্য বিস্ফোরক মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

রমনার বটমূলে বোমা হামলায় নিহত ১০ ব্যক্তি হলেন—চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানার দুবলা গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৩৫), বরগুনা জেলার বামনা থানার বাইজোরা গ্রামের আবুল হোসেন ওরফে এনায়েত হোসেনের ছেলে জসিম (২৩), কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার বিরামকান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে এমরান (৩২), পটুয়াখালী সদর থানার ছোট বিমাই গ্রামের মৃত অনবী ভূষণ সরকারের ছেলে শ্যামলী পরিবহনের অসীম চন্দ্র সরকার (২৫), পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার কাজীপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম গাজীর ছেলে মামুন (২৫), একই গ্রামের সামছুল হক কাজীর ছেলে রিয়াজ (২৫), একই এলাকার আবুল হাশেম গাজীর মেয়ে শিল্পী (২০), নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার রথি রুহিত রামপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ইসমাইল হোসেন স্বপন (২৭), ঢাকার দোহার থানার চরনটসোলা গ্রামের মৃত আয়নাল খাঁর ছেলে আফসার (৩৫) ও অপর একজন অজ্ঞাত পুরুষ।

ঢাকা/মামুন খান/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়