ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

রশিদের স্পিনে নড়বড়ে বাংলাদেশ

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০২, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রশিদের স্পিনে নড়বড়ে বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম থেকে ইয়াসিন হাসান : রশিদ খানের গুগলিটা বুঝতে পেরেছিলেন মোসাদ্দেক। পেছনের পায়ে ভর করে আলতো টোকায় লেগ সাইডে পাঠালেন। বল খুব বেশি দূরে যায়নি। কিন্তু মোসাদ্দেক প্রান্ত বদল করে দুই রান নিতে পেরেছেন অনায়েস। করতালি জহুর আহমেদের গ্যালারিতে! যাক বাংলাদেশ অন্তত আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফলোঅন এড়াতে পারল!

১১৫তম টেস্ট খেলতে নেমে যদি পুচকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ফলোঅনে পড়তে হয় তাহলে লজ্জার কিছু থাকবে না! ভাগ্যিস একজন মোসাদ্দেক ছিলেন। নয়তো আফগানিস্তান নিজেদের তৃতীয় টেস্টেই বাংলাদেশকে এমন লজ্জায় ফেলে দিত। আগের দিনের ২৭১ রানের সঙ্গে আজ আরও ৭১ যোগ করে আফগানিস্তান। সব মিলিয়ে রান ৩৪২। জবাবে ১৩০ রান তুলতেই বাংলাদেশের ৭ উইকেট নেই। মোসাদ্দেকের ব্যাটে হয় রক্ষা। ওই সময়ে সঙ্গী ছিলেন মিরাজ। শেষ বিকেলে মিরাজও হাল ছেড়ে দেন। মোসাদ্দেক টিকে থাকেন শেষ পর্যন্ত। ৭৪ বলে ৪৪ রান করেছেন আটে নামা মোসাদ্দেক। তার সঙ্গী দশে নামা তাইজুল। দুজনের জুটিতে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ ৪৮ রান। তাদের ব্যাটে বাংলাদেশ তুলেছে ৮ উইকেটে ১৯৪ রান। সফরকারীদের থেকে এখনও ১৪৮ রান পিছিয়ে বাংলাদেশ।

আফগানিস্তানের জন্য স্পিনে ফাঁদ পেতেছিল বাংলাদেশ। সেই ফাঁদে আটকা পড়ল বাংলাদেশই। রশিদ খান, নবীদের নিয়ে ভয় ছিল। সেই মোতাবেক নেওয়া হয়েছিল প্রস্তুতি। কিন্তু মাঠে মিলল না কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীতা। রশিদ খান চার উইকেট নিয়ে গুড়িয়ে দেন বাংলাদেশের মিডল অর্ডার। নবী ভাঙেন টপ অর্ডার ব্যাটিং। তাতে ফলোঅনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত মোসাদ্দেক বীরত্বে রক্ষা। তামিমকে ছাড়া ওপেনিং সাদমান ও সৌম্য। ইনিংসের চতুর্থ বলে সাদমান উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন পেসার এহসানউল্লাহর বলে।

লিটন-সৌম্যর ব্যাটে মধ্যাহ্ন বিরতির আগে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। বিরতির পর নবীর সোজা ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ সৌম্য। রশিদ খান নিজের প্রথম ওভারেই পেয়ে যান সাফল্য। হাফ ভলি ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে বল মিস করে বোল্ড লিটন। মুমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামে লড়াই শুরু সাকিবের। কিন্তু দলের গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে হাল ছেড়ে দেন সাকিব। রশিদের ‘মোয়া’ বলে এলবিডব্লিউ হন মাত্র ১১ রানে। এক বলের ব্যবধানে মুশফিকও সাজঘরে। যদিও তার আউট নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি। রশিদের প্রায় ইয়র্কার বল রুখে দিয়েছিলেন মুশফিক। বল তার বুটের মাথায় লেগে ধুলো উড়িয়ে চলে যায় শর্ট লেগ ফিল্ডারের হাতে। আম্পায়ার নাইজেল লংয়ের সফট সিগন্যাল ছিল আউট। টিভি রিপ্লে দেখে সেটা বদলানোর যথার্থ প্রমাণ পাননি থার্ড আম্পায়ার। দ্বিতীয় সেশনে ২৯ ওভারে ৮৭ রান তুলে বাংলাদেশ হারায় ৪ উইকেট।

শেষ সেশনে ভরসা হয়ে উঠার কথা মুমিনুল হক ও মাহমুদউল্লাহর। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ ফিরে আসেন মাত্র ৭ রানে। রশিদের বলটা বেশ নিচু হয়ে আঘাত করে তার স্ট্যাম্পে। মুমিনুল বুঝেছিলেন স্পিনে চড়াও হয়ে না খেললে আরও বিপদ আসবে। তাইতো দ্রুত সময়ে পাঁচ বাউন্ডারি মেরে মুমিনুল তুলে নেন নিজের ফিফটি। দলকে টেনে নেন ফলোঅন এড়ানোর খুব কাছে। কিন্তু অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই বিপদে ডেকে আনেন। নবীকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ৫২ রানে।

এরপর শুরু হয় মোসাদ্দেকের লড়াই। মিরাজকে সঙ্গী করে লড়াই চালালেও মিরাজ কায়েস আহমেদের বল ভেতরে টেনে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ১১ রানে। শেষ বিকেলের এক ঘন্টায় মোসাদ্দেক-তাইজুলের দৃঢ়তায় দুইশর কাছাকাছি পৌঁছে বাংলাদেশ। দলকে বাঁচানোর ভরসা এখন একমাত্র তারাই।  

এর আগে বোলিংয়ে মিরাকল চেয়েছিল বাংলাদেশ। তাইজুল আগের দিন বলেছিলেন ১০ রানে আফগানিস্তানের অবশিষ্ট পাঁচ উইকেট চান। কিন্তু পারেনি বাংলাদেশ। আফগানিস্তান অলআউট হয় ৩৪২ রানে। আজকের ৭১ রানের ৫১ রানই আসে অধিনায়ক রশিদ খানের ব্যাট থেকে। সফরকারীরা বড় স্কোরের জন্য তাকিয়ে ছিল গতকালের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানের দিকে। সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা আসগর আফগান হতে পারতেন দেশের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। কিন্তু নিজের ভুলে পারেননি। তাইজুলের বলে সুইপ করতে গিয়ে হাওয়ায় ক্যাচ তোলেন ৯২ রানে। মুশফিক নিশ্চিন্তে বল তালুবন্দি করে দলকে দেন দিনের প্রথম সাফল্য। সঙ্গী হারানোর পর আফসারও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তাইজুলের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন ৪১ রানে।

সফরকারীদের লেজটা কেটে দেন সাকিব আল হাসান। আগের দিন কোনো উইকেট না পাওয়া এ স্পিনার দ্রুত সময়ে নেন কায়েস আহমেদ ও ইয়ামিন আহমেদজাইকে। তবে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেন রশিদ খান। আগ্রাসন দেখিয়ে উইকেটের চারিপাশে শট খেলেন আফগান অধিনায়ক। তাইজুল, সাকিবদের ডাউন দ্য উইকেটে এসে সীমানা পাড় করতে পিছু পা হননি। দ্যুতি ছড়িয়ে ডানহাতি ব্যাটসম্যান পেয়ে যান ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি।

দুই বাঁহাতি স্পিনারকে ভালোভাবে সামলে নেওয়ায় মিরাজ বোলিংয়ে আসেন। এসেই ফেরান রশিদকে। স্পিনের বিপরীতে আলতো শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিরাজের হাতে। ৬১ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় শেষ হয় তার ব্যাটিং। চার উইকেট নিয়ে তাইজুল বাংলাদেশের সেরা বোলার। সাকিব ও নাঈমের পকেটে গেছে দুটি করে উইকেট।

ব্যাট-বলে দারুণ দিন কাটাল আফগানিস্তান। রশিদ খান তাদের দলের সেরা। ব্যাটিংয়ে ৫১ ও বোলিংয়ে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়েছেন তিনি। তার বোলিংয়ে নড়বড়ে বাংলাদেশ। দেখার বিষয় আগামীকাল মোসাদ্দেক-তাইজুলরা কোথায় নিয়ে যেতে পারেন দলকে। আপাতত ম্যাচের নাটাই আফগানদের হাতেই।

 

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়