ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রাজধানীতে টার্গেটভিত্তিক ছিনতাই বেড়েছে

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজধানীতে টার্গেটভিত্তিক ছিনতাই বেড়েছে

আসাদ আল মাহমুদ : রাজধানীতে আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে ছিনতাই। চলতি মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে টার্গেটভিত্তিক ছিনতাই বেড়েছে। সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলিপথে অবাধে ছিনতাই করছে।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও বাসাবাড়িতে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বা সিসিটিভি বসানো হয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাবর প্যাট্রোল ডিউটি এবং সাদাপোশাকে ডিউটির পাশাপাশি ছদ্মবেশেও নজরদারি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারপরও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত কিংবা গুলি করে টাকাপয়সা কেড়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের ।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা করতে যান না বা অভিযোগ করছেন না। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছিনতাইকারীদের ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ছিনতাইকারীদের ধরতে প্রতিনিয়তই অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে সম্প্রতি কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ছুরি-চাপাতির পাশাপাশি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,  রাজধানী ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় ছোট-বড় অন্তত অর্ধশত ছিনতাইকারী গ্রুপ রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে ৩ থেকে ৯ জন পর্যন্ত সদস্য রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব দলের ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে। এ ছাড়া দামি প্রাইভেট কার ব্যবহার করা ছিনতাইকারী চক্রও রয়েছে বেশ কয়েকটি। এদের মূল টার্গেট ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ও বিকাশসহ মোবাইল ব্যাংকিং কর্মীরা। তা ছাড়া, বিদেশফেরত যাত্রী, ব্যবসায়ীও রয়েছে তাদের টার্গেটে।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে রাজধানীর কলাবাগানে প্রাইভেট কার চালককে কুপিয়ে আহত করে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী। ওই ঘটনার শিকার কে এম রানা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা আমাকে আগে থেকেই ফলো করছিল সেটি আমি টের পাইনি। যখন কলাবাগানের লাজ ফার্মার সামনে চা খেতে লাগলাম, তখনই তারা আমার ওপর হামলা করে পরে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়।’

এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ করেননি রানা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানায় অভিযোগ করে কি হবে? তারা তো আমার গাড়ি ফিরিয়ে এনে দিতে পারবে না। এ ছাড়া অভিযোগ করলে এর অগ্রগতি জানতে থানায় যেতে হবে। তদন্তের জন্য বিভিন্ন সময় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। এসব ঝামেলা নিয়ে চলাফেরা কষ্টকর হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ছিনতাইয়ের পরবর্তী সময়ে হয়রানির কারণে অনেকেই মামলা করেন না। আবার ছিনতাইয়ের মালামাল উদ্ধার হওয়ার নজিরও খুব কম।

মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, ছিনতাইয়ের টাকা, স্বর্ণ ও অন্যান্য মালামাল লুটের পরপরই তা ছিনতাইকারীদের মাঝে ভাগ হয়ে যায়। পুলিশ তদন্ত এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আগেই সেই টাকা ও মালামাল খরচ করে ফেলে। এসব ঘটনায় কিছু আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।

গত ২১ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদের সামনে লেগুনার ভেতর থেকে এক তরুণের টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারী চক্র। ৪ ফেব্রুয়ারি সাভারের আশুলিয়ায় চলন্ত বাসে ৬ লাখ টাকা, পরদিন উত্তরায় চলন্ত গাড়ি থামিয়ে মা ও মেয়েকে গুলি করে ৬ লাখ টাকা, ৭ ফেব্রুয়ারি নিউমার্কেট এলাকায় গুলি করে বিশ্বাস বিল্ডার্সের এক কর্মীর কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। একই দিন দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থামিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে ছিনতাইকারীরা। পরে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে মনিরুজ্জামান মাসুম নামের এক পর্যটন ব্যবসায়ীকে গুলি করে ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেলে করে চলে যায়।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টার দিকে টিকাটুলীতে চলন্ত বাসে দুই মাছ ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাত করে ৬০ হাজার টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার শিকার ওই দুই মাছ ব্যবসায়ী হলেন মো. আলম মিয়া (৫০) ও শফিকুল ইসলাম (৩০)। বাসটি সায়েদাবাদের জনপথ মোড়ে  থামিয়ে সবাই পালিয়ে যায়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, রাজধানীতে অপরাধের মাত্রা আগের চেয়ে অনেক কম। সম্প্রতি বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ওই সব ঘটনায় জড়িত ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার ও ছিনিয়ে নেওয়া অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

‘ছিনতাই-ডাকাতি প্রতিরোধে রাজধানীর সব এলাকায় দিনে-রাতে থানা-পুলিশের ফুট প্যাট্রোল, মোটরসাইকেল প্যাট্রোল এবং পিকআপ নিয়ে টহল দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। ছিনতাইকারীরা অনেক সময় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দু-একটি ঘটনা ঘটায়, জানান মাসুদুর রহমান।  তিনি বলেন, ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা ঘটলে থানায় অভিযোগ আসছে। সেসব অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে পুলিশ। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনায় থানা-পুলিশ যদি মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ জনসেবার ক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আসাদ/নূর/হাসান/এনএ/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়