রাজনৈতিক দলে নারী নেতৃত্বের শর্ত শিথিল ‘সংবিধান পরিপন্থী’
রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের শর্ত শিথিল করে নতুন আইন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন ( ইসি)। এই উদ্যোগকে সংবিধান পরিপন্থী বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বামধারার রাজনীতিবিদরা। তারা বলছেন, এই আইন একদিকে গণতন্ত্রবিরোধী, অন্যদিকে নারীর জন্য অসম্মানেরও।
রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, নারী নেতৃত্ব ৩৩ শতাংশ নয়, বরং ৫০ শতাংশ করা উচিত। এর জন্য রোডম্যাপ তৈরিসহ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকা উচিত বলেও মনে করেন তারা।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘যেখানে সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা আছে, সেখানে কিভাবে নারীর অংশগ্রহণ কমানোর চিন্তা করা হয়েছে? দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এই শর্ত শিথিলের উদ্যোগ দেশের আইনের পরিপন্থী হবে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘ইসির কাজ আইন প্রয়োগ করা, শর্ত শিথিল করা নয়।’
একই অভিমত জানালেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলে নারী নেতৃত্বের সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশে করা উচিত। নারীদের সমমর্যাদা দিতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সভাপতি রওশন আরা রুশো বলেন, ‘বর্তমান ইসি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) থেকে রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রাখার বিধান তুলে দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। ’
ইসির এই উদ্যোগকে অগণতান্ত্রিক বলে মনে করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের ‘নিবন্ধন আইন’ সংশোধনের উদ্যোগ ইসির দায়িত্বহীন, অবিবেচনাপ্রসূত ও উদ্দেশ্যমূলক। ৩৩ শতাংশ নারী সদস্যের বাধ্যবাধকতা বাতিল করা ঠিক হবে না। ’’
নারীদের পেছনে রেখে সামাজিক-অর্থনৈতিক ভারসাম্য সম্ভব নয় বলে মনে করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের শর্ত শিথিলের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রয়োজনে অংশীজনদের সঙ্গে এই বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।’
সমাজকর্মী ও পরিবেশবাদী খুশী কবির বলেন, ‘যেখানে নারীরা বিভিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক দলেও তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো দরকার। অথচ উল্টো কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।’
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইসি ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের শর্ত শিথিল করে ‘রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন ২০২০’-এর খসড়া তৈরি করে। এরপর ওই খসড়া ইসির ওয়েব সাইটে দিয়ে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর অভিমত আহ্বান করে।
ইয়ামিন/এনই
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন