ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রাজশাহীতে সাংবাদিকের ওপর হামলা

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৫, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজশাহীতে সাংবাদিকের ওপর হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন একটি মার্কেটের কর্মচারীরা হত্যার উদ্দেশ্যে দৈনিক কালের কণ্ঠের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক রফিকুল ইসলামের ওপর হামলা চালিয়েছে।

সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় রাজশাহী মহানগরীর নিউমার্কেট এলাকায় ‘থিম ওমর প্লাজা’ নামের একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

সোমবার কালের কণ্ঠে ‘এমপি ফারুক চৌধুরীর বাবা রাজাকার ছিলেন, রাজশাহীর অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধার বিবৃতি’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। আর এদিনই তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটলো। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর পক্ষ থেকে সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বিভিন্ন সময় হুমকি পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে হামলার ঘটনায় রফিকুল ইসলাম নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন। এতে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, অজ্ঞাত আরো চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। হামলার পর পাঁচজনকে পুলিশ আটক করে। মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এই পাঁচজন হলেন- থিম ওমর প্লাজার নিরাপত্তা কর্মী আবদুল হাকিম (৪৫), নাহিদ হাসান (২০), সনি (২০), জামাল হোসেন ওরফে মুন্না (২৫) এবং সাঈদ আলী (৩৪)। এদের কাছ থেকে সাংবাদিক রফিকুলের একটি মুঠোফোন এবং মোটরসাইকেলের হেলমেট উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সকালে সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম থিম ওমর প্লাজার প্রধান ফটকের পশ্চিম পাশে ফুটপাতে নিজের মোটরসাইকেলটি রেখে রাস্তার বিপরীতে গিয়ে দাঁড়ান। এ সময় ভবনটির নিরাপত্তা কর্মীরা রফিকুলকে মোটরসাইকেলের কাছে ডাকেন। তিনি গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা গাড়িটি সরিয়ে নিতে বলেন। রফিকুল তখন জানতে চান, ফুটপাতে গাড়ি রাখলে সমস্যা কী? এ সময় নিরাপত্তাকর্মীরা তার হেলমেট নিয়ে ভবনের ভেতরে চলে যাচ্ছিলেন।

সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম তখন নিজের পরিচয় দিয়ে এর প্রতিবাদ করেন। আর তখনই শুরু হয় আক্রমণ। নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের কাছে থাকা লাঠি দিয়ে সাংবাদিক রফিকুল ইসলামকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন যায়গায় আঘাত করা হয়। সেসময় নিরাপত্তাকর্মীরা রফিকুলকে ভবনের নিচতলার গ্যারেজের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

তখন আশপাশের লোকজন তাকে রক্ষায় এগিয়ে যান। নিরাপত্তাকর্মীরা তখন তাদেরকেও পেটাতে শুরু করেন। এতে ভয়ে লোকজন পালিয়ে গেলে আবার রফিকুলকে পেটানো শুরু হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এবং অন্য সাংবাদিকরা গিয়ে রফিকুলকে উদ্ধার করেন। এ সময় রাজশাহীর সাংবাদিকরা থিম ওমর প্লাজার প্রধান ফটকের সিঁড়িতে বসে এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান।

পুলিশ থিম ওমর প্লাজা থেকে ওই পাঁচ নিরাপত্তা কর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়। আর সাংবাদিকরা আহত রফিকুল ইসলামকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক‌্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দুপুরে রফিকুল ইসলাম থানায় গিয়ে মামলা করেন। তার সঙ্গে রাজশাহীর সাংবাদিক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পরিচয় দেয়ার পর কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই পেটাতে শুরু করে। যেভাবে পেটানো হয়েছে সেটা শুধু ভবনের সামনে মোটরসাইকেল রাখার জন্য হওয়ার কথা নয়। এর পেছনে অন্য কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছি। আমি এর বিচার চাই।’

ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে)। এই হামলা পরিকল্পিত উল্লেখ করে সোমবার দুপুরে সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানানো হয়েছে। তা না হলে কঠোর আন্দোলন  কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে আরইউজে।

আরইউজের সভাপতি কাজী শাহেদ, সহ-সভাপতি শরীফ সুমন, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রকি, কোষাধ্যক্ষ সরকার দুলাল মাহবুব, কার্যনির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান টুকু এবং সামাদ খান ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন- ফুটপাতে মোটরসাইকেল রাখায় ভবনের নিরাপত্তা প্রহরীরা পরিকল্পিতভাবে একজন সাংবাদিকের ওপর হামলা চালাবে এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আরইউজে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ভবনটির অন্যতম মালিক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। সম্প্রতি সাংবাদিক রফিকুল ইসলামসহ রাজশাহীর কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক এই এমপির বিতর্কিত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সংবাদ বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ ও প্রচার করে। সোমবারও কালের কণ্ঠে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। আর এই দিনই এমপির ভবনের নিরাপত্তা কর্মীরা সাংবাদিক রফিকুলের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালালো। এর পেছনে ফুটপাতে শুধু মোটরসাইকেল রাখা, নাকি অন্য কোনো কারণ জড়িত তা খুঁজে বের করা প্রশাসনের দায়িত্ব।

এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামী বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী মহানগরীর আলুপট্টি মোড়ে আরইউজে’র উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশেরও আয়োজন করা হয়েছে। এ সমাবেশে রাজশাহীতে কর্মরত সকল সাংবাদিকদের অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আরইউজে।

এদিকে সাংবাদিক রফিকুলের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ-সভাপতি মামুন-অর-রশিদ, কার্যনির্বাহী সদস্য আনু মোস্তফা এবং জাবীদ অপু।

এছাড়া প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত সাংবাদিক এবং সাধারণ মানুষ আহত রফিকুলের ছবি পোস্ট করে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

একজন ফেসবুকে ব্যবহারকারী থিম ওমর প্লাজার ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘থিম ওমর প্লাজার মার্কেটটি ফুটপাত দখল করে তৈরি করা হয়েছে। ফুটপাত বা রাস্তার পাশে কেউ গাড়ি রাখলে থিম ওমর প্লাজার সিকিউরিটি গার্ডরা দাঁড়াতে দেয় না। প্রায় সময় গার্ডরা রিক্সা চালকদের মারধর করে। কেউ কিছু বললে সিকিউরিটি গার্ডরা বলে, থিম ওমর প্লাজা এমপির। এই রাস্তা ও ফুটপাত এমপির কেনা। কেউ কিছু বলতে পারবে না। আজ তাদের নিকট সাংবাদিক লাঞ্ছিত হলেন। কাল আমি হবো, পরের দিনে আপনি। মানুষের চেয়ে কী তার ক্ষমতা বেশি?’

এ বিষয়ে কথা বলতে সোমবার দুপুরে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।

নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মন জানান, থিম ওমর প্লাজার ব্যবস্থাপক তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন যে, হামলায় জড়িত পাঁচ নিরাপত্তাকর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। আর এ হামলার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে তাঁকেও আইনের আওতায় আনা হবে।


রাইজিংবিডি/রাজশাহী/৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯/তানজিমুল হক/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়