ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রাতের কিন ব্রিজে মুগ্ধতার হাতছানি

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ২৯ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাতের কিন ব্রিজে মুগ্ধতার হাতছানি

ঘড়িতে সময় রাত ১১ টা। ব্যস্ত সিলেট শহর ফাঁকা হচ্ছে। যে যার মতো করে ছুটছে। এসময় সিলেটের কিন ব্রিজের ঠিক মাঝখানে একদল তরুণের হৈ-হুল্লোড়, সেলফিতে ব্যস্ত তারা।

কিন ব্রিজ। সিলেট শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর উপর লোহার এই সেতুটি আকর্ষিত করেনা, এমন মানুষ কমই আছেন। এটি সিলেটের অন্যতম দর্শনীয় এবং ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে সর্বজন পরিচিত। দেশে-বিদেশে সিলেটের পরিচিতি তুলতে ধরতেও এ সেতুর ছবি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি সিলেট শহরের প্রবেশদ্বারও।

কিন ব্রিজে হৈ-হুল্লোড়ে মেতে থাকা তরুণরা জানালেন, চট্টগ্রাম থেকে তারা সিলেট বেড়াতে এসেছেন। দক্ষিণ সুরমায় টার্মিনালে নেমে হোটেলে ফেরার জন্য গাড়ি খুঁজছিলেন। এমন সময় জানলেন, কিন ব্রিজ দিয়ে গাড়ি চলে না। পায়ে হেঁটেই সেতুটি পার হতে হয় । তাই তাদের ব্রিজে উঠে পড়া।

তরুণ দলের তামিম জানালেন, এর আগেও তিনি সিলেটে এসেছেন। তবে তখন এ সেতু দিয়ে গাড়ি চলত। বাতিও ছিলনা সেতুতে। তবে এখন যান চলাচল বন্ধ করে পায়ে হাঁটার জন্য খুলে দেওয়াতে তার ভালোই লাগছে। এছাড়া পুরো সেতুতেই আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে ব্রিজটির সৌন্দর্য বেড়েছে কয়েকগুণ; বেড়াতে আসা পর্যটকরাও এ সেতু ও সুরমার মায়াবি রূপে মুগ্ধ হচ্ছেন।

সিলেটের স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রতিবেদক সোহেল আহমদের বাসা দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই এলাকায়। এজন্য প্রতিদিনই তাকে পাড়ি দিতে হয় এই ব্রিজ। তিনি বললেন, ‘নতুন করে সড়ক বাতি লাগানোর কারণে আরও বেশি মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ব্রিজটি। আর ব্রিজটি থেকে সার্কিট হাউস ও আলী আমজাদের ঘড়ি ঘরটিও বেশ সুন্দরভাবে দেখা যাচ্ছে। এ কারণেও পর্যটকরা আকৃষ্ট হচ্ছেন।’

ধনুকের মতো বাঁকানো কিন ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট। ১৯৩৩ সালে সেতুটি নির্মাণ করে তৎকালীন রেলওয়ে বিভাগ। প্রায় ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ শেষে ১৯৩৬ সালে ব্রিজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। আসাম প্রদেশের ইংরেজ গভর্ণর মাইকেল কিনের নামে ব্রিজের নামকরণ করা হয় কিন ব্রিজ।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ব্রিজের উত্তর প্রান্তের একাংশ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয় পাক হানাদার বাহিনী। স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতায় ব্রিজের বিধ্বস্ত অংশ কংক্রিট দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে ব্রিজ দিয়ে যান চলাচল করছে।

সময়ের পরিক্রমায় ব্রিজটি জৌলুস হারিয়েছে। নড়বড়ে হয়ে ঝুঁকিতেও পড়েছে এটি। এ কারণে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। গত ১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত থেকে ব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এজন্য ব্রিজের দুই প্রান্তে লোহার রড দিয়ে পথও বন্ধ করা হয়। তবে যানচলাচল বন্ধ থাকলেও পথচারীদের জন্য ব্রিজটি খোলা রয়েছে।

সম্প্রতি সিলেট সফরে এসে কিন ব্রিজের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বলেন, ‘এ ব্রিজে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এটি অন্য যে কোন দেশের চেয়ে লম্বা পায়ে হাঁটার ব্রিজ।’ এসময় তিনি ব্রিজের নিচের আলী আমজদের ঘড়িও ঘুরে দেখেন। তিনি ঘড়ির ঘন্টা ধ্বনির প্রশংসাও করেন।

সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘কিন ব্রিজ একটি ঐতিহ্যবাহী ব্রিজ। এই ব্রিজ ব্রিটিশদের তৈরি। ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণে সংস্কার কাজ চলছে।’

এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় যান চলাচল বন্ধ রেখে পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।’


সিলেট/নোমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়