ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

রায় দ্রুত কার্যকর করা জরুরি

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রায় দ্রুত কার্যকর করা জরুরি

নারায়ণগঞ্জে বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার রায় সোমবার ঘোষণা করেছেন বিচারিক আদালত। জেলা ও দায়রা জজ আদালত ঠাণ্ডা মাথায় ও নৃশংস কায়দায় সাতজনকে খুন করার ঘটনায় মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে ২৬ জনকে ফাঁসি এবং বাকি নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন সারা দেশের মানুষ। আর বাদীপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে।

সারা দেশকে স্তম্ভিত করে দেওয়া এই খুনের ঘটনায় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা ও একটি বিশেষ বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় এই মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছিল। অবশেষে ঘটনার প্রায় তিন বছর পর আদালতের রায়ে দূর হয়েছে জনমনের সেই সংশয়।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহরণ করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে। পরদিন একই স্থান থেকে উদ্ধার করা হয় আরেকজনের লাশ । নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। এর একটির বাদী ছিলেন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। আরেকটি মামলা করেন নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল।

সাতজনকে খুন করে লাশ যেভাবে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, সে খবরে দেশবাসী শিউরে ওঠার পাশাপাশি এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে র‌্যাবের একটি ইউনিটের কয়েকজন সদস্যের যুক্ত থাকার অভিযোগ হতবাক করে দেয় সবাইকে। হত্যা ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে নাম আসে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনের। তাই দেশবাসীর গভীর আগ্রহ ছিল মামলার রায় নিয়ে।

তবে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারে আসামিদের সামাজিক প্রভাব কোনোভাবেই প্রাধান্য পায়নি। জড়িতরা প্রভাবশালী বলে বিবেচিত হওয়া সত্ত্বেও আদালত দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিয়ে প্রমাণ রেখেছেন আইনের হাত অনেক বেশি প্রসারিত। আদালত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন, তা প্রশংসাযোগ্য। এই রায় বিচারব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে অবদান রাখবে বলে আমরা আশা করি।

সাত খুনের ঘটনায় নিহত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি এই রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চেয়েছেন। নিহত অন্যদের স্বজনদের প্রত্যাশাও  তা–ই। নিম্ন আদালত থেকে দেওয়া এই ফাঁসির রায় হাইকোর্টে অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর হবে না। আমরা উচ্চ আদালতের কাছে আশা করব, এই মামলার বাদবাকি প্রক্রিয়া যেন দ্রুত সম্পন্ন হয়।

বিচারিক আদালতের রায় নথিসহ হাইকোর্টে আসার পর এ মামলার শুনানি দ্রুত শুরু করার উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি জরুরি। রায় ঘোষণার পর অ্যাটর্নি জেনারেল সেই আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আশা করব, নিম্ন আদালত যে রায় ঘোষণা করেছেন, তা নিষ্পত্তিতে খুব বেশি সময় লাগবে না। সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে যেন নিহতদের স্বজন ও দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করা হয়।

দণ্ডপ্রাপ্তদের প্রভাবশালী স্বজনরা যেন কোনোভাবেই বিচার-প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে না পারেন, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে রাষ্ট্রকে। একইভাবে বিভিন্ন বাহিনীকে তাদের সদস্যদের কর্মকাণ্ড আরো বেশি নজরদারিতে রাখতে হবে। আইনের রক্ষক হিসেবে যারা কাজ করেন তাদের কেউ যদি কোনো ঘৃণ্য অপরাধে জড়ান, তাহলে অবশ্যই তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জানুয়ারি ২০১৭/আলী নওশের/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়