ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

লাখো রোহিঙ্গা সমাবেশের নেপথ্যে কারা?

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০৯, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লাখো রোহিঙ্গা সমাবেশের নেপথ্যে কারা?

কক্সবাজার প্রতিনিধি : মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গার ঢল নামে ২৫ আগস্ট। গত ২৫ আগস্ট এর দুই বছর পূর্ণ হওয়াকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশ ঘিরে সরকারি মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

ওই দিন মহাসমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমবেত হওয়া, একই ধরনের গেঞ্জি ও শার্টের ব্যবহার, ব্যানার, ফেস্টুনের উৎস জানতে মরিয়া হয়ে উঠেছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।

ইতিমধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, রোহিঙ্গা সমাবেশের নেপথ্যে অর্থসহ নানা উপকরণ সরবরাহ করেছে আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থা। গত ছয় মাসের পরিকল্পনার অংশ ছিল এই মহাসমাবেশ। মহাসমাবেশের উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, এটাকে স্থানীয় মহল হুমকি বলে মনে করছে।

মহাসমাবেশে নেতৃত্ব দেয়া মুহিবুল্লাহ এবং তার পাশে অবস্থান নেয়া স্থানীয় মাসুদ ভূঁইয়াকে নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে সরকারি একাধিক সংস্থা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৫ আগস্ট ঘিরে টেকনাফ উখিয়ার ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোপনে বিতরণ করা হয়েছে সাদা রঙের ছয় লাখ গেঞ্জি এবং শার্ট। ২৫ আগস্টের এক সপ্তাহ আগে রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দেয়া হয় এ সব পোশাক এবং বলা হয় ২৫ আগস্টের দিন পরিধান করতে। সমাবেশে উপস্থিত পুরুষ ছাড়াও উখিয়া, টেকনাফের সব ক্যাম্পে একযোগে পরিধান করা হয়েছে এসব সাদা পোশাক। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ছয় লাখ গেঞ্জি এবং শার্ট কোথায়, কখন তৈরি হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোহিঙ্গা মহাসমাবেশ আয়োজনের পেছনে অনেক চক্র কাজ করেছে। আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থা, একাধিক মানবাধিকার সংগঠন, বিদেশিদের অর্থায়নসহ নানা তথ্য উঠে এসেছে অনুসন্ধানে।

 

 

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় এসব পরিধান এবং ব্যানার, সমাবেশে মাইক সরবরাহ করা হয়। এর আগে গোপনে বিতরণ করা হয় সাদা রঙের শার্ট ও গেঞ্জি। আন্তর্জাতিক এ সংস্থা দুটি এসব পোশাক তৈরি করে তাদের গাড়িতে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ৩৪টি ক্যাম্পে তাদের দায়িত্বশীল কর্মীরা সমাবেশের এক সপ্তাহ আগে পোশাক বিতরণ শেষ করে।

এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর সঙ্গে মেইলে যোগে যোগাযোগ করা হলে এর উত্তর দেন এর পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার জর্জ ম্যাকলিয়ড। তিনি মেইলে জানান, আইওএম কোনো এনজিও সংস্থা নয়। এটা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ বাস্তবায়ন করে থাকে। রোহিঙ্গাদের শার্ট বা গেঞ্জি সরবরাহের মতো ঘটনার সঙ্গে আইওএম কোনোভাবে জড়িত নয়।

একই মেইল ইউএনএইচসিআর এর সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হলেও তারা এর কোনো উত্তর দেয়নি।

সমাবেশের মঞ্চে মহিবুল্লাহর পাশে থাকা উখিয়ার স্থানীয় এক ব্যক্তিকে নিয়েও আলোচনা চলছে। উখিয়া কলেজের প্রভাষক মাসুদ ভুইয়া ওই সমাবেশে মঞ্চে কীভাবে গেল এ নিয়ে চলছে অনুসন্ধান।

প্রভাষক মাসুদ ভুইয়া উখিয়া সদর উপজেলার সিকদার বিল গ্রামের আবদুল করিম ভুইয়ার ছেলে। এ ব্যাপারে মাসুদ ভুইয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন জানান, রোহিঙ্গাদের সমাবেশ ঘিরে আতংকের কিছু নেই। এ সমাবেশ ঘিরে অপ্রীতিকর কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে সমাবেশে স্থানীয় যে যুবক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তিনি কে, কেন এবং কীভাবে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ মঞ্চে গেল, এটা অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, মহাসমাবেশ ঘিরে ব্যাপক তদন্ত শুরু হয়েছে। বিষয়টি গোপনে তদন্ত চলছে। কারা, কীভাবে তদন্ত করছে তা গণমাধ্যমে বলা যাবে না। তদন্তে পাওয়া তথ্যমতে দোষী সংস্থার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯/সুজাউদ্দিন রুবেল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়